স্বাধীন সংস্থা হওয়ার কথা থাকলেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এখনও একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। দেশের তথ্যের আইনি ভিত্তি থাকা একমাত্র প্রতিষ্ঠানটির তথ্যের মান নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে নানা প্রশ্ন উঠে আসছে। তাছাড়া পরিসংখ্যান কর্মকর্তাদের দমিয়ে রেখে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দাপটে প্রতিষ্ঠানটির তথ্য এখন শুধু প্রকল্পনির্ভর। এটি এখন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন এসব প্রকল্প সংস্কৃতি থেকে সংস্থাটিকে বেরিয়ে আনার সুপারিশ করবে বিবিএসের সংস্কারের জন্য গঠিত আট সদস্যের টাস্কফোর্স।
বুধবার (১৬ জুলাই) বিবিএস গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য উঠে আসে। টাস্কফোর্সটির সভাপতি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত নেন। বিবিএসের তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার গণমাধ্যম। সে বিবেচনায় গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত নেয় টাস্কফোর্স।
মতবিনিময় সভায় ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বিবিএসের সংস্কারের উদ্দেশ্যে তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছে- তথ্যের সহজলভ্যতা, তথ্যের মান ও স্বচ্ছতা। এ তিনটি ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হচ্ছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে মূল্যস্ফীতি, জিডিপিসহ বিভিন্ন তথ্যের প্রেজেন্টশন দিতে বলেছি। তারা আমাদেরকে তা দিয়েছে।
সংস্থাটিকে প্রকল্প সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আনার জন্য সুপারিশ থাকবে জানিয়ে টাস্কফোর্সের সভাপতি বলেন, বিবিএসের প্রকল্প সংস্কৃতি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা তাদেরকে এ জিনিসটা থেকে ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি। সরকারের তথ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা বিভিন্ন রকমের তথ্য দিয়ে থাকে। সেখানে গুরুত্ব হারায় সংস্থাটি। এ প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, সরকারি সংস্থাগুলো ছাড়াও ব্যবহারকারী গোষ্ঠীগুলোর মতামত নিয়ে আমরা আলাপ করছি। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও তথ্যের এককেন্দ্রীকরণ নিয়েও আমরা কথা বলেছি।
জিল্লুর রহমান বলেন, তথ্য সরবরাহকারী সংস্থাটির বড় সমস্যা জনবলের। মাঠ পর্যায়েও তথ্য সংগ্রহকারীরা অদক্ষ। বিবিএসের বিভিন্ন জনবলের চাহিদা রয়েছে। তাদের ৫০ শতাংশ শূন্য পদ। অর্থাৎ পদ আছে মানুষ নাই। তাদের মধ্যে ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছেন, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা রয়েছে, সর্বশেষ কর্মচারীরাও রয়েছেন। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি।
সাংবাদিকরা তাদের মতামতে জানান, সাম্প্রতিককালে বলা হয়েছে সংস্থাটি স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কিন্তু সম্প্রতি ভোক্তা মূল্য সূচকের তথ্য বিবিএস প্রকাশের আগেই প্রকাশ করেছে সরকারের প্রেস উইং। সেক্ষেত্রে সংস্থাটির তথ্য প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। এক্ষেত্রে টাস্কফোর্সের সুপারিশ থাকা উচিত বলে মত দেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে টাস্কফোর্সের বাকি সদস্যরা হলেন- বিবিএসের সাবেক মহাপরিচালক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াজেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্ট্রিগেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান সমিতির সভাপতি সৈয়দ শাহাদৎ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক অতনু রব্বানী ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস।
মন্তব্য করুন