সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
ইবি থানা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সাত বিয়ে করা সেই রবিজুল গ্রেপ্তার

সাত স্ত্রীর সঙ্গে রবিজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত
সাত স্ত্রীর সঙ্গে রবিজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

কুষ্টিয়ায় সাত নারীকে বিয়ে করা ও একসঙ্গে ঘরসংসার করায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত রবিজুল ইসলাম (৪২)। মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে সেই রবিজুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

রোববার (২০ জুলাই) সকালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তার রবিজুল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইবি থানার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়া এলাকার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার ও আর্থিক প্রতারণার কয়েকটি মামলা রয়েছে।

বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান।

সাত নারীকে বিয়ে করা ও একসঙ্গে ঘরসংসার করায় রবিজুল ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত। তিনি ১৫ বছর লিবিয়াতে ছিলেন এবং মানবপাচার চক্রের সদস্য। বিদেশে ভালো বেতনে চাকরির কথা বলে লিবিয়ায় পাঠিয়ে তাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের জগতী স্টেশন বাজার এলাকার সিরাজ শেখের ছেলে তানজির শেখ (২০)। রবিজুলের প্রলোভনে পড়ে ভালো বেতনে চাকরির জন্য আড়াই বছর আগে কুষ্টিয়ার রবিজুল দালালের মাধ্যমে ট্যুরিস্ট ভিসায় লিবিয়ায় যান কুষ্টিয়ার তানজির। এরপর সেখানে মানবপাচার চক্রের কাছে তাকে বিক্রি করে দেন রবিজুল। মানবপাচার চক্রের টর্চার সেলে দীর্ঘ ৯ মাস বন্দি রাখা হয় তানজিরকে। বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধরের ভিডিও পরিবারকে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হতো। অবশেষে তানজির শেখের পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় ৩৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে রবিজুল। মুক্তিপণ নিয়ে তানজিরকে ছেড়ে দিয়েছে মানবপাচার চক্র। গত ৯ জুলাই দেশে ফিরেছেন তানজির শেখ।

তানজির শেখ বলেন, রবিজুল লিবিয়াতে দীর্ঘ ১২ বছর ছিলেন। মাফিয়া চক্রের সঙ্গে রবিজুল দালালের সুসম্পর্ক। তিনিও ওই চক্রের সদস্য। আমার বাবা রবিজুলের মাধ্যমে আমাকে লিবিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন রবিজুল। মুক্তিপণের দাবিতে আমাকে তারা ৯ মাস বন্দি করে রেখেছিল। বেঁধে রাখত, তিনবেলা লোহার রড ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। নির্মমভাবে নির্যাতন, মারধর করা হয়। খাবার দিত না, তিনবেলা শুধু মারত। মারতে মারতে শরীর ফাটিয়ে ফেলত। ক্ষত জায়গায় ইনফেকশন হয়ে পচে যেত। কোনো ওষুধ দিত না।

তিনি আরও বলেন, সারাদিনে ৫ টাকা দামের একটা পাউরুটি ও অল্প একটু লবণাক্ত পানি খেতে দিত। লবণাক্ত পানি খাওয়ার কারণে শরীর আরও বেশি পচে যেত। না খাওয়ার কারণে শরীর একদম শুকিয়ে যায়। সব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যায়। এজন্য মার খেতে খেতে অনেকে মরে যায়। মনে হতো আমিও মারা যাব। রবিজুলের খপ্পরে পড়ে আমি মরতে বসেছিলাম। রবিজুল আমাদের কাছ থেকে ৩৪ লাখ টাকা নিয়েছে। আমি টাকা ফেরত চাই, একই সঙ্গে রবিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক।

এই চক্র সম্পর্কে তানজির আরও বলেন, লিবিয়ার ওই মাফিয়া চক্রে ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ থেকে ৭ জন লিবিয়ার নাগরিক। প্রধান মাফিয়া লিবিয়ার আলী। উনি ওসামার ভাগনে বলে পরিচিত। মাফিয়া চক্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন যুক্ত আছেন। তাদের বাসা মাদারীপুর, সিলেট ও শরীয়তপুর। তাদের মধ্যে একজনের নাম পিচ্চি সোহেল, তার বাড়ি মাদারীপুর আর কুষ্টিয়ার রবিজুল।

তানজিরের বাবা সিরাজ শেখ বলেন, ভালো চাকরি দেওয়ার কথা বলে আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠায় রবিজুল। তার সঙ্গে ১১ লাখ টাকার চুক্তি ছিল। প্রথমে ৫ লাখ টাকা দিই, এরপর আমার ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠিয়ে দেন। এরপর বাকি ৬ লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর ইতালি পাঠানোর কথা বলে আমার ছেলেকে মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেন। ছেলে বন্দি থাকা অবস্থায় রবিজুল আরও ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। এর কিছুদিন পর রবিজুল বাড়ি থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে যান।

তিনি আরও বলেন, এরপর নলখোলা গ্রামের আলামিন নামে একজন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং আমার ছেলেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবে বলে প্রলোভন দেয়। তিনি ১৮ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। এতে কোনো কাজই হয়নি। এরপর মাফিয়াদের ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আমি আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি। রবিজুল ও আলামিনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে আমি আমার টাকা ফেরত পেতে চাই।

ভুক্তভোগী আরও পরিবারের মধ্যে মাহাবুল আলম নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ভাগিনা আসিফকে সাড়ে ১৫ লাখ টাকায় ইতালিতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিয়ে যায় রবিজুল। সেখানে নির্যাতন করে মুক্তিপণ নিয়ে আবার দেশে ফেরত পাঠান। রবিজুল ৬০ থেকে ৭০ জনের সঙ্গে এমন প্রতারণা করেছেন। প্রতারণার শিকার প্রত্যেকের আত্মীয়স্বজন থানায় ভিড় জমাচ্ছেন। আরও অনেক ভুক্তভোগী আসছেন। প্রত্যেকে রাজিবুলের কঠোর শাস্তি দাবি করে তাদের টাকা ফেরত পেতে চায়।

এ বিষয়ে ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান কালবেলাকে বলেন, লিবিয়ায় ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রবিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। আর্থিক প্রতারণা ও মানবপাচারের অভিযোগে দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে মামলা রয়েছে। ইবি ও সদর থানায় ৫ থেকে ৬টি মামলা রয়েছে। এছাড়া আলমডাঙ্গা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। সব অভিযোগ আমরা তদন্ত করে দেখছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পায়রা বন্দর ঘিরে বহুমুখী পরিকল্পনা করেছে সরকার : নৌপরিবহন উপদেষ্টা

মিরপুরে বাসায় ডাকাতি, পালানোর সময় আটক ৪

যারা মবতন্ত্র কায়েম করতে চায়, তারাই নির্বাচনবিরোধী : টুকু

স্বাধীনতা বিরোধীদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে : বিএনপি নেতা নীরব

৪৮ তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হলেন সাব্বিরুল আলম

আজ ‘মাদ্রাসা রেজিস্ট্যান্স ডে’, অনুষ্ঠানমালা থাকছে সারা দিন

সরকারের অভিলাষ নিয়ে আমরা শংকিত : চরমোনাই পীর

নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারীর ধৃষ্ঠতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে : লুৎফর রহমান

পিনাকী ভট্টাচার্যসহ বেশ কয়েকজনকে ধন্যবাদ জানালেন জামায়াত আমির

১০

গণমিছিলে গিয়ে বিএনপি নেতার আকস্মিক মৃত্যু

১১

বাহাত্তরের সংবিধানে সব জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি : নাহিদ

১২

খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত নেতানিয়াহু

১৩

আমরা অনেক ডিফিকাল্টির মধ্যে আছে : নাহিদ 

১৪

সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে কী বললেন মির্জা ফখরুল

১৫

এনআইডি আবেদনে ফের সুযোগ

১৬

সীমিত হতে পারে টেস্ট খেলুড়ে দেশের সংখ্যা!

১৭

মাদ্রাসার শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা, গণপিটুনিতে হত্যাকারী নিহত

১৮

পল্টন মোড়ে ককটেল বিস্ফোরণ

১৯

একাত্তরের মতো চব্বিশ নিয়ে যেন চেতনা ব্যবসা না হয় : সালাহউদ্দিন আহমেদ

২০
X