যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১০:১৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ড্রেনের অভাবে তলিয়ে গেছে ৪ হাজার বিঘা জমি

ফাসতলা মাঠজুড়ে শুধু থইথই করছে বৃষ্টির পানি। ছবি : কালবেলা
ফাসতলা মাঠজুড়ে শুধু থইথই করছে বৃষ্টির পানি। ছবি : কালবেলা

টানা তিন মাসের ভারী বৃষ্টিপাতে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নারানপুর ইউনিয়নের প্রায় ৪ হাজার বিঘা কৃষি জমি তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১০ হাজার পরিবার সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছরই কৃষিখাতে বিপুল অর্থের ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয় কৃষকদের। এবার ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারানপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ সোনাবেলে ও ফাসতলা মাঠজুড়ে শুধু থইথই করছে বৃষ্টির পানি। মাঠের পর মাঠ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ধান, কলা, পাট, ড্রাগন ও পেয়ারা বাগানসহ বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, বিগত ৩০ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে এই ফসলি জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকে। এতে তাদের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক মফিজুল ইসলাম বলেন, এখানে আমরা ধান, ভুট্টা, পাটের চাষ করি। কিন্তু ফসল তোলার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রতি বছরই পানিতে সব তলিয়ে যায়। এভাবে বছরের পর বছর আমাদের চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়েছে।

আরেক কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, মাঠে পানি না থাকলে আমরা বছরে তিন থেকে চার বার ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু এখন এই জমিগুলো একফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। এতে শুধু কৃষকদেরই ক্ষতি হচ্ছে না, বরং এই অঞ্চলের সামগ্রিক কৃষিখাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য স্থানীয় কৃষক তরিকুল ইসলাম ডাবলু সম্প্রতি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও চৌগাছা উপজেলা পরিষদে লিখিত আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, প্রতি বছর জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অথচ মাত্র আধা কিলোমিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করে এই পানি চৌগাছা কপোতাক্ষ নদে ফেলতে পারলে কৃষকদের এই কষ্ট লাঘব হয়ে যেত।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৩০ বছর আগে একজন স্থানীয় চেয়ারম্যান ড্রেন নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কেউ তাদের কথা ভাবেনি। দ্রুত একটি ড্রেন নির্মাণ করে ৩ হাজার বিঘা ফসলি জমির পানি স্থায়ীভাবে নিষ্কাশনের জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে নারানপুর ইউনিয়নে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই ইউনিয়নের ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান হয়। এ বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ হয়েছে এবং ৫০০ হেক্টর জমি এখনো জলাবদ্ধ আছে। এই সমস্যা সমাধানে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যৌথভাবে কাজ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা ইসলাম কালবেলাকে জানান, স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কৃষকরা একটি আবেদন দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন গুরুত্বসহ কাজ করছে।

উল্লেখ্য, নারানপুর ইউনিয়নের চাদপাড়া, গোয়াতুলি, বড় খানপুর, কেসমত খানপুর, বাদেখানপুর, নারণপুর, বন্দলীতলা, বাটিকামকলি গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে এই সোনাবেলে ও ফাসতলা মাঠ অবস্থিত।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জবিতে সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার

হাসারাঙ্গার লড়াই টপকে পাকিস্তানের রোমাঞ্চকর জয়

দ্বিতীয়বারের মতো বিয়ের পিড়িতে রশিদ খান

গাজীপুরে যাত্রীবাহী বাসে আগুন

নেপাল ও ভারত ম্যাচ সামনে রেখে ঢাকায় সামিত সোম

মানবপাচার মামলা বায়রার নেতাকে গ্রেপ্তারের পর জিম্মায় মুক্তি

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা নাইম মাদারীপুর থেকে উদ্ধার

বাংলাদেশে এসেছেন মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী আলেম মুফতি ফজলুর রহমান 

আওয়ামী লীগের এক নেতা গ্রেপ্তার

নির্বাচনের পর বিনিয়োগের খরা কাটবে

১০

মামুন হত্যা / সেই দুই শুটারসহ গ্রেপ্তার ৫, অস্ত্র উদ্ধার 

১১

হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী বশর ও মাসুদের বিরুদ্ধে মামলা

১২

ইসির ১২ কর্মকর্তাকে বদলি

১৩

রমজানে ১০ পণ্য আমদানি নিয়ে নতুন নির্দেশনা

১৪

১১ বছর পর জামায়াত কর্মীর মরদেহ উত্তোলন

১৫

দেখামাত্র সন্ত্রাসীদের গুলির নির্দেশ সিএমপি কমিশনারের

১৬

বগুড়ায় হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

১৭

মুশফিককে ছাড়িয়ে টেস্টে নতুন উচ্চতায় লিটন দাস

১৮

বাংলাদেশ থেকে এবার কতজন হজে যেতে পারবেন, জানাল মন্ত্রণালয়

১৯

এক বছর ধরে বিদ্যুৎহীন ২ হাজার পরিবার

২০
X