ফরহাদ সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চট্টগ্রামে অপরাধ দমাতে তৎপর সিএমপি

সিএমপির অন্তর্গত ১৬টি থানা এলাকায় অপরাধ দমনে তৎপরতা বেড়েছে। ছবি : সংগৃহীত
সিএমপির অন্তর্গত ১৬টি থানা এলাকায় অপরাধ দমনে তৎপরতা বেড়েছে। ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) এর অন্তর্গত ১৬টি থানা এলাকায় অপরাধ দমনে তৎপরতা বেড়েছে। চলছে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম। সিএমপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সিএমপি বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, অপরাধ পর্যালোচনা সভা, তল্লাশি অভিযান, ডিজিটাল কন্ট্রোল রুম স্থাপন তদন্ত কেন্দ্র স্থাপন করা ইত্যাদি।

গণঅভ্যুত্থানের পর এ সংস্থার কার্যক্রম কিছুটা ঢিমেতালে চললেও এখন তা নেই। অপরাধ দমন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার, ওয়ান্টেভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে নগরীর ১৬ থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

বিগত ১৬ বছর এ সংস্থাটির অনেক সুনামের পাশাপাশি দুর্নামও রয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন সময় এ সংস্থাটি জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে বেশ সুনাম অর্জনের পাশাপাশি আস্থার জায়গা করে নিয়েছিল। কিছু অসাধু কর্মকর্তার কারণে সেই সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। সবশেষ জুলাই বিপ্লবে আগ্রাসী আচরণে এই সংস্থার ধস নামে। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আবার অনেকের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে বিভাগীয় মামলাও। আবার অনেকে ৫ আগস্ট পরবর্তী নিজ কর্মস্থলে যোগদান না করার খবরও রয়েছে। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা জনগণের সেবক হয়ে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে ফের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। দাবি তুলেছেন পুলিশ কমিশন গঠনেরও।

একাধিক পুলিশের মুখপাত্রের ভাষ্য, ‘জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা’ এ ধারণাটি কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এর অর্থ হলো, জনগণ এবং পুলিশ একে অপরের পরিপূরক এবং একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পুলিশ জনগণের বন্ধু এবং সেবক হিসেবে কাজ করবে এবং জনগণও পুলিশের কাজে সহযোগিতা করবে। এ পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের মাধ্যমেই একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠন করা সম্ভব। এ ধারণাটি মূলত কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থার একটি মূলমন্ত্র। কমিউনিটি পুলিশিং হলো, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে একটি নির্দিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে আনার একটি প্রক্রিয়া। এ ব্যবস্থায় পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা, সমঝোতা এবং শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

নগরবাসীর অভিমত, পুলিশের সঙ্গে শ্রদ্ধার সম্পর্ক এবং আস্থার জায়গা নষ্ট করেছে অসাধু পুলিশ সদস্যরা। ৫ আগস্টের পর ভালো পুলিশিং নগরবাসী আশাবাদী ছিল। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে পুলিশের আগের চরিত্র ফুটে উঠছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী ইমতিয়াজ হোসেন কালবেলাকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে পুলিশ জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের সেবক পরিচয় দিয়েছিলেন। কুড়িয়েছেন বেশ সুনামও। আবার সে সুনাম নানা কর্মকাণ্ডে ক্ষুণ্ন হয়েছে। বর্তমানে মনে হচ্ছে অপরাধ দমনে পুলিশের একটি পক্ষ জোরালো ভূমিকা পালন করছেন। অপরদিকে আরেকপক্ষ তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন ঢিমেতালে।

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক বাহিনী কিংবা সংস্থার ভেতর বর্তমান সময়ে যারা অর্পিত দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করছেন কিংবা অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করছেন এমন সদস্যদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন বিভাগীয় মামলা দায়ের করার মাধ্যমে বিচারের মুখাপেক্ষী করা হলে এ সংস্থা জনগণের আস্থা হয়ে সেবার দোরগোড়ায় পৌঁছতে সক্ষম হবে।

গত সোমবার নগরীর দেওয়ানহাট মোড়ের ফুটপাতে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করা এক ভারসাম্যহীন নারীকে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগের দুই সার্জেন্ট হাসপাতালে পাঠানোর পর আবারও প্রশংসায় ভাসছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষ ও পথচারীর উপস্থিতি থাকলেও কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে যায়নি। ভারসাম্যহীন নারীর এমন অবস্থা দেখে এক নারী এগিয়ে আসেন।

সিএমপির ট্রাফিক সার্জেন্ট আব্দুল্লাহ আল মুজাহিদ বলেন, আমরা দেওয়ানহাট মোড়ে ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ দেখি, এক নারী চিৎকার করতে করতে মাটিতে পড়ে গেছেন। তখনই আমরা দ্রুত সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাই।

ওইস্থানে কর্মরত আরেক সার্জেন্ট জাহিদুর রহমান বলেন, আমাদের কাজ শুধু যানবাহন নিয়ন্ত্রণ নয়, মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা। এমন পরিস্থিতিতে মা ও নবজাতকের জীবন রক্ষা করাই ছিল আমাদের প্রথম লক্ষ্য।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মতে, দায়িত্ববোধ ও সহমর্মিতার এমন উদাহরণ সমাজে অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।

‘জনতাই পুলিশ, পুলিশই জনতা’ এ ধারণাটি একটি আধুনিক ও কার্যকর পুলিশিং ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করে নগর পুলিশের মুখপাত্র মো. রইছ উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ধারণাটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য কোনো অংশে কম নয়। ধারণাটি পুলিশ ও জনগণের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা বাড়াতে সাহায্য করে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে জনগণ পুলিশের কাজে সহযোগিতা করলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হয়। জনগণের মধ্যে পুলিশ ভীতি হ্রাস পায় এবং তারা পুলিশকে আপন ভাবতে শেখে। পাশাপাশি এ ধারণা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে সহায়ক।

তথ্যমতে, সিএমপির থানা, ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার, বিদেশ থেকে দেশে আগমনকারীদের তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ডাকাতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার, মহিউদ্দীন খুনের মূলহোতা ও মাস্টারমাইন্ড গ্রেপ্তার, বাকলিয়ায় জোড়া খুনের আসামি সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার, ক্লুলেস মামলার রহস্য উদ্‌ঘাটন, ইয়াবা জব্দ, চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার ও মালামাল উদ্ধার, হারানো মোবাইল উদ্ধার ইত্যাদি কার্যক্রমে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে সিএমপি।

কলেজ শিক্ষার্থী আজমাইন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন না তা বললে ঠিক হবে না। তবে শতভাগ চালাচ্ছেন তা মন্তব্য করা যাবে না। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা চাই, গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ হোক। পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ হিসেবে থাকুক।

অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা নয় বরং আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকার কর্মী জিয়া হাবিব আহসান। তিনি বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে পুলিশকে আরও আন্তরিক হতে হবে। না হয় সমাজে ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, লাইসেন্স ছাড়া অস্ত্র থাকা মানেই জনগণের জীবন বিপন্ন। পাশাপাশি জানমালের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়। ৫ আগস্ট পরবর্তী থানা, ফাঁড়িতে আক্রমণ চালিয়ে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা না হলে সেগুলো নির্বাচনে এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে ব্যবহৃত হতে পারে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম কালবেলাকে বলেন, জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় গ্রেপ্তার হামলাকারীদের অস্ত্র উদ্ধার হয়নি তবে অবৈধ অস্ত্র (থানা, ফাঁড়ি) উদ্ধার হয়েছে। তাছাড়া আমাদের অস্ত্র উদ্ধার অভিযান প্রতিদিনই চলমান রয়েছে এবং থাকবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুষ্টিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রাণ ভোমরারা হতাশ হয়েছেন : নুর

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

এবার চট্টগ্রামে সাংবাদিককে গলা টিপে হত্যাচেষ্টা

সাবেক ৩ গভর্নর ও ৬ ডেপুটি গভর্নরের ব্যাংক হিসাব তলব

এনসিপির হয়ে নির্বাচন করব কিনা সিদ্ধান্ত নেইনি : আসিফ মাহমুদ

সবাইকে টেস্ট খেলানো জরুরি নয় : জোরাজুরিতে দেউলিয়ার শঙ্কা

প্রবাসেও আপ বাংলাদেশের কমিটি ঘোষণা 

ইসরায়েল পুড়ছে রেকর্ড তাপমাত্রায়

শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনকে আর্থিক সহায়তার চেক দিল যমুনা অয়েল

১০

অসহায় পরিবারের দুই শিশুকে চিকিৎসা সহায়তা-অটোরিকশা দিলেন তারেক রহমান

১১

৩০০ আসনে নির্বাচনের পরিকল্পনা করছে গণতন্ত্র মঞ্চ 

১২

ড্রোন শো পরিচালনার প্রশিক্ষণে চীন যাচ্ছেন ১১ জন

১৩

সামাজিক কাজে অবদান রাখায় নিবন্ধন পেল প্রভাত

১৪

স্বাস্থ্যের ডিজির আশ্বাসে মন গলেনি, নতুন কর্মসূচি ছাত্র-জনতার

১৫

শহীদ মিনারে কাফনের কাপড় পরে বস্তিবাসীদের অবস্থান

১৬

পিআর পদ্ধতিতেই নির্বাচন হতে হবে : চরমোনাইর পীর

১৭

চট্টগ্রামে ১০ লাখ গাছ লাগানোর ঘোষণা মেয়রের

১৮

রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ-সমাবেশ

১৯

গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগের প্রতিবাদ সম্পাদক পরিষদের

২০
X