উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও চরগুলো তলিয়ে গেছে। চরবাসী গবাদিপশু ও মালপত্র নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে লোকালয়ে চলে যাচ্ছেন।
বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকাল ৬টায় পানির সমতল রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে। এ পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে চতুর্থবারের মতো তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এর আগে ২৯ জুলাই রাতে প্রথমবার ৭ সেন্টিমিটার, ৩ আগস্ট ৪০ সেন্টিমিটার এবং ১২ আগস্ট ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এবার চতুর্থবারের মতো বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে।
এরই মধ্যে খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে তোফেল মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে নদীর একটি নতুন শাখা সৃষ্টি হয়েছে, যা শত শত বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন করে দিয়েছে। এতে শতাধিক পরিবার গৃহহীন ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে তিস্তার ভাঙনে অসংখ্য গ্রাম মানচিত্র থেকে মুছে গেছে। স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা ও খেলার মাঠসহ বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়েছে। এবারের ভাঙনের তীব্রতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার মিটার নদীপাড় ভেঙে যাচ্ছে, যার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, বাজার ও ঘাট ঝুঁকিতে রয়েছে।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন জানান, তার ইউনিয়নের চারটি ওয়ার্ড নদীতীরবর্তী। সেখানে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস, এর মধ্যে ৬০০-৭০০ পরিবারের বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ঝড়সিংহেশ্বর গ্রামের বাসিন্দা হযরত আলী বলেন, পানি বেড়ে চরগুলো ডুবে গেছে। অধিকাংশ মানুষ লোকালয়ে চলে এসেছে, গবাদিপশুর জন্য খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের নূর হোসেন জানান, প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। মানুষ নৌকায় করে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে- কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। যাদের গবাদিপশু আছে তারা বেশি বিপাকে পড়েছেন, অনেক পশু এখনো চরেই রয়ে গেছে।
গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য বাবর আলী বলেন, আমাদের এলাকায় নদীর তিনটি শাখা সৃষ্টি হয়েছে। অনেক আবাদি জমির ধান তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর ওপারের কয়েকটি চর ডুবে গেছে, অনেকের বাড়ির কাছাকাছি পানি চলে এসেছে। গবাদিপশু সরানো নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ।
তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টের পানির লেভেল পরিমাপক নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান জানান, বন্যা মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের জন্য শুকনো খাবার, ত্রাণসামগ্রী ও তাঁবু মজুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার নিম্নাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
মন্তব্য করুন