সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চম্পাফুল কালীবাড়ি বাজার এলাকায় এক হিন্দু পরিবারের চার বিঘা জমি জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। এ সময় কমপক্ষে ১০ প্রজাতির শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে ফেলা, ফল লুটপাট, বাড়িতে প্রবেশের প্রধান রাস্তা বাঁশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। এরপর সেখানে ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) ভোর থেকে সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত চলে এ জবরদখল কর্মকাণ্ড।
অভিযোগ রয়েছে, রোববার ভোরে জবরদখল শুরু হলে থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতেও জবরদখলকারীরা কাজ চালিয়ে যায়। এমনকি ঘটনাস্থলে মোবাইলে ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য শংকর মণ্ডলের মোবাইল ফোন থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) সাব্বির আহমেদ ফুটেজ মুছে দেন।
ক্ষতিগ্রস্ত সুনীল কুমার মণ্ডল জানান, ওয়ারিশ ও ক্রয় সূত্রে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ওই জমি ভোগদখল করে আসছেন। আদালতের সর্বোচ্চ রায়ও তাদের পক্ষে রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী সামাদ গাজী ও আলমগীরের নেতৃত্বে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর আগেও বাধা দিতে গেলে তাদের মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কয়েকটি দেওয়ানি মামলা রয়েছে, যার পরবর্তী তারিখ আগামী ২৪ আগস্ট ও ৫ সেপ্টেম্বর ধার্য করেছেন আদালত। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষ আদালতের রায় আগে ভাগে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্যই হামলা ও জবরদখলের চেষ্টা চালাচ্ছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য ইব্রাহীম হোসেন, আব্দুস সবুর, মাস্টার সাধুরঞ্জন খাঁসহ কয়েকজন জানান, প্রকাশ্যে ফিল্মি স্টাইলে জমি দখলের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
অভিযোগ রয়েছে, সামাদ গাজী এর আগে জমি সংক্রান্ত বিরোধে এলাকায় একাধিক হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। স্থানীয়রা বলেন, তিনি প্রভাব খাটিয়ে বিচার এড়িয়ে গেছেন। এছাড়া এক পুরোহিতের স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলায়ও তার নাম উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে সামাদ গাজীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি থানায় থাকার কথা জানিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান।
কালিগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিলন কুমার ঘোষ জানান, দীর্ঘদিন যাবত দুই পক্ষের মধ্যে জমি জায়গা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল, অনেক দিন আগে আমরা সরেজমিনে গিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতা করে দেই। দীর্ঘদিন ধরে উভয়পক্ষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছিল, হঠাৎ শুনতে পাই পুনরায় আবার দুপক্ষের মধ্যে ঝামেলা বেঁধেছে, উভয়পক্ষ থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেছে। থানার ওসি ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সাব্বির আহমেদ স্বীকার করেছেন, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে শংকর মণ্ডলের মোবাইল থেকে ভিডিও ডিলিট করেছেন। তবে তিনি বলেন, দুপক্ষকে নিয়ে সমাধানের জন্য থানায় বসার কথা বলা হয়েছিল।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, রোববার কোনো জবরদখলের ঘটনা ঘটেনি। সোমবার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আদালতে যাওয়ার জন্য তিনি সুনীল মণ্ডলকে পরামর্শ দিয়েছেন।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি রোববার রাতেই জানার পর ওসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন