ভিটে মাটি সহায় সম্বলহীন গোলজার (৮১) রোকেয়া (৬৫) দম্পতি পেয়েছেন মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেওয়া দুই শতক জায়গাসহ পাকা ঘর। জন্মের পর থেকে ভিটে মাটিহীন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি অন্যের বাসায় ভাড়া থেকে গোলজার হোসেন মাছের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করত। এক সময় তাদের ঘরে আসে দুটি ছেলে এবং দুটি মেয়ে। আশায় বুক বাঁধে গোলজার-রোকেয়া দম্পতি। হয়ত ছেলেরা একদিন বড় হয়ে আয় রোজগার করে এক টুকরো থাকার জায়গার ব্যবস্থা করবে। হয়ত তাদের স্বপ্ন একদিন পূর্ণ করবে। কিন্তু সে আসায় গুড়েবালি। তাদের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। তবে সেই স্বপ্নপূরণ হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
সরকারের দেওয়া দুই শতক জায়গাসহ পাকা ঘর পাওয়ার স্বপ্নপূরণ হলেও বয়সের ভারে বার্ধ্যকের ছাপ পড়ে গেছে দেহে। গোলজার-রোকেয়া দম্পতি প্রায় এক মাস আগে ঘর পেলেও ঘরে ওঠার পর দিন থেকেই গোলজার হোসেন বিছানাগত। শ্বাসকষ্ট ও শরীরের দুর্বলতা তাকে নির্বিকার করে ফেলেছে। একদিকে বয়সের ছাপ অন্যদিকে রয়েছে অসুস্থতা, সীমাহীন দুর্ভোগ। অসুস্থতার প্রকট এতটাই বেশি যে উঠে বসতে পর্যন্ত পারেন না। ভালো চিকিৎসা তো দূরের কথা অভাবের তাড়নায় না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অসুস্থতা এবং অভাবে পড়ে দিনে দিনে শয্যাশায়ী গোলজার হোসেন মৃত্যুর প্রহর গুণছেন। অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে রোকেয়া বেগম দিশাহারা হয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্বামীর জন্য চিকিৎসা ও খাবারের সহায়তার জন্য। অন্যদিকে ছেলে বা মেয়ে কেউই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেনি। এ যেন ভিন্ন এক পৃথিবীতে বাস করছেন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি।
পাশের ঘরে থাকা জাবেদা খাতুন জানান, ওনারা এখানে আসার পর দিন থেকেই অসুস্থ, দেখার কেউ নেই। মুরুব্বিও কাজে যেতে পারেন না। অসুস্থ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসাও নিতে পারছেন না। ছেলেমেয়েরাও কোনো খোঁজখবর নিতে আসে না। খুবই কষ্টে রয়েছেন তারা। কেউ সাহায্য না করলে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হবে।
উপজেলা পিআইবি অফিসের তথ্য মতে, সারা দেশের ন্যায় কামারখন্দ উপজেলাতে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার হিসেবে মোট ঘরের সংখ্যা ২৮৫টি। যেটা ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪থ ধাপে বাস্তবায়ন করা হয়। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য দেওয়া গত ৯ আগস্টে চতুর্থ ধাপের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০৭টা ঘর গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে দেওয়া হয়। যেখানে উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের নান্দিনামধু গ্রামের বকচরাক বিলের মাঝে একসঙ্গে মোট ১২২টি ঘর রয়েছে। সেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় উপহারের এতগুলো ঘর একসঙ্গে থাকায় এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে মধুগ্রাম। সেই মধুগ্রামের ২১২ নম্বর ঘরটিতে বসবাস করেন গোলজার-রোকেয়া দম্পতি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন সুলতানা বলেন, আমি দ্রুতই ওখানে যাব এবং এই বৃদ্ধ দম্পতির বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তাদের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করব, কিছু করার জন্য।
মন্তব্য করুন