দুয়ারে কড়া নাড়ছে দেবী দুর্গার আগমনি বার্তা। সারা দেশে পূর্ণোদ্যমে চলছে পূজার প্রস্তুতি। প্রতিমা তৈরির কাজ শেষের দিকে। প্রতিমাকে রংতুলিতে সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
প্রতি বছরের মতো এবারও বিশেষ প্রস্তুতি চলছে বরিশাল নগরীর নতুন বাজার শ্রীশ্রী শংকর মঠ পূজামণ্ডপে। প্রতিমা তৈরি থেকে শুরু করে সাজসজ্জা—সবক্ষেত্রেই নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছেন আয়োজকরা। মণ্ডপ চত্বরের পুকুরজুড়ে চলছে দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা, ভেতরে ও বাইরে আলোকসজ্জার কাজও শেষ পর্যায়ে।
তবে শুধু শংকর মঠ নয়, বরিশাল মহানগরী ও জেলার মোট ৬৪০টি মণ্ডপেই চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) মহালয়ার দিনে বেশিরভাগ মণ্ডপে প্রতিমার সাজসজ্জা ও রঙের কাজ শেষ হয়েছে। আজকের মধ্যে বাকি কাজও সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন মৃৎশিল্পীরা।
আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বোধন পূজা দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাবেন ভক্তরা।
বরিশাল শংকর মঠ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লিমন সাহা কানু জানান, প্রতি বছরের মতো এবারও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন চলছে শংকর মঠ পূজামণ্ডপে। এবার অষ্টমীর দিনে দেশের শান্তিকামনায় বিশেষ প্রার্থনা ও অঞ্জলি প্রদান করা হবে। এদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার ভক্তের মাঝে প্রসাদ বিতরণের প্রস্তুতিও চলছে।
বরিশাল মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভানু লাল দে বলেন, এবারের আয়োজন গত বছরের চেয়েও জমকালো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও ৫টি পর্যবেক্ষক টিম গঠন করা হয়েছে।
এবার বরিশাল মহানগরীতে ৪৭টি মণ্ডপে পূজা হবে। এর মধ্যে ৪০টি সার্বজনীন ও ৭টি পারিবারিক। জেলায় সদর উপজেলায় ২২টি, আগৈলঝড়ায় ১৬১টি, উজিরপুরে ১২০টি, গৌরনদীতে ৮৪টি, বাকেরগঞ্জে ৭৪টি, বানারীপাড়ায় ৫৯টি, মেহেন্দিগঞ্জে ২৪টি, বাবুগঞ্জে ২৪টি, মুলাদীতে ১২টি ও হিজলায় ১৫টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
পূজা নিয়ে কোনো শঙ্কা না থাকলেও গ্রামপর্যায়ের মণ্ডপগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মানিক মুখার্জি। তিনি বলেন, এবারের দুর্গোৎসব সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন হবে বলে আমরা আশা করছি। আমাদের মন্দির আমরা পাহারা দেব। পুলিশ প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা করবে।
উৎসব নির্বিঘ্ন করতে প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। আজ থেকে নগরীর প্রবেশদ্বার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট বসানো এবং টহল দেবে গোয়েন্দা পুলিশের ৭টি বিশেষ টিম। ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। মণ্ডপ কমিটিগুলোও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবে। তিনি আরও জানান, পূজা ও বিসর্জন ঘিরে শৃঙ্খলা রক্ষায় কড়াকড়ি থাকবে এবং মদ্যপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
মন্তব্য করুন