রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহী-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা

রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ছবি : কালবেলা
রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ। ছবি : কালবেলা

বেতন বৃদ্ধিসহ একাধিক দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, হানিফ কেটিসি, গ্রামীণ ট্রাভেলস ও শ্যামলী ট্রাভেলসের বাস বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ বাস বন্ধে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা থেকে একই দাবিতে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছিল। তবে দ্রুত দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাসে ৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ২টা থেকে কর্মবিরতি স্থগিত বাস শ্রমিকরা। কিন্তু দাবি আদায় না হওয়ায় আবারও কর্মবিরতি শুরু করেছে অধিকাংশ বাস শ্রমিক। তবে এই আন্দোলনের বাইরে আছে একতা পরিবহন ও কিছু লোকাল বাস। তাই একতা পরিবহন ও ট্রেনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনালে ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, হানিফ কেটিসি, গ্রামীণ ট্রাভেলস ও শ্যামলী ট্রাভেলসের কাউন্টারের শাটার বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি ফটকের সামনে বাস শ্রমিকদের কর্মবিরতির ব্যানার টানানো রয়েছে। শ্রমিকরা মাঝে মাঝে বিক্ষোভ করছেন। ফলে এ পরিবহনগুলোর টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা কাউন্টারে এসে টিকিট না পেয়ে বিকল্প পরিবহনের চেষ্টা করছেন। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে অধিকাংশ যাত্রী টিকিট না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

রাজশাহী থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য বাস কাউন্টারে এসেছিলেন যাত্রী রহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১২টায় বাস ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এসে শুনি বাস বন্ধ। অল্প সময়ে ট্রেনের টিকিটও কাটা যাচ্ছে না। যে কয়টা বাস চলছে, সেগুলোর টিকিটও মিলছে না। আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। ঢাকা যাওয়া খুব জরুরি ছিল। তবুও উপায় না থাকায় ফিরে যেতে হচ্ছে।’

ঢাকাগামী অপর যাত্রী শরফুদ্দিন বলেন, ‘জরুরি কাজে ঢাকায় যেতে হতো। কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছি। বিকল্প গাড়ির ভাড়া দ্বিগুণ, সেটাও ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। যাত্রীদের এমন হয়রানি না করেও আন্দোলন করা যেত। তাহলে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অভিজিৎ সরকার। তার বাড়ি কক্সবাজার। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শাটডাউন চলছে। সামনে পূজাও রয়েছে। তাই বাড়ি যাওয়ার জন্য এসেছি। কিন্তু বাস না থাকায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি। ট্রেনে ঢাকা যেতে পারলেও হতো। কিন্তু টিকিট আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন লোকাল বাসই ভরসা। তবে শেষ পর্যন্ত কতক্ষণে যেতে পারবো সেটা জানি না।’

যাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে এভাবে বাস বন্ধ করলে আমরা যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ি। শ্রমিকদের দাবি মানা উচিত, কিন্তু যাত্রীদের কষ্টও কমানো দরকার।’

শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে ঢাকাগামী এক ট্রিপে (আপ-ডাউন) চালক পান ১ হাজার ২০০ টাকা, হেলপার ৬০০ টাকা এবং সুপারভাইজার আরও কম। এ আয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তাদের দাবিগুলো হলো—চালকের বেতন এক ট্রিপে ২ হাজার টাকা, সুপারভাইজারের বেতন ১ হাজার ১০০ টাকা, হেলপারের বেতন ১ হাজার টাকা, হোটেল ভাড়া বাবদ ২০০ টাকা, প্রতিবার খাবারের জন্য জনপ্রতি ১০০ টাকা ও প্রতিবছর বোনাসের ব্যবস্থা।

ন্যাশনাল ট্রাভেলসের চালক আলী হোসেন বলেন, ‘১৭ বছর থেকে আমাদের বেতন বাড়ানো হয়নি। মালিককে বললেও বেতন বাড়াচ্ছেন না। এর আগেও আমরা ২৩ আগস্ট শুধু ন্যাশনাল ট্রাভেলস বন্ধ রেখেছিলাম। ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তিন দিন কর্মবিরতি পালন করেছেন প্রায় সকল বাসের শ্রমিকরা। প্রতিবারই আমাদের বেতন বৃদ্ধির আশ্বাস দিলে আমরা কাজ শুরু করি। কিন্তু এখনও আগের বেতনই দেওয়া হচ্ছে। তাই অন্য সব বাসের শ্রমিকরা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আন্দোলন করছে। তবে একতা পরিবহন এই কর্মসূচির বাইরে থাকায় তাদের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।’

ন্যাশনাল ট্রাভেলসের হেলপার রেজা বলেন, ‘এক ট্রিপে ৬০০ টাকা পাই। খরচ বাদ দিলে হাতে থাকে মাত্র ৪০০ টাকা। মাসে ১৪টা ট্রিপে আয় হয় ৫ হাজার ৬০০ টাকা। এতে সংসার চালানো যায় না।’

রাজশাহী জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পাখি বলেন, ‘শ্রমিকরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। একতার চালক পান ১ হাজার ৭৫০ টাকা, কিন্তু অন্য বাসের চালক পান মাত্র ১ হাজার ২৫০ টাকা। মালিকরা বারবার আশ্বাস দিয়েও বেতন বাড়াচ্ছেন না। তাই চালকরা বাস বন্ধ করে দিয়েছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেহেরপুরে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রথম মামলা, আসামি ১৯

চট্টগ্রামে ৬০ অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান উচ্ছেদ করল চসিক

নির্বাচনের দিনেই গণভোট চায় বিএনপি : মির্জা ফখরুল

এক বছরে ৫০টি সড়ক নির্মাণের ঘোষণা চসিক মেয়রের

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে দেশ মহাবিপর্যয়ে পড়বে : প্রিন্স

সম্ভাব্য আর চূড়ান্ত মনোনয়ন এক নয় : তানভীর হুদা

প্রেমিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ স্বামী, বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলেন স্ত্রী

ছয় বছরের ছাত্রের গুলিতে আহত, আদালতের রায়ে চমকে গেলেন শিক্ষক

অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার নতুন দিগন্ত : বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সহজতর পথ

পাওয়া গেল মাকড়সার বিশাল আস্তানার সন্ধান

১০

ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে ৩ বন্ধু নিহত

১১

ইসরায়েলের স্পর্শকাতর ভিডিও ফাঁস, মধ্যপ্রাচ্যে তোলপাড়

১২

বিমার ২৫ লাখ টাকা নিতে স্বামীকে ‘মৃত বানালেন’ স্ত্রী

১৩

১০-২০ কোটি টাকা ছাড়া নির্বাচন করা কঠিন : আসিফ মাহমুদ

১৪

পতেঙ্গায় ২৬ লাখ টাকার বার্মিজ পণ্যসহ আটক ৬

১৫

শ্রীমঙ্গলে কর্মবিরতি করে চা শ্রমিকদের মানববন্ধন

১৬

থানায় গিয়ে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন মাইকিং করা বড়ভাই

১৭

দেশের ককপিটে তরুণদের বসাতে চাই : জামায়াত আমির

১৮

না বুঝে ভোট দেওয়ার দিন শেষ : নুর

১৯

চীনের সেই বিমানবাহী রণতরী প্রস্তুত, ঘুরিয়ে দিতে পারবে কি যুদ্ধের মোড়?

২০
X