

ফুল মানেই সুন্দর। ফুলে গন্ধ থাক বা না-থাক, ফুল প্রকৃতির এক সর্বজনীন সৌন্দর্য। ফুল মানুষের হৃদয়ে চিরন্তন ভালোলাগা তৈরি করে। ফুলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের মাধ্যমে মানুষের মনে মানসিক প্রশান্তি আসে। ফুলের নান্দনিকতা ও স্নিগ্ধতা মানুষের মনে আশা ও আনন্দ জাগিয়ে তোলে।
ফুল ভালোবাসা, সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক। আদিকাল থেকেই মানুষের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে ফুলের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাসাহিত্যেও বারংবার ফুল উঠে এসেছে নানারকম বন্দনায়।
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার প্রকৃতি রাঙিয়ে ফোটা এমনই এক বনফুল চোখজুড়ানো পটপটি। এ ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি নতুনভাবে সেজে উঠেছে। এ ফুলের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে হেমন্তমাখা প্রকৃতির অবয়ব। এ যেন প্রকৃতির আঁকা এক নজরকাড়া চিত্রপট।
পটপটি উদ্ভিদটির ইংরেজি নাম রুয়েলিয়া টিউবেরোসা। এটি অ্যাকান্থেসি পরিবারের অন্তর্গত একটি বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় একধরনের বুনো উদ্ভিদ। রুয়েলিয়া উদ্ভিদের অনেকগুলো প্রজাতি রয়েছে। পটপটি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে এ দেশে এসেছে। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে এ উদ্ভিদটির কমবেশি উপস্থিতি রয়েছে। অঞ্চলভেদে এটির অনেক আঞ্চলিক নাম রয়েছে।
পটপটি বা রুয়েলিয়া ফুলের রং হালকা বেগুনি। এ ফুল দেখতে অনেকটা ঢোলকলমি বা ধুতরা ফুলের মতো। এ ফুলের কোমল পাপড়ি দেখতে খুব বেশি মসৃণ নয়, তবে বেশ সুন্দর ও আকর্ষণীয়। সকালে ফোটা এই ফুল দুপুর হলেই ক্রমান্বয়ে ঝরে পড়তে শুরু করে। স্বল্প আয়ুর এই ফুল দেখতে বেশ সুন্দর ও মোহনীয়।
পটপটি উদ্ভিদটি সাধারণত বাড়ির আশপাশে, সড়কের পাশে, ঝোপঝাড়, পরিত্যক্ত জায়গায় ও পতিত জমিতে যত্ন ছাড়াই জন্মায়। এরা যেখানে জন্মায় সেখানে দলবদ্ধভাবে জন্মায়। এই উদ্ভিদের পাতার রং সবুজ। এই উদ্ভিদের ফলে পানির স্পর্শ পেলে ফলটি পটপট শব্দ করে ফেটে যায়, এ সময় ফলের ভেতরে থাকা বীজ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এরা এ বীজের মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে।
পটপটি বা রুয়েলিয়া উদ্ভিদের ভেষজ গুণ রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই ভেষজগুণ সম্পন্ন এই উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ মানবদেহের নানা রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ ছাড়া এ উদ্ভিদটি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। কোথাও কোথাও এ উদ্ভিদটি বাগানের সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহার করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন মেঠোপথ ও সড়কের পাশে, পরিত্যক্ত জায়গায়, বিভিন্ন জলাশয়ের পাড়ে, বাসাবাড়ির আশপাশে মুগ্ধতা ছড়িয়ে ফুটে আছে পটপটি ফুল। এ ফুলের সম্মোহনী সৌন্দর্যে প্রকৃতি সেজে উঠেছে নতুন সাজে। অনাদর ও অবহেলায় ফোটা এ ফুলের চোখ আটকে যাওয়া নৈসর্গিক সৌন্দর্যে প্রকৃতি মেতে উঠেছে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা শিউলি বলেন, পটপটি ফুলের মনোমুগ্ধকর এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যে কাউকে অনায়াসেই মুগ্ধ করবে। সবুজের মাঝে ফুটে থাকা এই হালকা বেগুনি রঙের ফুলগুলো প্রকৃতিতে এক মনোরম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। সড়কে চলাচলের সময় হঠাৎই এরকম মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে চোখ আটকে যায়।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ফরিদ উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, প্রকৃতি হচ্ছে পৃথিবীর প্রাণ। আর ফুল হচ্ছে প্রকৃতির অলংকার। তেমনি এক সৌন্দর্য গুণে গুণান্বিত ফুল পটপটি। এ ফুলের সৌন্দর্যে প্রকৃতি আরও বেশি সুন্দর হয়ে উঠেছে। এ সময়টায় আসা-যাওয়ার পথে এ ফুল বেশি চোখে পড়ছে। তবে এ ফুলের সৌন্দর্য বেশি সময় ধরে থাকে না, দুপুর হলেই এ ফুল ঝরে পড়ে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানি চিকিৎসক ডা সোহেল রানা কালবেলাকে বলেন, পটপটি ফুল সৌন্দর্যের দিক থেকে অন্যতম। একসঙ্গে অনেক ফুলের উপস্থিতির কারণে অনায়াসেই নজর কাড়ে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ফুল দেখতে পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, পটপটি একটি ভেষজগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। নানা রোগের চিকিৎসায় এ উদ্ভিদটির বিভিন্ন অংশ ব্যবহার করা হয়। তবে এটি ব্যবহার করার আগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অথবা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ভুল পরিমাণে বা ভুল পদ্ধতিতে ব্যবহার করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি হতে পারে। তাই এই উদ্ভিদসহ অন্য যে কোনো উদ্ভিদ ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের আগে এটি সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নেওয়া জরুরি।
মন্তব্য করুন