বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২
যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫২ পিএম
আপডেট : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিএনপি নেতার প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ব্যাংকের চিঠি

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব (টিএস আইয়ূব)। ছবি : সংগৃহীত
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব (টিএস আইয়ূব)। ছবি : সংগৃহীত

যশোর-৪ (বাঘারপাড়া, অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটির দাবি, টিএস আইয়ূব একজন ‘ইচ্ছাকৃত’ ঋণখেলাপি এবং সিআইবি রিপোর্টে তার নাম ‘মন্দ’ তালিকায় রয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) যশোরের জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশেক হাসানের কাছে এ লিখিত আবেদন জমা দেয় ঢাকা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

ব্যাংকটির ঢাকা ধানমন্ডি মডেল ব্রাঞ্চের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এসএম রাইসুল ইসলাম নাহিদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে টিএস আইয়ূবকে ‘ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে। টিএস আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

যশোর-৪ আসনটিতে টিএস আইয়ুব ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর বিএনপির সভাপতি মতিয়ার ফারাজী। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন টিএস আইয়ুবের ছেলে ফারহান সাজিদ। দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলীয় কৌশল হিসাবে দল আসনটিতে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে দুজনকে রেখেছেন।

যশোরের রিটার্নিং অফিসারের কাছে ঢাকা ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ হতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি নামে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা হতে তিনি ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি একজন ঋণখেলাপি, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণখেলাপি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, টিএস আইয়ূব তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেন এবং বৈদেশিক রপ্তানি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন। যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাশিত হিসেবেই আছে। যার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের এবং চার্জশিট প্রদান করে। এছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। পরবর্তীতে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা করে, বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে আছে। উক্ত মামলা ছাড়াও ব্যাংক তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার সংক্রান্ত সিআর মামলা রয়েছে, যা বর্তমানে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে, ঋণখেলাপি ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।

দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এই প্রার্থী সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত চার ব্যাংকে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের নামে ২০১৭ সালে ১৪টি ভুয়া এলসির বিপরীতে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। ২০১৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করে ব্যাংক। সুদসহ বর্তমানে তার কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে টিএস আইয়ুব ও তার স্ত্রী তানিয়া রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। এরই মধ্যে তাকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছে ঢাকা ব্যাংক।

টিএস আইয়ুবের সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৭০ কোটি টাকার খেলাপি। ঋণটি পুনঃতপশিল করতে তাকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট জমার শর্ত দিয়েছে ব্যাংক। তিনি মাত্র ৬৫ লাখ টাকা জমা দেওয়ায় তা নিয়মিত হয়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি। এর বাইরে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘ঋণখেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন নেই। তারপরেও যদি ব্যাংক কোনো চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে।’

জেলা রিটার্নিং অফিসার ও যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, টিএস আইয়ূবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই-বাছাইকালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রুমিন ফারহানাসহ যে ৯ জনকে বহিষ্কার করল বিএনপি

খালেদা জিয়ার জানাজা উপলক্ষে যেসব সড়ক বন্ধ থাকবে 

বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে যা জানা গেল

বহিষ্কারের পর নির্বাচন করার ঘোষণা ১ বিএনপি নেতার

ইজতেমার ময়দানে সমাবেশ নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল সরকার

রাস্তায় ফেলে যাওয়া ২ শিশুর দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

খালেদা জিয়ার মৃত্যু / ৩ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণায় স্থগিত হলো যেসব পরীক্ষা

বিএনপি নেতার প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ব্যাংকের চিঠি

খালেদা জিয়ার ‘মাতৃস্নেহ’ নিয়ে অধ্যাপক জাহিদের স্মৃতিচারণা

খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে ঢাবির বিশেষ পরিবহন ব্যবস্থা

১০

ওয়েস্টিন, শেরাটন ও হানসার ৩১ ডিসেম্বরের সব অনুষ্ঠান বাতিল

১১

বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক : ডা. তাহের

১২

খালেদা জিয়ার জানাজায় নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা

১৩

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বিশ্বনেতাদের শোকবার্তা

১৪

যে পথে সংসদ ভবনে যাবে খালেদা জিয়ার লাশবাহী কনভয়

১৫

খালেদা জিয়া ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন : সমমনা জোট

১৬

বুধবার সাধারণ ছুটি যারা পাবেন না

১৭

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বরিশালে কোরআন খতম ও দোয়া

১৮

বালু উত্তোলনের সময় ৫৭টি ড্রেজারসহ গ্রেপ্তার ২০

১৯

যশোরে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি পাঁচ দলের ৬ প্রার্থী

২০
X