মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৪৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

প্রচারণার পেরেকে ‘রক্তাক্ত’ শতবর্ষী গাছের শরীর

শতবর্ষী আমগাছে চৌদ্দটি ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। ছবি : কালবেলা
শতবর্ষী আমগাছে চৌদ্দটি ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে। ছবি : কালবেলা

কে শুনবে গাছের বোবা কান্না? গাছেরও জীবন আছে সেটা ভুলে গেছে অনেকে। গাছে গাছে পেরেক ঢুকিয়ে হরহামেশাই চলছে বিভিন্ন পণ্য, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির বিজ্ঞাপন বা প্রচার-প্রচারণা। সড়কের পাশে বেড়ে ওঠা গাছগুলো মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু হলেও এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রচারের অবলম্বন হয়েছে। বিজ্ঞাপন আর রাজনৈতিক ফেস্টুন ছেয়ে গেছে বোবা গাছগুলোতে। একটি শতবর্ষী আমগাছে চৌদ্দটি ফেস্টুন। সবার ওপরে মনোনয়নপ্রত্যাশীর, এর নিচে লাগানো আরও কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর। আরও আছে সুন্নতে খতনা ও ডাক্তারের সিরিয়ালের প্রচারণার ফেস্টুন। সবকটি ফেস্টুনই সাঁটানো হয়েছে গাছে লোহার পেরেক মেরে।

আম গাছটি দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পরিষদের মূলফটকের সামনে রিহাম হোটেলের সম্মুখে। গাছে এমন পেরেক মেরে ফেস্টুন টাঙানোর চিত্র এ উপজেলায় হরহামেশাই চোখে পড়ে। প্রচারণার পেরেক ঠুকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় গাছের দেহ। বৃক্ষপ্রেমীরা বলছেন, যে গাছ শীতল ছায়া দেয়, সে গাছে লোহার পেরেক মারা নিষ্ঠুরতার শামিল।

পুরাতন বাসস্ট্যান্ড (বর্তমানে টেম্পু স্ট্যান্ড) আরেকটি আমগাছে জমি বিক্রয়, গ্রাম বিকাশ এ দিকে, মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ আরও ১১টি ফেস্টুন লাগানো। আর একটু এগিয়ে গেলেই দেখা যায় আরেকটি গাছে ডাক্তার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা। গাছগুলো যেন একেকটা জীবন্ত বিজ্ঞাপন বোর্ড।

দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এমন ফেস্টুন দেখছেন অনেকেই। তারা অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অনুভব করছেন বোবা গাছগুলোর ভিতরের চাপা কান্না। এমনি এক দাঁড়িয়ে থাকা পথিকের সঙ্গে শুরু হয় আলাপচারিতা। তিনি পেশায় শিক্ষক।

আবু হাতেম নামে এ শিক্ষক বলেন, যে গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, সেই গাছেরই ক্ষতি করা হচ্ছে। তা-ও আবার শিক্ষিত সমাজ এটা করছেন। উপজেলার প্রায় গাছেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পেরেক মারা ফেস্টুন দেখা যায়।

সোহেল আরমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এমন এক শিক্ষিত জাতি, যে জাতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রচারণা করছি গাছে পেরেক মেরে। বোবা এই গাছগুলোর কষ্ট তারা যদি বুঝত, তাহলে এ ধরনের অমানবিক কাজ করতে পারত না কখনোই।

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জীববিজ্ঞানের প্রভাষকরা জানান, ‘গাছেরও মানুষের মতো প্রাণ আছে। মানুষকে আঘাত করলে যেমন ক্ষতের সৃষ্টি হয়, আঘাত পায়, গাছও তেমন আঘাত পায়, শরীরে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গাছে পেরেক (লোহার কাঁটা) মেরে পোস্টার-ফেস্টুন সাঁটানো হলে গাছে ছিদ্র হয়। ওই ছিদ্র দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক ও অণুজীব গাছে প্রবেশ করে। গাছের পরিবহন সিস্টেম দুটি একটি হলো জাইলেম আরেকটি হলো ফ্লোয়েম। পানির সঙ্গে দ্রবীভূত হলে খনিজ লবণও জাইলেম টিস্যুর মাধ্যমে গাছের ওপরের দিকে পানি প্রবাহিত হয়। যদি গাছে পেরেক মারা হয়, তাহলে ফ্লোয়েম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে গাছ পুষ্টি সংকটে ভোগে।’

পরিবেশবীদরা মনে করেন, ‘যেকোনো জায়গায় মোট জনসংখ্যার ২৫ ভাগ গাছ বা বনভূমি থাকার দরকার। কিন্তু খানসামা উপজেলায় তা নেই। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পুরনো গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন করে গাছ রোপণ করা উচিত।’

২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হলেও যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার ফলে ক্রমশই বাড়ছে গাছে পেরেক ঠুকে বিজ্ঞাপন বোর্ড লাগানোর উৎসব। অবলীলায় গাছগুলো ছেয়ে গেছে বিজ্ঞাপন দিয়ে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, গাছে পেরেক মেরে প্রচারণা চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। খুব শিগগিরই অভিযান চালানো হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত নজরুল / ‘যদি ফোন বন্ধ থাকে, ধরে নিও আমি বেঁচে নেই’

টাইফয়েড টিকা নিয়ে জরুরি ৫ প্রশ্নের সমাধান

টি ব্যাগ দিয়ে তৈরি চা কি শরীরের জন্য নিরাপদ? কি বলছেন পুষ্টিবিদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় অভিযুক্তদের দায়মুক্তি নিয়ে যা বললেন আসিফ নজরুল 

দেশের এমবিবিএস শিক্ষায় সাইকিয়াট্রির গুরুত্ব কেন এত কম

ধানের শীষ নিয়ে টানাটানি কেন, প্রশ্ন মির্জা ফখরুলের

খাওয়া-দাওয়া কি সত্যিই সন্তান ধারণে প্রভাব ফেলে, কি বলছে গবেষণা

কলকাতায় মেসির সঙ্গে আসছেন নেইমার!

হলি রোজারি চার্চে বোমা হামলার ঘটনায় খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের নিন্দা 

নামাজ আদায় না করলে অন্য আমলগুলো কবুল হবে কি?

১০

দেশের সব বিমানবন্দরের জন্য জরুরি ১০ নির্দেশনা

১১

জনগণ আর কোনো স্বৈরাচারী সরকারকে দেখতে চায় না : আমান

১২

৪৯তম বিসিএসের প্রশ্নে শহীদ আবু সাঈদ, আলোচিত ‘আয়নাঘর’

১৩

যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর গাজায় আবারও ইসরায়েলি হামলা

১৪

জেহাদ স্মৃতিস্তম্ভে ছাত্রদলের শ্রদ্ধা

১৫

গ্যাস বেলুন বিস্ফোরণ, সাতজন দগ্ধ

১৬

কোমর ব্যথা কমাতে ফিজিওথেরাপি

১৭

জুলাই সনদকে ইতিবাচকভাবে দেখছে বিএনপি : রিজভী

১৮

শান্তিতে নোবেল পাওয়া মাচাদোর রাজনৈতিক ইতিহাস

১৯

যে কারণে শান্তিতে নোবেল পেলেন মারিয়া

২০
X