মাঠে মাঠে বাতাসে দুলছে হলুদ ফুল। এ যেন বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। সবুজের মাথার ওপর হলুদের দোলা এ যেন আবহমান বাংলার চিরচেনা এক মনোমুগ্ধকর রূপ। কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার রবিশস্যের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এমনই দৃশ্য।
উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর রবি মৌসুমে এই উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় সরিষা চাষে প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে বেড়েছে আগ্রহ। কোথাও কোথাও আশানুরূপ না হলেও অধিকাংশ জমিতেই সরিষার হলুদ হাসিতে এবছর আকৃষ্ট কৃষকরা। সরিষার হলুদ হাসিতে দোল খাচ্ছে কৃষকের মনে লালিত স্বপ্ন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে, তাই ফলন ভালো হবে বলেও আশা করছেন কৃষকরা। কোথাও কোথাও সবেমাত্র গজিয়ে উঠেছে চারা। এসব সরিষা ক্ষেত পরিচর্যা ও আগাছামুক্ত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। এদিকে উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের শশীদল দক্ষিণ পাড়া এলাকার চাষি ফিরোজ মিয়ার সাথে আলাপ হয়। তিনি জানান, সরিষার আবাদ অন্যান্য ফসলের আবাদের চেয়ে লাভজনক। সরিষার আবাদে তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। সময়ও কম লাগে, শ্রমও কম দিতে হয়। জমিতে সরিষা লাগানোর পর তেমন একটা সেচ দিতে হয় না। আর ভালো ফলন হলে এক বিঘা জমি থেকে ৬-৭ মণের মতো সরিষা পাওয়া সম্ভব। এ বছর ফলন ভালো হবে বলে মনে করছেন তিনি।
আরেক চাষি নূরুল ইসলাম জানান, একসময় এই অঞ্চলে অনেক জমিতে সরিষাসহ রবিশস্যের আবাদ করা হতো। বোরোধান আবাদের কারণে রবিশস্যের অনেকটা কমে এসেছে। আমি প্রতি রবি মৌসুমে সরিষার আবাদ করি। এ বছর ২৮ শতক জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসল ভালোমতো বেড়ে উঠছে। আশা করছি এ বছর ফলনও ভালো পাব।
সরিষা চাষ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, আগে আমন ধান ঘরে তোলার পর বোরো আবাদের আগে দুই মাসেরও বেশি সময় জমি পড়ে থাকতো। আমন এবং বোরোর মাঝামাঝি স্বল্প জীবনকালের ও উচ্চ ফলনশীল এই সরিষার আবাদে কৃষকরা একটি বাড়তি ফসল ঘরে তুলতে পারবেন। এক্ষেত্রে ধানের উৎপাদন না কমিয়েই বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষের ফলে দেশের কৃষিখাত উপকৃত হচ্ছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা করেছি। সরিষা চাষে এবং ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল গ্রহণের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সরিষা চাষে কৃষকদের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করা হয়েছে। কৃষকরাও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এ উপজেলায় সরিষা আবাদ বৃদ্ধির জন্য প্রণোদনা, ফলোআপ ও অন্যান্য সহায়তার মাধ্যমে প্রায় ১২০০ কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের সরিষা বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও আশানুরূপ হবে। সারা দেশে সরিষার আবাদ বাড়লে ভোজ্যতেলর আমাদানি নির্ভরতা কমে যাবে।
মন্তব্য করুন