বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য নাসরিন জাহান রত্না জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি ঋণ দেখান ২৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৮২২ টাকা। নির্বাচনের হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় উল্লেখ করা হয়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় তিনি ঋণ দেখিয়েছিলেন আট কোটি ৫৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাত কোটি টাকা তিনি ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে এবং বাকি ঋণ তার স্বামীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাসরিন জাহান তার ঋণ দেখান ১৫৪ কোটি ৯৯ লাখ ৩৫ হাজার ৩৯৯ টাকা। ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে তিনি ঋণ নেন ১১ কোটি ৮৮ লাখ ৯১ হাজার ৭৮৯ টাকা।
আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে তিনি ঋণ নেন ১৪১ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ৬১০ টাকা এবং বাকি ঋণ তিনি স্বামীর কাছ থেকে নেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণ দেখান ২৬৬ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার ৮২২ টাকা। ইউসিবিএল ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে তিনি ঋণ নেন ১৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬২ হাজার ১৯৪ টাকা। আইএফআইসি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে তিনি ঋণ গ্রহণ করেন ২৪৯ কোটি ২৪ লাখ আট হাজার ৬২৮ টাকা এবং বাকি এক কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ তিনি স্বামীর কাছ থেকে নেন।
নাসরিন জাহান রত্নার হলফনামায় দেখা যায়, বার্ষিক আয় পূর্বের তুলনায় প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাসরিন জাহান বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৭ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৫ টাকা। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বার্ষিক আয় দেখান ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫৯৬ টাকা। যা পূর্বের আয়ের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাসরিন জাহান তার বার্ষিকী আয় দেখিয়েছেন ৩০ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাসরিন জাহান রত্না কৃষি থেকে তার আয় দেখিয়েছেন ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৮০০ টাকা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কৃষি থেকে তার কোনো আয় দেখানো হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫০ টাকা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ব্যবসা থেকে কোনো আয় দেখাননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য বার্ষিক বেতন ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকা দেখালেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় সংসদ সদস্য হিসেবে তার বেতন দেখিয়েছেন বার্ষিক ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অন্যান্য আয় দেখিয়েছেন ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অন্যান্য আয় দেখান ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বাবদ তিনি আয় দেখিয়েছেন ৫৫ হাজার ৩৭ টাকা, যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার ছিল না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রত্নার নগদ আয় ও ব্যাংক জমা কমেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নাসরিন জাহানের নগদ ও ব্যাংক জমা ছিল ৬৫ লাখ ২৭ হাজার ১৬২ টাকা। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নগদ ও ব্যাংকে জমা দেখানো হয় ৫১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৫ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার সঞ্চয়পত্র ছিল এক কোটি ৫০ লাখ ১৫ হাজার টাকার। এবার তিনি সঞ্চয়পত্র দেখিয়েছেন চার লাখ ৪৭ হাজার ৩১ টাকা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বন্ড ও শেয়ার দেখিয়েছেন এক কোটি ৫০ লাখ ১৫ হাজার টাকার। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দুটি গাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ২৬ লাখ ৮৫ হাজার ১৩১ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দুটি গাড়ির মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৪৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬৩০ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র দেখিয়েছেন ৫০ হাজার টাকার। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ইলেকট্রনিক সামগ্রী দেখান চার লাখ ৫০ টাকার এবং আসবাবপত্র দেখিয়েছেন সাড়ে চার লাখ টাকার। রত্না কৃষিজমি দেখিয়েছেন ১৬৫ শতাংশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার কোনো কৃষি জমি নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অকৃষি জমি দেখিয়েছেন সাড়ে সাত কাঠা। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অকৃষি জমি দেখাননি। কিন্তু সেই ঘরে ৭৯ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪২ টাকা উল্লেখ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হলফনামায় তিনি বাকেরগঞ্জের ১০ লাখ টাকা মূল্যের একটি বসতভিটা ও পৈতৃক সূত্রে একটি ফ্ল্যাট দেখিয়েছেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তিনি বাকেরগঞ্জের বসতভিটার বিষয়টি উল্লেখ করেননি। লিখেছেন দালান, ১০ লাখ টাকা বাড়ি পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি স্বর্ণ দেখিয়েছেন ১০০ ভরি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি উল্লেখ করেছেন স্বর্ণ ১০০ তোলা।
মন্তব্য করুন