ঝালকাঠির রাজাপুরে আট বছর প্রেম করে বিয়ে করতে না পারায় ও প্রেমিকার বাবা ভাইয়ের বেধড়ক মারধরের ১ দিন পর বিচার না পেয়ে, মানুষের নানা রকম অপমান সইতে না পেরে বিষ পান করে আত্মহত্যা করেছে মো. নাইম (২৩) নামে এক যুবক। বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে রোববার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে স্বজনরা। রোববার বিকেলে নাইমের লাশ বাড়িতে আসলে জানাজা শেষে স্বজনরা ও এলাকাবাসী নাইমের লাশ নিয়ে হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ জানান। প্রেমিক ফারজানা তার বাবা ফারুক ও তার ভাই ফয়সালকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
কান্না জড়িত কণ্ঠে নিহত নাইমের পিতা মো. ছিদ্দিক মৃধা বলেন, আমার ছেলে নাইমকে বুধবার রাতে ফারুক হাওলাদারের মেয়ে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে তার কাছে যেতে বলে। সেখানে গেলে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ফারুক ও তার ছেলে নাইমকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করে এবং আমার ঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে লোকজন নাইমকে নিয়ে নানা রকম কথা বলে। সেই অপমান সইতে না পেরে আমার ছেলে শুক্রবার রাতে বিষপান করে। বরিশালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মারা যায় নাইম। এ ঘটনার আমি বিচার চাই।
সিঙ্গাপুর প্রবাসী নাইম রাজাপুর উপজেলার বারবাকপুর এলাকার ছিদ্দিক মৃধার ছেলে। তিনি শুক্রবার রাতে বিষপান করলে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা বেগতিক হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাইমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মৃত্যু হয় তার। নাইমের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে ফারজানাসহ তার পরিবার সবাই আত্মগোপনে রয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাতে বিষপানের আগে নাইম তার ব্যবহৃত রোহান মৃধা নামে ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আমি একটা জবানবন্দি দিয়েছিলাম সাংবাদিকদের কাছে। ওইটা যখন দিয়েছিলাম তখন আমি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিলাম। ওই ভিডিও রেকর্ড সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মৃত্যুতে যদি কোনো মামলা হয় তাহলে আমি চাই মামলাটা আমার নামে হোক।’
কিছুক্ষণ পর আরেকটি পোস্ট দিয়ে লেখেন, ‘সম্ভব হলে সবাই আমাকে মাফ করে দিয়েন। আমিও বাঁচতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি অনেক ক্লান্ত, আর সম্ভব না বাঁচা।’
রোহান মৃধা নামের ফেসবুক আইডিটি নাইমের বলে নিশ্চিত করেছেন নাইমের চাচাতো ভাই ইসমাইল মৃধা।
তবে নাইমের দুলাভাই ইকবাল হোসেন বলেন, নাইমকে যখন রাজাপুর হাসপাতালে ওয়াশ করাই তখন ওই আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। তখন নাইম অসুস্থ। সে কীভাবে ফেসবুকে পোস্ট করে? ওই পোস্ট নাইম করেনি। তার প্রেমিক ফারজানা করেছে। নাইমের ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড ফারজানার কাছে ছিল। ফারজানার সঙ্গে নাইমের ২০১৫ সাল থেকে প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে ফারজানাকে তার পরিবার ২০১৭ সালে বিয়ে দেয়। ওর বিয়ের পর নাইমকে প্রবাসে (সিঙ্গাপুর) পাঠাই। সেখানে যাওয়ার পরেও ফারজানা নাইমের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বিভিন্ন সময় ওর কাছ থেকে টাকা পয়সা আনে ফারজানা। নাইম দেশে আসার সময় ফারজানার জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসে। বাড়িতে এসে ওরে সেইগুলো এবং ওর পছন্দ মতো আরও বিভিন্ন জিনিসপত্র কিনে দেয়। নাইমের মৃত্যুর পর দিন ফারজানার ঘর থেকে সব কিছু বস্তুা ভরে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে নাতে এলাকাবাসী দুজন মহিলাকে আটক করে।
এ বিষয়ে সব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত প্রেমিকার ভাই মো. ফয়সাল বলেন, নাইম রাতে ফারজানার রুমের জানলার কাছে আসছে এরপর ওরে কয়টা চড়থাপ্পড় দিছি। এ ছাড়া বেশি কিছু করিনি। উল্টো আমাদের ফাঁসানোর জন্য ইকবাল ঘরে আগুন দিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিবে বলে হুমকি দিছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফারুক হাওলাদার জানান, বুধবার রাতে নাইম আমাদের ঘরের জানালার পাশে আসে। টের পেয়ে আমার ছেলে ফয়সাল ঘরের বাইরে এসে নাইমকে এখানে আসার কারণ জানতে চেয়ে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে তার শরীরে আঘাত করে। আমরা বাইরে ডাক-চিৎকার শুনতে পেয়ে বাইরে এসে আমার ছেলেকে থামিয়ে দেই। এবং নাইমের কাছে আমার মেয়েকে ডিস্টার্ব করার কারণ জানতে চাই। পরে নাইমের দুলাভাই ইকবালকে খবর দিলে সে এসেই কোনো কথা না শুনে আমাকে মারধর শুরু করে। এ ঘটনায় আমি বৃহস্পতিবার রাজাপুর থানায় অভিযোগ দিই।
রাজাপুর থানার ওসি মু. আতাউর রহমান জানান, এ ঘটনায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন