সিরাজগঞ্জের তাড়াশে পৌষের শুরুতেই ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে বোরো ধানের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন কৃষকরা। মাঠে মাঠে বোনা ও রোপা আমন ধান কাটা এবং মাড়াইয়ের কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এসব জমিতে সরিষার আবাদ না হওয়ায় ফসলি জমিতে চলছে আগাম জাতের বোরো আবাদের প্রস্তুতি।
জানা গেছে, কৃষকরা এখন জমি তৈরি, বীজতলা পরিচর্যা ও চারা বীজ বপনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু ঘন কুয়াশা ও প্রচণ্ড ঠান্ডায় বীজতলার ক্ষতি হতে পারে, এমন আশঙ্কায় কৃষকরা। ফলে বীজতলায় চারা বাঁচাতে নানা উপায় বের করছেন তারা।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় এবার ১ হাজার ২০৫ হেক্টর জমিতে বোরোর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, যা দিয়ে ২২ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা সম্ভব হতো। কিন্তু টানা শীত আর ঘন কুয়াশায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ঠান্ডা থেকে বীজতলার চারা রক্ষা করতে পলিথিন ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কুয়াশায় বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। শীতের কবল থেকে রক্ষা করতে শত শত বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যারা পলিথিন দিতে পারেননি, তারা খড় দিয়ে ঢেকে রাখছেন। কেউবা বীজতলায় ছাই ছিটিয়ে তা রক্ষার চেষ্টা করছেন।
পেঙ্গুয়ারি গ্রামের কৃষক মোতাহার আলী বলেন, বিকেলের পর থেকে কুয়াশা পড়া শুরু হয়। আর রাতে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় বীজতলা। এতে চারার ক্ষতি হতে পারে। তাই সারাদিন পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখি। আবার রাতে বীজতলায় পানি দিয়ে রাখতে হয়। সকাল হলে সেই পানি বীজতলা থেকে বের করে দিতে হয়। এভাবে ১০ থেকে ১২ দিন করতে হয়। চারা একটু বড় হলে তখন আর এরকম করতে হবে না।
তালম ইউপির পাড়িল গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ সরকার বলেন, ধানের বীজতলার অর্ধেকই শীত ও কুয়াশার কারণে মরে যাচ্ছে। কৃষকরা বীজতলা রক্ষায় ব্যাভিস্টিন, স্কোর, ডুডু, থিওভিটসহ বিভিন্ন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন। এতে চারা কিছুটা হলেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে।
আরেক কৃষক বিমল কর্মকার বলেন, শীত বাড়ার আগেই বীজতলায় বীজ বপন করলে ধানের অধিক চারা গজায়। শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতি অনুসরণ না করলে বীজতলার চারা হলুদ কিংবা সাদা বর্ণ হয়ে যায়। আর কয়েকদিন পর তা নষ্টও হয়ে যায়।
তবে তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তালম ইউনিয়নের ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান সুমন জানান, শীত ও কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা বিবর্ণ হয়ে যায়। এ দরনের আবহাওয়া থাকলে প্রতি শতকে ৩ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। এর পরও যদি কাজ না হয় তাহলে প্রতি শতকে ৮ গ্রাম হারে জিপসাম সার দিলে বিবর্ণ হওয়া কেটে যাবে। প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা করে রোদ পাওয়া গেলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, জমি কাদা না করে শুকনা বীজতলা তৈরি করে বীজ বপন করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। আবার অনেকে শীত ও কুয়াশা থেকে বীজতলা রক্ষায় পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। এটা আধুনিক প্রযুক্তি। এতে ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম।
মন্তব্য করুন