রংপুরের পীরগাছায় পানি নিষ্কাশনের পথে মৎস্য খামার দিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এতে করে বর্ষা মৌসুমে পানি নামতে পারছে না। ফলে বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকছে প্রায় ১০ হাজার একর কৃষিজমি। এতে করে প্রায় ১০ বছর ধরে ১০টি গ্রামের ৭০০ থেকে ৮০০ কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যে জমিতে বছরে ২ থেকে ৩ বার ফসল ফলাতেন কৃষকরা, সেই জমিতে শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে একবার আবাদ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
এ ঘটনায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও অজানা কারণে সঠিক প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী সাধারণ কৃষকরা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপাড়া, জামিরজান, দিলালপাড়া, চৌধুরানী, নজরমামুদ, সাকোয়ার ব্রীজ, ঠেটাপাড়া, পয়াগাড়ি, সুবিদ ও ইছলা গ্রামের ৭০০ থেকে ৮০০ কৃষক ৩০ হাজার একর জমির মধ্যে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে গত ১০ বছর ধরে একবারের বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। ১০ বছর আগে এসব গ্রামের পাশে পানির প্রবাহের বিকল্প ব্যবস্থা না করে অপরিকল্পিতভাবে প্রায় ১০-১৫ জন ব্যক্তি মৎস্য খামার গড়ে তোলেন। স্থানীয় প্রভাবশালী বাবলু মিয়া নামের এক ব্যক্তি রেললাইনের ধারে সরকারি জমিতে এবং সাকোয়ার ব্রিজ এলাকার কয়েকজন মৎস্য চাষী ব্রীজের দুই পাশে ৮ থেকে ১০টি খামার দিয়ে ওই গ্রামগুলোর পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছেন। এতে করে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে বছরের বেশির ভাগ সময় জমিগুলো পানির নিচে ডুবে থাকছে।
সরেজমিনে ওইসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এই শুকনো মৌসুমেও জমিগুলোতে এখনো হাটু পানি জমে রয়েছে। কোথাও কোথাও কোমর পানি রয়েছে।
স্থানীয় কৃষক শহিদুল ইসলাম, মশিউর রহমান, আসাদুল হক, নুরুল ইসলাম, মাহবুব কালবেলাকে বলেন, এসব জমিতে বছরে ২ থেকে ৩ বার ফসল উৎপাদন হত। এখন বোরো ছাড়া কোনো আবাদ হয় না। প্রায় সারাবছর জলাবদ্ধতা থাকে। বর্ষাকালে এসব জমিতে এক বুক পানি জমে। আশেপাশের বাড়িঘর ও রেললাইনেও পানি উঠে পড়ে। মাত্র ১০-১৫ জন ব্যক্তি মৎস্য খামার দিয়ে ৮ শতাধিক কৃষকের সর্বনাশ করছে। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আমরা আর্থিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চালাতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
বাদল মিয়া নামে আরেক কৃষক বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিদের্শনা দিয়েছেন যে এক টুকরো জমিও যেন খালি পড়ে না থাকে। সেখানে আমাদের হাজার হাজার একর জমি আজ পানির নিচে। এখানে একটি নালা ছিল। সেই নালাটি বন্ধ করে মৎস্য চাষ করার কারণে মূলত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন এই জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত এক মৎস্য খামারী বাবলু মিয়ার বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তিনি ব্যস্ততার অজুহাতে কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
স্থানীয় কৈকুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আলম মিয়া কালবেলাকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কয়েকবার বৈঠক করা হলেও প্রভাবশালীরা মানছেন না। প্রশাসনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এটির সমাধান হতে পারে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজমুল হক সুমন কালবেলাকে বলেন, কৃষকদের অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কৃষি অফিসার ও স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারপর আমরা আলোচনা করে একটা সমাধানে আসব।
মন্তব্য করুন