নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় তিন ইউনিয়ন পরিষদের আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন সব প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকগণ। পোস্টার, ব্যানারে ছেঁয়ে গেছে ইউনিয়নের হাট-বাজার, বাসাবাড়ির অলিগলি। প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকেরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঘুরছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। মিছিল, মিটিং, পথসভা, উঠান বৈঠকে গণসংযোগ চলছে সমানতালে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, উপজেলার তিন ইউনিয়ন পরিষদে বিভিন্ন প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন ১৩৯ জনপ্রার্থী। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ১৬ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৩২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৯১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইউনিয়ন পরিষদগুলো হলো- খগাখড়িবাড়ি, গয়াবাড়ি এবং টেপাখরিবাড়ি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন ইউনিয়নের হাট-বাজার, অলিগলি ও চায়ের দোকানে চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। প্রার্থীরা অটোরিকশা, ইজিবাইক বা রিকশা-ভ্যানে মাইক দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের খগারহাট এলাকার হজরত আলী নামে এক ভোটার বলেন, ভোট এলে প্রার্থীদের আনাগোনা এবং দৌড়ঝাঁপের কমতি থাকে না। ভোট শেষ হলে আর তাদের দেখা পাওয়া যায় না।
একই এলাকার খোরশেদ মিয়া বলেন, অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত হন, কিন্তু আমাদের উন্নয়ন হয় না। এবার আমরা সঠিক মানুষকেই ভোটের মাধ্যমে বেছে নিব।
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন (মোটরসাইকেল), রফিকুল ইসলাম (আনারস), জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) এবং চশমা প্রতীকে লড়ছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন।
চশমা প্রতীকের প্রার্থী রবিউল ইসলাম লিথন এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জানান, এলাকাবাসীর যে ভালোবাসা পাচ্ছেন তাতে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ভোটারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূলত এখানে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো সাবেক চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন (চশমা) ভোটের মাঠে এগিয়ে রয়েছেন বলে অনেকে জানান।
এদিকে গয়াবাড়ি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আমজাদ হোসেন সরকার। বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন আনোয়ারুল হক সরকার লেবু (ঘোড়া), গতবার নৌকা মার্কার প্রার্থী ছিলেন শরীফ ইবনে ফায়সাল মুন (আনারস)। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল হক (অটোরিকশা), কাজী রোকনুজ্জামান বকুল (মোটরসাইকেল), লুৎফর রহমান (টেবিল ফ্যান) এবং কামরুজ্জামান (চশমা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এখানে কিছুটা আঞ্চলিকতার প্রভাব থাকায় নিজ এলাকার ভোট নিয়ে তিনজন প্রার্থীই তাদের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তবে ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজন প্রার্থী থাকায় শরীফ ইবনে ফায়সাল মুনের আনারস প্রতীকের অবস্থা ভালো রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
শতভাগ বিজয়ের আশাবাদী টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী রবিউল ইসলাম শাহীন (আনারস)। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত।
পক্ষান্তরে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক (চশমা) বলেন, বিগত সময়ে এই চরাঞ্চলসহ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডেই উন্নয়নের যে ছোঁয়া লেগেছে তা দেখে যে কেউ ঈর্ষান্বিত হবে। এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে হলে মানুষ আমাকেই ভোট দিবে। এটা আমার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন রফিকুল ইসলাম। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে গতবার নৌকা মার্কার বিজয়ী চেয়ারম্যান ময়নুল হক (চশমা) ও হারুন অর রশিদ (ঘোড়া) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবছার আলী (মোটরসাইকেল), রবিউল ইসলাম শাহীন (আনারস) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। হাট-বাজার ও চা স্টলে ভোটারের মুখে মুখে স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল ইসলাম শাহীন (আনারস) ও সাবেক চেয়ারম্যান ময়নুল হকের (চশমা) মধ্যে নির্বাচনী লড়াই হবে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
তিন ইউনিয়নে মোট ভোটার ৫০ হাজার ৪৯৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৫ হাজার ৩৮০ এবং মহিলা ভোটার ২৫ হাজার ১১৭ জন। আগামী ১৭ জুলাই রোববার ২৭টি ভোটকেন্দ্রের ১৬০টি ভোটকক্ষে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এসব বিষয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার এবং আসন্ন ডিমলা উপজেলার তিন ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনসম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে প্রচার চালাতে সব প্রার্থীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে সব প্রার্থী আচরণবিধি মেনে সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণে সহায়তা করবেন বলে আশাবাদী।
মন্তব্য করুন