আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালাও পোড়াও মানুষ খুন এটাই বিএনপির একমাত্র গুণ। তারা ক্ষমতায় আসলে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য তারা ২০১৩ সালে সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস করে ৩ হাজার মানুষকে আগুনে পুড়িয়েছিল। তাদের মধ্যে ৫০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। ৩৮০০ যানবাহন, বাস, ট্রাক, ট্রেন, সিএনজি, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেও তারা আগুন দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় ফতুল্লার ইসদাইরে অবস্থিত এ কে এম শামশুজ্জোহা স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগ এককভাবে নৌকা মার্কায় ২৩৩ টি আসনে জয় লাভ করেছিল। পক্ষান্তরে বিএনপি ও তাদের ২০ দলীয় জোট পেয়েছিল ৩০টি আসন। বাকিগুলো আমাদের মহাজোটের দলগুলো পেয়েছিল। তারপর থেকেই তারা পরাজয়ের ভয়ে নির্বাচনে আসতে চায় না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭১ সালের পর জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন সময় পেয়েছিল। এই অল্প সময়ের মধ্যেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতীর পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে এদেশে তারা আবারও অরাজকতা সৃষ্টি করেছিল। আমরা দুই বোন বেঁচে থেকে দেশে আসতে পারিনি। স্বজনদের হারিয়ে রিফিউজি হয়ে বিদেশের মাটিতে থাকতে হয়েছে। পরে ১৯৮১ সালে আমি দেশে ফিরে এসে আমার আপনজনদের কাউকেই পাইনি। বাংলাদেশের জনগণকেই আপনজন হিসেবে মেনে নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা সরকারে আসার আগে বিএনপির আমলে ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আমরা এসে ঘাটতি কাটিয়ে আরও ২৬ লাখ টন খাদ্য রিজার্ভ রাখি। আমরাই প্রথম বেসরকারিভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তুলি। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ দেশের মানুষের মাথা পিছু আয় বৃদ্ধি, রাস্তা ঘাট, স্কুল-কলেজ হাসপাতাল, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা সেতুসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বছরের প্রথম দিনেই দেশের সকল প্রাথমিক এবং পর্যায় শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। সারা দেশকে ভূমিহীন মুক্ত করার লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩৩টি জেলাকে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বয়স্ক ভাতা মা ও শিশুসহ প্রায় ৮৪ লাখ সুবিধাভোগী ভাতা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, কোভিড ১৯ ও রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। তারপরও ৫ কোটি পরিবারকে আমরা টিসিবি কার্ডের আওতায় এনেছি। এই নারায়ণগঞ্জের সদর-বন্দর আসনে নাসিম ওসমান সেতু, কাঁচপুর ২য় সেতু, মেঘনা গোমতি সেতু, গাজী সেতু, সুলতানা কামাল সেতুসহ ৫টি বড় সেতু এবং যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের মহাসড়ক, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৪ লেনের মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জের মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ৩০০ সয্যা থেকে ৫০০ শয্যা হাসপাতালে রূপান্তর, সামসুজ্জোহা সড়কসহ অসংখ্য উন্নয়নমূলক কাজ শেষ করেছি।
নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে মেট্রোরেলের ৩টি লাইন স্থাপন করা হবে। এই নারায়ণগঞ্জ হবে স্মার্ট সিটি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী, সিটি মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী কায়সার হাসনাত, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি উপজেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী শেখ হাসিনা শেখ হাসিনা বলে স্লোগান দিয়ে দলে দলে সমাবেশে যোগ দেন।
মন্তব্য করুন