শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম
আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

চড়া দামেও মিলছে না খেজুরের রস

শরীয়তপুরে শীতের সকালে হাঁড়িতে খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গ্রামের গাছি। ছবি : কালবেলা
শরীয়তপুরে শীতের সকালে হাঁড়িতে খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন গ্রামের গাছি। ছবি : কালবেলা

দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা, চড়া দামেও মিলছে না খেজুরের সুস্বাদু রস। শীতের কুয়াশা মাখা ভোরে চাদর গায়ে জড়িয়ে গ্রামের বাড়ির চুলার পাশে বসে রসের পিঠাপায়েস খাওয়ার মজাই আলাদা। গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্য আজ যেন আমরা হারাতে বসেছি।

সময়ের প্রয়োজনে, নগরায়ণের জন্য কেটে ফেলা হচ্ছে হাজার হাজার খেজুর গাছ। গাছ কমে যাওয়ার কারণে গ্রামীণ জনপদ থেকে হারিয়ে যেতে শুরু করছে খেজুরের রসও। কিছু কিছু এলাকায় অল্পকিছু গাছ থাকলেও রসের সংগ্রহ কম হওয়ায় চড়া দাম দিয়েও কেনা যাচ্ছে না খেজুরের রস। ছোট এক হাঁড়ি রস কিনতে ৫০০ টাকা গুনতে হয় ক্রেতাদের। ৬০০ টাকা দিয়ে সাথে সাথে রস পাওয়া যায় না, ক্রেতাকে সিরিয়াল দিয়ে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করে রস সংগ্রহ করতে হয়। মনে হয় এই তো সেদিনের স্মৃতিচারণ। গ্রামীণ মেঠো পথের বাঁকে বাঁকে সারিবদ্ধ হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত খেজুরের গাছ। শীতের আগমনী বার্তার সাথে সাথে গাছি তার ধারালো দা দিয়ে শৈল্পিকভাবে খেজুর গাছের মাথা ছেঁটে বাঁশের নল ঢুকিয়ে খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে যেত। কিন্তু আজ মাইলের পর মাইল হেঁটেও দেখা মেলে না খেজুর গাছের।

মানুষের প্রয়োজনে ও ইটের ভাটার জ্বালানির জোগান দিতে কেটে ফেলা হয়েছে অসংখ্য খেজুর গাছ।

শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা ও গোসাইরহাট উপজেলার নদীর তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিল সারি সারি খেজুর গাছ। এ গাছগুলো থেকে প্রতিদিন শীতের সকালে হাজার হাজার হাঁড়ি রস সংগ্রহ করতেন গ্রামের গাছিরা। নির্বিচারে গাছ নিধনের ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা। এ ছাড়াও জেলার বেশির ভাগ ইটের ভাটাগুলোতে লুকিয়ে লুকিয়ে খেজুর গাছগুলোকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। এক সময় এ গাছগুলো আমাদের পরিবেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের দাদপুর এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে চাচাকে রস সংগ্রহ করতে দেখতাম। চাচার সাথে আমি ও আমার চাচাতো ভাইয়েরা মিলে রস বাড়িতে নিয়ে আসতাম। কেউ কেউ কাঁচা রস মজা করে খেতো আবার কেউ জ্বালিয়ে খেতো। মা-চাচিরা রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরি করতেন। ঝোলা গুড়ের গন্ধে সারা বাড়ি মৌ মৌ করত। এখন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রসের দেখাই মিলছে না। চাচাতো ভাই জামাল ২০টা গাছ কাটে তাতে ২-৩ হাঁড়ি রস হয়। সেই রস নিয়ে আত্মীয়-স্বজনরা লড়াই করে কে আগে নেবে।

ডামুড্যা উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গাছি সোরাব মৃধা কালবেলাকে বলেন, আগের মতো সেই গাছ আর নাই। তাছাড়া যে কয়টা গাছ আছে সেগুলোতে তেমন একটা রস হয় না। আমি রাস্তার পাশে ছোট বড় মিলিয়ে ৩০টা গাছ কাটি। কোনো দিন তিন হাঁড়ি রস পাই আবার কোনো দিন চার হাঁড়িও পাই। কোনো দিন এক হাঁড়িও পাই না। কারণ রাতের বেলায় চোরেরা নিয়ে যায়। তাই এ শীতের মধ্যে নারা কুটা বিছিয়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে রস পাহারা দেই। এ রকম কষ্ট করে রস সংগ্রহ করে মানুষের কাছে বিক্রি করি। ছোট হাঁড়ি ৪০০ আর বড় হাঁড়ি ৬০০ টাকা। তবে আমার রস কিনতে হলে সাত দিন আগে থেকে সিরিয়াল দিতে হয় তা না হলে আমি রস দিতে পারি না।

সিড্যা ইউনিয়নের কাইচকুড়ি গ্রামের সৌদি প্রবাসী মোক্তার হোসেন কালবেলাকে বলেন, তিন বছর পর বাংলাদেশে এসেছি। শীতকে সামনে করে এলাম রস খাব বলে। কিন্তু রস সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখি বিশাল সিরিয়াল তিন হাঁড়ি রস ১৮০০ টাকা অগ্রিম দাম দিয়ে ১৫ দিন অপেক্ষা করতে হবে।

ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. দুলাল মাদবর কালবেলাকে বলেন, আমরা আগে তাফাল ভর্তি করে রস জ্বাল দিতাম। সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করে মাটির কলসি ভরে রাখতাম। এরপর হাটের দিনে বাজারে বিক্রি করতাম। বিভিন্ন রকম পিঠা পায়েস তৈরি করে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। এখন সেই রসও নাই আর গুড়ও নাই। সবকিছু শুধুই স্মৃতি।

চিকন্দী এলাকার আলী আকবর বলেন, মানুষ তার নিজের বসবাসের জন্য গাছগুলো কেটে ফেলছে। গাছ কাটার তালিকায় প্রথম থাকে খেজুর গাছ। কিছু অসাধু গাছ ব্যবসায়ী খেজুর গাছগুলো কিনে নিয়ে চড়া দামে ইট ভাটায় বিক্রি করে দেয়। এটা ঠেকাতে না পারলে অদূর ভবিষৎতে খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জনপ্রিয় ব্রিটিশ পত্রিকায় বাংলাদেশ নারী দলের প্রশংসা

ইউআরপি ও ডিএলআর মডিউল প্রস্তুত / মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাবে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে

রাশিয়া শক্তিশালী, এটা মেনে নিতেই হবে : ট্রাম্প

ময়মনসিংহ থেকে বাস চলাচল শুরু, ভাঙচুরের ঘটনায় কমিটি

আইপিএলে ভালো করলেও ভারত দলে জায়গা নিশ্চিত নয়

ফেব্রুয়ারির কত তারিখে রোজা শুরু হতে পারে 

দুই শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আহমাদুল্লাহর উদ্বেগ

সরকারি কর্মচারীরা দাফনের জন্য পাবেন টাকা

দেড় যুগেও নির্মাণ হয়নি জহির রায়হান মিলনায়তন

দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, দুই উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি

১০

৫ অভ্যাসে বার্ধক্যেও ভালো থাকবে হৎপিণ্ড

১১

অনশন প্রত্যাহার করল বেরোবি শিক্ষার্থীরা

১২

‘ভুল চিকিৎসায়’ একদিনে দুই শিশুর মৃত্যু

১৩

সরকারি কর্মচারীদের জন্য সুখবর

১৪

কাভার্ডভ্যানের চাপায় মা-মেয়ের মৃত্যু

১৫

মাস্ক পরে হাসপাতালে দীপু মনি

১৬

ছাত্র সংসদের দাবিতে ‘আমরণ অনশন’ ঘিরে বিভক্ত বেরোবির শিক্ষার্থীরা

১৭

বন্ধুত্ব চাইলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করুন : লায়ন ফারুক

১৮

গাজা সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করল মিসর

১৯

জাজিরা হাসপাতালে দুদকের অভিযান, অনিয়মে জর্জরিত স্বাস্থ্যসেবা

২০
X