তামাশার ছলে বড় চুল কাটতে বলায় মানুদাকান্ত লাহিড়ী নামের এক বৃদ্ধকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে দুই বখাটে ও তাদের বাবার বিরুদ্ধে। আহত বৃদ্ধ ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে আইসিইউতে ১০ দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে আছেন এবং এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি বলে জানা যায়।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের জামিরতা গুদিবাড়ি গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি কেউ। এদিকে বৃদ্ধ মানুদাকান্তকে মারপিট করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার সচেতন সমাজ।
জানা যায়, ঘটনার দিন জামিরতা গুদিবাড়ি গ্রামে একটি স্টলে চা পান করছিলেন মানুদাকান্ত লাহিড়ী। সেখানে এলাকার কয়েক তরুণ আড্ডা দিচ্ছিল এবং হাসি-তামাশা করছিল। এ সময় মানুদাকান্ত তামাশার ছলে তাদের বড় চুল কাটতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে একই গ্রামের মশিউর রহমানের বখাটে দুই ছেলে আবির রহমান ও নিবির রহমান তাদের বাবার কাছে অভিযোগ করে। এরপর ওই দিনই মশিউর মানুদাকান্তকে ফোনে বাড়িতে ডেকে আনেন। সে আসার সাথে সাথে বাবা ও তার দুই ছেলেসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজন তাকে বেধড়ক পেটায় এবং দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাস্তায় ফেলে রাখে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে শাহজাদপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে বগুড়া, পরে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করেন।
আহতের স্ত্রী শান্তনা লাহিড়ী জানান, তুচ্ছ ঘটনায় তার স্বামীকে মারপিট করা হয়েছে। এখন তিনি লাইফ সাপোর্টে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। গত ১০ দিনেও তার জ্ঞান ফেরেনি। আসামিদের হুমকি-ধমকিতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলে জানান তিনি।
এলাকাবাসীরা বলেন, আমাদের এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, যাকে মেরেছে তিনি অত্যন্ত নিরীহ ও ভালো লোক। তিনি বলেছিলেন নাতি এত বড় চুল রাখিস কেন? এতেই ক্ষেপে গিয়ে ফোন দিয়ে ডেকে এনে মারপিট করা হয়েছে। এ ঘটনার শক্ত বিচার হওয়া উচিত।
কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছি। এটা ন্যক্করজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা।
শাহজাদপুর পৌর পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানিক সরকার পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলে বলেন, ১০ দিন পার হলেও এখনো আসামি ধরতে গরিমসি করছে পুলিশ।
সিরাজগঞ্জ জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় কুমার সাহা বলেন, আগামী দুদিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার না করা হলে মানববন্ধনসহ কঠোর আন্দোলনে যাব আমরা।
শাহাজাদপুর থানার ওসি খায়রুল বাশার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। ভিকটিমের স্ত্রী শান্তনা লাহিড়ী বাদি হয়ে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মন্তব্য করুন