ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের বাঁশ-বেতের কারিগররা পেশা বদল করছেন। তারা বলছেন, আগের মতো বিক্রি হয় না। কম বিক্রি হওয়ায় সংসার চালানো দায় হয়ে গেছে। অপরদিকে বাঁশসহ অন্যান্য কাঁচামালের দাম বেশি। এতে পুঁজি সংকটে উৎপাদন কমাতে হচ্ছে।
উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট নেকমরদ কাতিহার হাট, বলিদ্বারা বাজার ও পৌর শহরের কলেজহাট ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে।
সেখানে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙ্গারী, টুকরি, চালনি, মাছ ধরার ঢিহোর ও রাখার খলই, ঝুড়ি, পাখা, খৈচালন, ঢাকি, বারিং ও মুরগি খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রির জন্য তোলা হয়।
কারিগররা জানান, উপজেলায় আগের তুলনায় বাঁশের আবাদ কম হচ্ছে। বাঁশের দাম বেশি, পুঁজির অভাব, শ্রমিকের দুষ্প্রাপ্যতা, বাড়তি মজুরি, প্রয়োজনীয় উপকরণের মূল্যবৃদ্ধির মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে এ শিল্পের অনেক কারিগর ও মালিকরা। তারা অন্যান্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।
উপজেলার পৌর শহরের পূর্ব দাসপাড়ার লক্ষ্মী রাণী, দেবেন, নেকমরদ বামনবাড়ির মুহিত রায়, ভরনিয়া গ্রামের কমল রায় ও অনন্তপুরের সমবারু রায় জানান, বাপ-দাদার চৌদ্দ পিঁড়ি থেকে পালাক্রমে এ পেশায় আমরা জড়িত। কিন্তু বর্তমানে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করতে হচ্ছে। তবুও বংশের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে এখনও লেগে আছি।
তারা আরও বলেন, বাঁশের বিভিন্ন জিনিসপত্র এখন আর আগের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে না। কারণ, বর্তমানে প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি পণ্যের ওপর ঝুঁকছে লোকজন। আগে আমরা বিভিন্ন বাড়ি ঘরের পাটাতন তৈরির কাজ করে দিতাম। এখন মোটা প্লাস্টিক দিয়ে পাটাতন তৈরি হওয়ার আমরা বাঁশ শিল্পের কারিগররা বঞ্চিত হচ্ছি।
নন্দুয়ার গ্রামের আলুয়া রানী বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা এখনো আগলে রাখার চেষ্টা করছি। বাঁশের তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে। পুঁজির অভাবে ঠিকমতো কাজ করতে পারি না।’
এদিকে বাঁশের দাম বেশি হওয়া এর পণ্যের দামও বাড়তি। নেকমরদ হাটে কুলা কিনতে আসা ক্রেতা মাহাতাব আলী বলেন, বাঁশের তৈরি কুলার চেয়ে প্লাস্টিকের তৈরি কুলার দাম কম। তাই বেশিরভাগই ক্রেতাই প্লাস্টিকেরটাই কিনছে। কিন্তু বাঁশের তৈরি কুলার আলাদা একটা সৌন্দর্য ও সৌখিনতা আছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কিছু সংখ্যক বাঁশঝাড় মালিককে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের উৎপাদন বাড়ানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার রকিবুল হাসান বলেন, শিল্পটি আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিরই অংশ। বাঁশ শিল্পের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার জন্য বেশি বেশি বাঁশ চাষ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করব, সরকারিভাবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সার্বিক সহায়তা দিয়ে শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখাসহ সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে। এ ছাড়া প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বর্জন করতে হবে। এতে পরিবেশ দূষণ অনেকটা কমে আসবে। অপরদিকে বাঁশের তৈরি পণ্যের কদরও বাড়বে।
মন্তব্য করুন