আজহার ইমাম, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০৭:০৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কোরবানির ঈদকে ঘিরে বেড়েছে কর্মকারদের ব্যস্ততা

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। ছবি : কালবেলা
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকাররা। ছবি : কালবেলা

‘সারা বছর তেমন বিক্রি নাই। সারা দিনে ৩০০-৩৫০ টাকার দোকানদারি হতো। যা একটু দোকানদারি কেবল ঈদুল আজহার সময় হয়। বছরজুড়ে দোকান ভাড়া, যাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করি তার বেতন চালাতেও কষ্ট হয়। এই ব্যবসা না পারি ছাড়তে।’ কাজের ফাঁকে নিজেদের দুর্দশার কথা বলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মংলা কর্মকার।

ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এখন তড়িঘড়ি চলছে কোরবানির প্রস্তুতি। তার মধ্যেই বেড়েছে কামারদের ব্যস্ততা। একদিকে কোরবানির পশু কেনায় ব্যস্ত সচ্ছল পরিবারগুলো, অন্যদিকে প্রায় কয়েকগুণ বেশি সমানুপাতিক হারেই দা, বঁটি, ছুরি কিংবা কোরবানি পশু কাবু করার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কামাররা।

ঈদ আসার ৮-১৫ দিন আগ থেকেই এই ব্যস্ততা বাড়ে। চলে ঈদের আগের শেষ রাত পর্যন্ত। সরেজমিনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার হাটে বেশ কয়েকটি কামার দোকানে দেখা গেছে, আগের তুলনায় কাজ বেড়েছে কামারিদের। অথচ সারা বছরই তাদের কাটে অলস সময়।

দোকান ভাড়া, দোকানে পণ্যসামগ্রীর জন্য খরচ করা পুঁজি সবকিছু নিয়েই কোরবানির ঈদের জন্য একান্ত চিত্তে অপেক্ষার প্রহর গুণে কামার দোকানের কর্মচারীরা। পুরো বছর অত্যন্ত নিম্ন আয়েই তাদের কাটাতে হয় দিন। কেউ কেউ পাইকারি পণ্য দিয়ে কিছুটা অলস সময়ে নিজেদের ব্যস্ত রাখারও চেষ্টা করেন।

কোরবানির ঈদ ছাড়া বাকি ধান কাটার মৌসুমে কাঁচি তৈরি কিংবা কাঁচিকে ধারাল করার কাজে কিছু উপার্জন হয় তাদের। দোকানিরা বলছেন, ঈদ আসায় তাদের ব্যস্ততা অনেক বেড়েছে। আগে হয়তো সকাল ১০টায় ধীরে সুস্থে দোকান খুলত। রাত গড়াতেই পরিবেশে নির্জীবতা নেমে আসলে বন্ধ করে ফেলত দোকান।

তবে ঈদ মৌসুমে সকাল ৮টা থেকেই তাদের কর্মযজ্ঞ শুরু হয় আর চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। এমনকি ঈদের আগের রাতেও তারা সারারাত পর্যন্ত জেগে কাজ করতে হয়। এ সময়ে কিছুটা মোটা দাগে ইনকাম কমবেশি সবারই হয়।

জানা যায়, সবকিছু মিলিয়ে ঈদ মৌসুমে মংলা কর্মকারে আয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজারের মতো। তবে দিন প্রতি তার ৩ থেকে ৬ হাজার টাকার মতো উপার্জন হয়। কারও কারও এর চেয়ে কম বা বেশিও হতে পারে।

বিপ্লব কর্মকার জানান, প্রতিটি ছোট ও বড় ছুরি ধারালো করার কাজে কামাররা মজুরি নিচ্ছেন ৩০-৫০ টাকা। কেউ কেউ ৫০ থেকে ১০০ করেও নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। আবার একটি বঁটি কিনতে ক্রেতাদের ৩০০-৪০০ টাকার অংক গুণতে হয়। আর বড় ছুরি কিনতে লাগে ৬০০-৭০০ টাকা।

সুজন কর্মকার ও অধীর কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদ আসলে কেবল কামারদের দা, ছুরি, বঁটি তৈরি ও বিক্রির চাহিদা বেড়ে যায়। তা ছাড়া অন্যান্য সময়ে তেমন চাহিদা থাকে না।

একইসঙ্গে একটি তৈরিকৃত নতুন দা কিনতেও সমপরিমাণ অর্থ গুণছেন ক্রেতারা। তবে টাকার অংক ঈদ মৌসুমে বেড়ে বা কমে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক কামাররা। কাজ অনুযায়ীই তারা মজুরি আদায় করেন। সময়ভেদে অর্থ বাড়িয়ে নেন না বলেই স্বীকার করছেন তারা।

দেখা যায়, প্রায় সব কামারের দোকানেই লোহার সামগ্রী থরে থরে সাজানো। ক্রেতাদের অনেকে আবার নিজস্ব ধাতব পদার্থ নিয়ে আসছেন দা-বঁটি তৈরি করতে। কেউবা নিচ্ছেন কিনে। তবে দা বঁটির চাহিদা থাকে সারা বছরই।

কোরবানি ঈদের আগ মুহূর্তে দা-বঁটির কেনা-বেচা বাড়লেও নতুন মাত্রা যোগ করে নানা আকারের ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি সামগ্রী। সারা বছর বিক্রি না হওয়ায় ছুরি, ধামা, রামদা ইত্যাদি অল্প দাম হলেও ছেড়ে দেন বলেই জানা গেছে।

এদিকে কামার পেশার চাহিদা কমছে দিন দিন। নতুন করে এ পেশায় আসছেন না নতুন কেউ। সারা বছরের বিক্রিহীন সময় কাটানো, মৌসুমভিত্তিক ব্যবসায় সীমিত পরিসরে লাভ ইত্যাদি কারণে এই পেশার গুরুত্ব কমছে।

দেখা গেছে, পূবে প্রতি বস্তা কয়লা কামাররা ১০০ টাকায় কিনতেন। বর্তমানে বস্তা প্রতি সেই কয়লা তারা কিনছেন ৩৫০০ টাকায়। যদিও তার সঙ্গে মজুরিও বাড়ছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু

যশোরে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতার মৃত্যু

আমিরাতে লটারিতে ৬৬ কোটি টাকা জিতলেন প্রবাসী হারুন

আকাশপ্রেমীদের জন্য এ মাসে দারুণ খবর

আজ ৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

এসএসসি পাসেই চাকরি দিচ্ছে বসুন্ধরা গ্রুপ

৪ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

রাজধানীতে আজ কোথায় কী

সেপ্টেম্বরে বিশ্ব খাদ্যমূল্য সূচক কমেছে : এফএও

টিভিতে আজকের যত খেলা

১০

‘বিদেশি নম্বর’ থেকে ফোন করে ওসিকে হত্যার হুমকি

১১

ইসরায়েলকে বোমাবর্ষণ থামাতে ট্রাম্পের আহ্বান

১২

দুপুরের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে ঝড়বৃষ্টি

১৩

৪ অক্টোবর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১৪

শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ

১৫

গরুর মাংসে হাড়-চর্বি বেশি দেওয়ায় সংঘর্ষ

১৬

‘বিএনপি ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না’

১৭

এক ইলিশ ১০ হাজার টাকা

১৮

ভাতের হোটেলের পাওনা চাওয়ায় গুলি

১৯

ব্যক্তি স্বার্থে দলকে ব্যবহার করা যাবে না : সেলিমুজ্জামান

২০
X