

ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের জামতৈল রেলস্টেশনটিতে রাত গভীর হলে ছিনতাইকারীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে ওঠে। চলন্ত ট্রেন থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্ত সবখানেই ছিনতাইকারীদের সক্রিয়তা এখন প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। যাত্রীরা আতঙ্ক নিয়ে ওঠানামা করলেও নেই কার্যকর নিরাপত্তা-ব্যবস্থা; নিম্ন মানের সিসি ক্যামেরা আর নজরদারির ঘাটতি মিলিয়ে স্টেশনটি পরিণত হয়েছে ‘ঝুঁকির জোন’-এ।
বেশিরভাগ সময় রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। তবে এর বাইরেও যেসব ট্রেন স্টেশনটিতে ক্রসিং হতে থেমে থাকে সেসব ট্রেনেও ছিনতাই হয় বলেও জানায় স্টেশনের কর্মচারীরা। স্থানীয়দের ভাষায়, প্রতিদিনই কিছু না কিছু হয়।
জানা গেছে, গত ৮-১০ মাস ধরে এই দুটি ট্রেনকে ঘিরে জামতৈল এলাকায় ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ট্রেন ছাড়ার আগমুহূর্তে ৭-৮ জনের একটি সক্রিয় তরুণ ছিনতাই চক্র এই কাজ করে। যাত্রীরা মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় বা জানালার পাশে দাঁড়ালে মুহূর্তেই জিনিসপত্র, তাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন ছোঁ মেরে নেয় ছিনতাই চক্র। স্টেশনটিতে ১৮টি সিসি ক্যামেরা থাকলেও তাতে মুখ শনাক্ত করা যায় না বলে জানিয়েছেন স্টেশন কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জামতৈল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার (ইনচার্জ) আবু হান্নান কালবেলাকে বলেন, প্রায়দিনই রাতে ট্রেন ছাড়ার সময় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। তবে যাত্রীরা রানিং হওয়ায় কেউ মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ দেয় না। আগস্ট মাসে উপজেলার তাজুরপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় সিগন্যাল লাইটে খড়কুটা বা বস্তা জাতীয় কিছু একটা ঢুকিয়ে লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল ট্রেন থামিয়ে ছিনতাই করা। তবে চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে ট্রেন থামায়নি।
তিনি আরও বলেন, সিসি ক্যামেরার মান খুব খারাপ, তাই ছিনতাইকারীদের চেহারা বোঝা যায় না। বিষয়টি জিআরপি পুলিশ ও কামারখন্দ থানা পুলিশকে জানিয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও অবগত করেছি।
স্টেশনটিতে সরেজমিনে গিয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্টেশনের দুই প্রান্তেই ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। দক্ষিণ পাশে কামারের গলির পাশে থাকা দোকান সংলগ্ন এলাকায় সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে উত্তর পাশের কমিউনিস্ট পার্টির অফিসের পাশ ঘেঁষে ছিনতাই করে অন্ধকার গলির দিকে পালিয়ে যায় তারা। স্টেশনের দ্বিতীয় লাইনে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা না থাকায় ছিনতাইকারীরা আরও সুযোগ পেয়ে যায় বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা জানান, ছিনতাই বন্ধে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। মানসম্মত সিসি ক্যামেরা, পুলিশ টহল এবং নিয়মিত নিরাপত্তা চেক বাড়ানো না হলে এই সমস্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তারা। রেলওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের তৎপরতা না বাড়ালে, জামতৈলের এই ‘চলন্ত ছিনতাই’ বন্ধ হবে না এমনটাই মনে করেন যাত্রীরা।
রুহুল নামের এক যাত্রী বলেন, ট্রেনে ওঠার সময় মোবাইল হাতে থাকলে মনে হয় আরেক মিনিটেই হয়ত ছিনতাই হয়ে যাবে। অথচ নিরাপত্তার তেমন ব্যবস্থা নেই। এ স্টেশনে রাতের বেলায় ভয় লাগে।
সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, আমি আসার পর স্টেশনটিতে ছিনতাই কমেছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছরের ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
ছিনতাইয়ের ঘটনায় লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, লিখিত অভিযোগ আমাদেরকে কেউ দেয়নি তবে দুই-তিনটা মৌখিক অভিযোগ পেয়েছিলাম।
এ বিষয়ে পশ্চিম রেলের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, জামতৈলে তো আসলে পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো না। তবে নতুন করে পুলিশ ফাঁড়ি অনুমোদন পাওয়া গেছে। মাস দুইকের মধ্যেই কার্যক্রম শুরু হবে। তখন নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কামুক্ত হবে। আর সিসি ক্যামেরার মান যদি গুণগতমান খারাপ হয় সে বিষয়টিও আমরা দেখবো। আর দুই নাম্বার লাইনে যে লাইট নেই, এটা বৈদ্যুতিক অফিসের সঙ্গে কথা বলে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন