পরম যত্নে পালা ষাঁড়ের নাম ‘রাজাবাবু’। ৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট উচ্চতার রাজাবাবুর সাদা কালো চিত্রা শরীর। ষাঁড়টির ওজন ২০ মণ বলে দাবি মালিকের। সে জন্য বিশালাকার পশুটিকে দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় সময়ই লোকজন আসছেন।
গরুটির মালিক মো. আব্দুর রসিদ ভালোবেসে নাম রেখেছেন রাজাবাবু। পেশায় রাজমিস্ত্রি আব্দুর রসিদ দুই বছর ধরে ষাঁড়টি লালনপালন করছেন। তার দাবি, বর্তমানে এটিই উপজেলার সবচেয়ে বড় গরু।
এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় রাজাবাবুকে হাটে তোলা হবে। বিশাল শরীরের অধিকারী হওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই আশপাশ এলাকার লোকজন এটিকে দেখতে আসছেন। মালিক আব্দুর রসিদ রাজাবাবুর দাম হেঁকেছেন ৭ লাখ টাকা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. আব্দুর রসিদ নামে এক রাজমিস্ত্রি শখ করে উন্নত ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল আকারের একটি ষাঁড় গরু লালন পালন করছেন। গরুটির বয়স আড়াই বছর। ইতিমধ্যে এই বিশাল আকারের এই ষাঁড়টি এলাকাজুড়ে বেশ সাড়া ফেলেছে।
আখাউড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুয়েল মজুমদার বলেন, এ উপজেলায় অনেক লোকজন খামার করে উন্নত জাতের গরু লালন পালন করছেন। পশু মোটা তাজাকরণে ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার বন্ধে খামারগুলোতে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তা ছাড়া সকল খামারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার পাশাপাশি খামারিদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে তদারকি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন এ উপজেলায় বেশ কয়েকটি বড় আকারের গরু রয়েছে। এর মধ্যে এটি হলো অন্যতম। এই উন্নত জাতের গরুটিকে প্রাকৃতিক উপায়ে লালন পালন করা হচ্ছে। লালন পালনে যখনই কোনো সমস্যায় পড়ছেন সার্বিকভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
গরুর মালিক মো. আব্দুর রসিদ বলেন, ছোটবেলা থেকেই বড় গরু পালনের প্রতি আমার শখ ছিল। কিন্তু নানা কারণে পালন করা হয়নি। আজ থেকে ২ বছর আগে স্থানীয় একটি পশুর হাট থেকে ৫ মাস বয়সি ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বাছুর ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করি। এরপর প্রাকৃতিক উপায়ে লালনপালন শুরু করি। বর্তমানে গরুটির ওজন হয়েছে প্রায় ২০ মণ। এই গরুটির প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রয়েছে ভুসি, চিটা গুড়, খৈল, ছোলা, খুদ ভাত, ঘাস ইত্যাদি খাবার। তবে মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো ওষুধ খাওয়ানো হয়নি। পাশাপাশি নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার ঘরে রাখা, তাপমাত্রা পরিমাপ রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেওয়াসহ প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া হয়। প্রয়োজনমতো খাবার ও পরিচর্যায় এর আকৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তিনি বলেন, শখের বসে আদর করে এটির নাম রেখেছি রাজাবাবু। আমাদের সকলের খুবই আদরের গরু এটি। সন্তানের মতো গরুটিকে লালনপালন করছি। যখন তাকে রাজাবাবু বলে ডাক দেওয়া হয় তখন আমার দিকে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার কান নাড়া দেয়। তবে এই ষাঁড়টি খুবই শান্ত প্রকৃতির। প্রতিদিন গরুটির খাবারের পেছনে খরচ হচ্ছে ৬০০ টাকা। আমার পাশাপাশি পরিবারের লোকজন গরুটির সবকিছুতে বেশ খেয়াল রাখছেন।
রাজাবাবুকে দেখতে আসা আখাউড়া পৌর শহরের দেবগ্রাম এলাকার বাসিন্দা ও তুলাইশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাজ্জাত হোসেন বলেন, আমার এক ভাই প্রবাসে থাকে। তার ইচ্ছা বড় গরু কোরবানি দেওয়ার। তাই লোক মুখে গরুটি দেখতে আসলাম। আসলেই গরুটি দেখতে খুবই সুন্দর। গরুটির ছবি তোলা হয়েছে। ভাইয়ের কাছে ছবি পাঠানো হবে। তার পছন্দ হলে দু-একদিনের মধ্যে ক্রয়ের দাম জানানো হবে। এ জন্য মালিকের মোবাইল নম্বর নেওয়া হয়েছে।
পৌর শহরের তারাগন এলাকার কামরুল হাসান বলেন, বড় আকৃতির গরুর কথা লোকমুখে শুনে এখানে দেখতে আসলাম। মানুষের মুখে যা শুনেছি এখানে এসে তাই দেখলাম। আসলেই গরুটি খুবই সুন্দর। মালিকের কাছে ক্রয়ের একটি দর বলেছি। সে বলছে আমাদেরকে জানাবে।
উপজেলার দরুইন গ্রামের মো. মধু মিয়া বলেন, আসলে আব্দুর রসিদ একজন শৌখিন মানুষ। গরু লালন পালনে তার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। শখ করে এই উন্নত জাতের গরুটি তিনি অতি যত্নে সহকারে গরু লালন পালন করছে। গরুটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসছে। আমার জানা মতে এটি হলো আখাউড়ার বড় গরু।
মন্তব্য করুন