মার্চ ফর খেলাফতের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ১৭ সদস্যকে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার পুলিশ উপপরিদর্শক মো. নূর ইসলাম আদালতকে জানিয়েছেন, ‘হিজবুত তাহরীর বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে উগ্রবাদ পন্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে আসামিদের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে হাজতখানায় রাখে পুলিশ। এরপর ৪টা ৫ মিনিটে আসামিদের হাতে হাতকড়া, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, মাথায় হেলমেট পরিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সিএমএম আদালতের ৮ তলায় এজলাসে তোলা হয়। আসামিদের তোলার সময় আদালতের প্রাঙ্গণে পুলিশ ও অজ্ঞাত ব্যক্তিদের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
পরে ১৭ আসামিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা রহমানের আদালতে তুলে একই কাঠগড়ায় রাখা হয়। আইনজীবী, পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মী ব্যতিত সবাইকে শুনানির সময় এজলাস কক্ষ থেকে বের করা হয়। পরে বিচারক মাসুমা রহমান এজলাসে আসেন।
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসামিদের ১০ দিনের লিখিত রিমান্ড আবেদনে আদালতে বলেন, গত ৭ মার্চ দুপুর আনুমানিক ২টার সময় বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে অজ্ঞাতনামা ২০০০ থেকে ২২০০ জন ব্যক্তি মার্চ ফর খেলাফত, হিযবুত তাহরীর, উলাইয়াহ্ বাংলাদেশ ব্যানারে সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সদস্যরা মিছিল বের করে। তারা সরকারবিরোধী, দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত করার প্রয়াসে পতাকা, ব্যানার, লাঠিসোঁটা নিয়ে স্লোগান দিয়ে মিছিল করে পল্টন মোড়ের দিকে যেতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। তখন তারা পুলিশের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।
তখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ জান-মাল রক্ষার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে অবৈধ মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য গ্যাসগান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। তবুও নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে। এরপর আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থলে তাদের ব্যবহৃত পতাকা, স্লোগান ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহরীর সক্রিয় সদস্য ও সমর্থক।
পুলিশ আবেদনে আরও জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে একত্রিত হয়ে দেশের আইন শৃঙ্খলা বিনষ্ট করার জন্য ও বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর জন্য একত্রিত হয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে মিছিল করছিল। তারা প্রচলিত সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে না এবং দেশের সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে অমান্য করে যে কোনো বড় ধরনের আঘাত ঘটাতে পারে। গণজমায়েতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা দেশের সার্বভৌমত্বকে আঘাত ও মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রয়াসে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন বা সত্তার সদস্য হিসেবে সক্রিয়ভাবে দেশবিরোধী প্রচারনায় অংশগ্রহণ করে। তারা বাংলাদেশে প্রচলিত গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয় এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে উৎখাত করে খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমে চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তথাকথিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে উগ্রবাদ পন্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, ‘আসামিরা শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদের নামাজ পড়তে যান। তারা কোনো সংগঠনের সদস্য নয়। তাদের নামে এর আগে কোনো মামলা বা অপরাধের রেকর্ড নাই।’ শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষের কোনো আইনজীবী আদালতে ছিলেন না। শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর আসামিদের ফের কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় হাজতখানায় নেওয়া হয়। আসামিদের নিয়ে যাবার সময় পরিবারের সদস্যদের কান্না করতে দেখা যায়।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মো. আব্দুল্লাহ (২২), তরিকুল ইসলাম (৩৫), আহমেদ নাফিজ মোর্শেদ (২৭), মো. শাহাদাত হোসেন (৩৬), তানভির মাহতাব রাফাত (২৯), মোহাম্মদ আবু শোহাইব (৩৪), আশফাক আহম্মেদ (২২), সাব্বির হোসাইন ওরফে জিউন (২১), মো. রিফাত ইসলাম রশিদ (২১), মো. আল রাফি সাজ্জাদ (২৩), রেদোয়ান বিন শহিদুল (২০), মিয়াজী আব্দুল্লাহ আল মুত্তাকী (১৯), হাবিবুর রহমান (২৩), মো. হেলাল উদ্দিন (৪৫), আসাদুজ্জামান নূর (১৮), তানিম শিকদার শিহাব (১৮) ও আহমেদ নাসিফ কবির কাব্য (১৮)। তাদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় উপপরিদর্শক রাসেল মিয়া বাদী হয়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন।
মন্তব্য করুন