

ঢাকার আশুলিয়ার গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে পিকনিকের কথা বলে ডেকে নিয়ে কোমল পানীয়ের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই সহপাঠীসহ তিনজনের বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া আরেক আসামি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাজুল ইসলাম সোহাগের আদালত এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে যাওয়া আসামিরা হলেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম তাজ (২৩), শ্রাবণ শাহা ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থী অন্তু দেওয়ান (২৮)। তাজুল ও শ্রাবণের তিন দিন এবং অন্তু দেওয়ানকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী মামলার প্রধান আসামি দেলোয়ার ভূইয়ার রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর তারিখ ধার্য করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
এদিন আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম সুমন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মামলাটির তদন্তের স্বার্থে ঘটনার অন্তরালে অন্য কোনো আসামিদের সম্পৃক্ততা আছে কিনা এবং আসামিদের দখল থেকে বাদিনীর অশ্লীল চিত্র ও ভিডিও উদ্ধারের লক্ষ্যে আসামিদের পুলিশ হেফাজতে রেখে সাত দিনের জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত প্রয়োজন।
আসামি পক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তিন আসামির বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল বেলা ১১টার দিকে পিকনিকের কথা বলে ভুক্তভোগীকে আশুলিয়ার ফুলেরটেক এলাকায় একটি বাসায় নিয়ে যান তার তিন সহপাঠী অভিযুক্তরা। যাওয়ার সময় তাকে কোমল পানীয়ের সঙ্গে অচেতন করার ওষুধ খাওয়ালে কিছুক্ষণ পর ভুক্তভোগী অচেতন হয়ে পড়েন। বিকেল ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি ওই বাসায় তিনজনকে দেখতে পান। তখন তিনি ওই তিনজন তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেছে ও তার ভিডিও ও ছবি ধারণ করা হয়েছে বলে বুঝতে পারেন। এ সময় তিনি প্রতিবাদে ডাক চিৎকার করলে অভিযুক্তরা তাকে আইনগত ব্যবস্থা নিলে, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া ও এসিড দিয়ে মুখ ঝলসে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপরও তারা বিভিন্ন সময় একাধিক ধাপে হুমকি দিয়ে ৯৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন। এরইমধ্যে গত ৬ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে তাকে ফের আশুলিয়ার বাইশ মাইল এলাকায় আটকে আন্তু দেওয়ানের সঙ্গেও শারীরিক সম্পর্ক করতে বলেন। এতে রাজি না জলে তাকে প্রথম তিন অভিযুক্ত চড়থাপ্পড়সহ মারধর করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক নেশাজাতীয় বিষাক্ত পানীয় পান করায়।
আরও বলা হয়, তাদের কবল থেকে ছাড় পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে সেখানেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাকে প্রথমে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তিনি চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায়ই তার পরিবারের এক সদস্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। চিকিৎসার পর তিনি ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরলে গত ২৬ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে অভিযুক্তদের দেখতে পান তিনি। একপর্যায়ে অভিযুক্তরা তাকে একটি কক্ষে নিয়ে দরজা আটকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেন ও নতুন জীবন শুরু করতে পরামর্শ দেন। এতেও সায় না দিয়ে বের হতে গেলে তাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেন।
ওই ঘটনায় গত ২ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর রাতেই অভিযান চালিয়ে তিন সহপাঠীসহ চার শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
মন্তব্য করুন