ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পাল্টে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চিত্র। পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, দুই অনুষদের ডিন, প্রক্টর, ১৩ সহকারী প্রক্টর এবং সাত হলের প্রভোস্ট। আগাম অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছেন রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় এ ব্যক্তি সদস্য-সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া প্রশাসনিক এবং একাডেমিক যে কোনো নথি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। প্রবীর কুমার সরকার আগাম অবসরে যাওয়ার কারণে প্রশাসনের নানা কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ শূন্য পদ পেতে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধ ডজন কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবন সূত্রে জানা যায়, ঢাবির এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন রয়েছে। যা ২০২৩ সালে পাশ হয়। এই নীতমালা মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এবং এর অধীন সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন কর্পোরেশনের শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। প্রশাসনের এ পদ পেতে অর্ধ ডজন কর্মকর্তার নাম আলোচনায় আসে। তালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অফিসে ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মরত এ কে এম আফতাবুজ্জামান। তিনি তৃতীয় গ্রেডের কর্মকর্তা।
তালিকায় আরও রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার বিপুল কুমার সাহা। তিনি ঢাবির রেজিস্ট্রারের অফিসের অধীনে শিক্ষা-৩ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন। ডেপুটি রেজিস্ট্রার মুনসী শামস উদ্দিন আহম্মদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের পিএস ছিলেন। বর্তমানে তিনি রেজিস্ট্রারের অফিসের অধীনে শিক্ষা-২ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন।
তালিকায় রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার নাবিলা-নূর-উস-সাবা। তিনি রেজিস্ট্রারের অফিসের অধীনে শিক্ষা-১ দফতরে দায়িত্বে রয়েছেন।
তার বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি সমর্থিত ঢাবির এক কর্মকর্তা বলেন, নাবিলা কোনোদিন বিএনপির রাজনীতি করেননি। তাকে কোনদিন কোথাও আমি দেখিনি। তিনি সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দারের অফিসে ছিলেন। তিনি ওই অফিসে থাকাকালীন অনেকের সাথে খারাপ আচরণ করায় তাকে এখান থেকে বদলি করে দেওয়া হয়। এজন্য সে নিজেকে ভুক্তভোগী পরিচয় দেয়। তাকে সুবিধাভোগী বলা যায়।
তালিকায় রয়েছেন শিউলি আফছার। তিনি রেজিস্ট্রার অফিসের অধীনে শিক্ষা-৫ দফতরের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ছাত্রবান্ধব কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।
তালিকায় আরও রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা-৪) মো. আজাদ হোসেন হাজারী, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা-২) তাহমিনা রওশন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৪) মো. ইমাম হোসেন হাওলাদার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৩) সৈয়দা মাসুদা আক্তার, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৫) মো. দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, আগাম অবসরে যাওয়ার আবেদন করেও ফের একই পদে থাকতে চাচ্ছেন প্রবীর কুমার সরকার। সেজন্যে তিনি নানা কায়দায় তদবির চালাচ্ছেন। যদিও স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আবেদন অনুমোদিত হওয়ার পর একই পদে পুনর্বহাল সম্ভব নয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ চাইলে চুক্তিভিক্তিক নিয়োগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে প্রবীর কুমার সরকার ফের পদে পুনর্বহাল চান এমন খবরের প্রতিবাদ জানিয়ে গত রোববার বিকেলে রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে মিছিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তারা নানান অভিযোগে অভিযুক্ত প্রবীর কুমার সরকারের বিচার দাবি করেন।
এ বিষয়ে ঢাবির উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, রেজিস্ট্রার নিয়োগ সম্পূর্ণ নির্ভর করছে উপাচার্যের উপর। আপাতত কাউকে দায়িত্ব দিতে হবে। এটির জন্য একটা প্রক্রিয়া রয়েছে। সেটি অনুসরণ করতে হবে।
মন্তব্য করুন