জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অপকর্ম যেন থামছেই না। চাঁদাবাজি, ব্যবসায়ীকে মারধর, গণরুমে নির্যাতন, হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক নেতিবাচক ঘটনায় খবরের শিরোনাম হয়েছে ছাত্রলীগের শাখা ইউনিট। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হলো মধ্যরাতে ছেলেদের আবাসিক হলে মেয়ে বান্ধবীসহ ছাত্রলীগ কর্মীর সময় কাটানোর ঘটনা। যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
জানা গেছে, গত ৪ জুন মধ্যরাতে মেয়ে বান্ধবীসহ প্রায় আড়াই ঘণ্টা অবস্থান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জয়দ্বীপ দাস। তবে মেয়েটির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভিযুক্ত জয়দীপ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী এবং সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জয়দীপ দাস প্রথম বর্ষে ভর্তির পর রফিক-জব্বার হলে অবস্থান করতেন। পরে তিনি ২১ নম্বর হলে সংযুক্তি পরিবর্তন করেন। তবে আবাসিক হলে মেয়ে বান্ধবীসহ অবস্থান করার ঘটনা এটিই প্রথম নয়; প্রায়ই তিনি হলে বান্ধবীসহ আসেন। এর আগে স্বরস্বতী পূজায় রফিক-জব্বার হলে বান্ধবীসহ সময় কাটান বলে নিশ্চিত করেছেন তার কয়েকজন বন্ধু।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানায়, ঘটনার দিন জয়দীপ রাত ৩টার পর হলে আসেন। হলের করিডোরে কিছুক্ষণ পায়চারী করে গার্ডদের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এরপর হলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকা বান্ধবীকে নিয়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যান। আমরা প্রায় আধ ঘণ্টা সেখানে বসেছিলাম, কিন্তু তাকে হল থেকে বের হতে দেখিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আমার সঙ্গে প্রথমে তার বন্ধুত্ব ছিল। যা একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। আমার কাছ থেকে সে বিভিন্ন সময় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার নিয়েছে। যা কখনোই ফেরত দেয়নি। একটি দামি মোবাইলও নিয়েছিল। আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সে একাধিক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিল।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়দীপ দাস বলেন, মূলত হল ঘুরে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমার বান্ধবীকে হলে নিয়ে এসেছিলাম। আমার রুমে মাত্র দুই মিনিট অবস্থান করি। বাকি সময় গেস্টরুমে বসে কথা বলেছি। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাকে হলে নিয়ে এসেছি। প্রতিবার আমরা শুধু গেস্টরুমে বসেই গল্প করি। তবে এবারই প্রথম তাকে হলের তরে নিয়ে যাই।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক রনি হোসাইন বলেন, গার্ডদের সঙ্গে কথা বলে এবং সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর আমরা শৃঙ্খলা কমিটির কাছে প্রতিবেদন জমা দিবে। এ ছাড়া আমরা হলের গার্ডদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২১ নম্বর হলের প্রভোস্ট তাজউদ্দীন শিকদার কালবেলাকে জানান, আমি ঘটনাটি জেনেছি। প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে তার সঙ্গে কথা বলেছি। সে সবকিছু স্বীকার করে নিয়েছে। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে ৭ জুন তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘সত্যতা যাচাই’ কমিটি গঠন করেছি। আগামীকাল তারা প্রতিবেদন পেশ করবে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
মন্তব্য করুন