ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিতে বহালসহ দুই দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) ক্যাম্পাসের সামনে ‘ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস কমিউনিটি’র নামে কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
এদিন সকাল থেকেই সপ্তম শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে এক শিক্ষকের চাকরি যাওয়ায় বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় দেখা যায়, ক্যাম্পাসে অবস্থান ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার-প্ল্যাকার্ড। যাতে লেখা ‘সে নো টু এলজিবিটিকিউ’, ‘উই ডোন্ট প্রমোট এলজিবিটিকিউ’সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড।
এছাড়া শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে চাকরিচ্যুত করার ব্যাখ্যা ও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান কী তা বিবৃতির মাধ্যমে জানানোর দাবিও জানায় শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায় না হলে ক্লাস বর্জন ও সেমিস্টার ফি বন্ধের হুঁশিয়ারিও দেয় তারা।
তারা বলেন, শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তার বিষয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে হবে। আসিফ স্যারের ইস্যুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যদি কোনো ভুল থাকে তাহলে আমরা চাই তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্পষ্ট অবস্থান কী তাও আমরা জানতে চাচ্ছি।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, আমরা যে দাবিগুলো করেছি মনে করি সেগুলো যৌক্তিক। এই দাবিগুলো মেনে নেওয়া উচিত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন ছেলে অথবা মেয়ে হিসেবে। আর যাদের আঙ্গিক বৈকল্য আছে বা কোনো ধরনের অসুস্থতা আছে তাদের কোনো কিছু বলা যায়, যেটাতে তাদের নিজেদের কোনো দোষ নেই। কিন্তু আমার শুধু ইচ্ছা করল বা মনের তাড়নায় অন্যকিছু একটা হয়ে গেলাম এটা ইসলাম কেন, কোনো ধর্মই এটা অনুমতি দেবে না।
তবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে আলোচিত এই ‘শরীফার গল্প’ নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সাথে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, বিভ্রান্তি থাকলে সংশোধন করা হবে। তবে একটি পক্ষ সবসময় ধর্মীয় ইস্যু তুলে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে বলেও মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।
মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, পাঠ্যক্রমে যদি দুর্বলতা থাকে তা পর্যালোচনা করা হবে। যৌক্তিক কোনো কারণ পাওয়া গেলে তা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে পরিবর্তন করা হবে। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
মূলত সপ্তম শ্রেণির এই পাঠ্যবইয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রতিবন্ধকতা থাকলে সমাজে এগিয়ে যাচ্ছে বলে আলোচনা করা হয়েছে। যদিও সেখানে তাদের বেড়ে ওঠা, সামাজিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত, শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না থাকা ইত্যাদি উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।
মন্তব্য করুন