কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

কুবিতে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কেন শিক্ষকদের ফায়দা আদায়ের চেষ্টা!

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ছবি : কালবেলা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। ছবি : কালবেলা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে শিক্ষাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরা। ভয়াবহ সেশনজটের চোখ রাঙানিও মিলছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ডাকে ১৯ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত ক্লাস বর্জন চলছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবিগুলো যৌক্তিক হলেও শিক্ষকরা কেন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করবে!

ইসরাত জাহান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকরা আন্দোলনে নামা মানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া। এভাবে শিক্ষার্থীরা সেশন জটে পড়ে যায়। তাদের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই নষ্ট হয়ে যায়। এর দায়ভার কে নেবে? শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, ভুক্তভোগী হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে যতদ্রুত সম্ভব এটির সমাধান করা দরকার।’

গোলাম মোস্তফা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে আমাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে গেছে। এখন উপচার্য ও শিক্ষক সমিতির মধ্যকার যে দ্বন্দ্ব চলছে তা কখন শেষ হবে জানি না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের জীবন বিশ্ববিদ্যালয়েই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের স্বপ্নগুলো অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে। তাই আমরা আশা করব, উভয়ই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’

ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘এক দিকে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন করছেন, অন্যদিকে কয়েকজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। এটা শিক্ষার্থীদের মানসিক অস্থিরতায় রাখছে। পবিত্র রমজান মাসে শিক্ষার্থীরা বাড়ি যেতে পারছে না। আবার ক্লাসও নিয়মিত হচ্ছে না। এতে সেশনজট বাড়ার আশঙ্কাও আছে। শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ তারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, যেটা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত শিক্ষকদের দাবির বিষয়গুলো বিবেচনা করে একটি শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্তে আসা।’

শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, ‘শিক্ষকরা তাদের নায্য দাবির জন্য আন্দোলন করতে পারে। তবে শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর শিক্ষক সমিতির প্রতি পরামর্শ থাকবে তারা যেন আন্দোলনের ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে।’

শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তাদের কোনো ক্ষতি হোক সেটা আমরা কেউ চাই না। আমার এই বিষয়ে খুবই সর্তক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের যারা পাঠদান দেয় তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শিক্ষকদের নায্যদাবিগুলো নিয়ে ভিসির সঙ্গে অনেকবার বসেছি, চিঠি দিয়েছি কিন্তু স্যার কোনো কর্ণপাত করেনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা ভালো না থাকলে, শিক্ষার্থীরা ভালো থাকবে না, শিক্ষার্থী ভালো না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় ভালো থাকবে না। উপাচার্য যদি আমাদের নায্যদাবিগুলো মেনে নেন তাহলে আমরা অতিরিক্ত ক্লাস, সব কিছু নিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে সেশনজট না পড়ে সেই ব্যবস্থা নেব।’

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, ‘শিক্ষক সমিতি আমার কাছে একটা চিঠি দিয়েছিল। চিঠির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমি কার্যালয়ে বসি। তাদের সঙ্গে কথা হয়, তাদের পক্ষ থেকে শুধু সভাপতি, সেক্রেটারি কথা বলবে, কিন্তু তারা সাইড টক শুরু করে দিয়েছে। একপর্যায়ে সদস্যরা বলেন, আমরা এখানে কথা বলতে না পারলে এখানে কেন আসছি? একপর্যায়ে তারা চলে যায়।’

শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তাদের বলেছি আপনাদের দাবি আইনসম্মত হলে আমি মেনে নেব। ক্লাস বর্জনের বিষয়ের আমি তাদের অনুরোধ করছি। আপনারা ক্লাস বর্জন করবেন না। এতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে।’

এর আগে দাবির বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেছিলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য কার্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করা হয়েছিল। সেটার তদন্ত করে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া যোগ্যতা থাকার পরেও ১ম ও ২য় গ্রেডের অধ্যাপকের পদোন্নতি না দেওয়া ও শিক্ষকদের গেস্ট হাউস এখনো উন্মুক্ত করা হয়নি। শিক্ষকদের পদন্নোতির বৈষম্য দূর করার জন্য আমরা উপাচার্যের কাছে লিখিত দিলেও তিনি তা ভ্রুক্ষেপ করেননি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাব্বিরকে পাঁচ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ বিসিবির আকুর

জিয়ার সমাধিতে ডা. সাবরিনার শ্রদ্ধা, যুবদল সভাপতির ক্ষোভ

শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিতর্ক, অর্থপাচার বিরোধী অভিযানে চাপ

অভিনেত্রী জাহানারা ভূঁইয়া মারা গেছেন

ঢাকা শিশু হাসপাতাল শাখা ড্যাবের নতুন দায়িত্বে ডা. ফারুক

এনসিপির আরও চার নেতার পদত্যাগ 

হাইকোর্টের বিচারপতি হলেন সারজিসের শ্বশুর লুৎফর রহমান

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিধিমালা প্রকাশ

হাসনাতকে ‌‘ফকিন্নির বাচ্চা’ বললেন রুমিন ফারহানা

বিজিবির কাছে ৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করল বিএসএফ

১০

চুরির অভিযোগ, গণপিটুনিতে যুবক নিহত

১১

সংবিধানের মূলনীতি থেকে আমরা সরে যাচ্ছি : ড. কামাল হোসেন

১২

রাকসু নির্বাচনে ভোটাধিকারের দাবিতে নবীন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৩

চট্টগ্রামের মিষ্টি কারখানায় স্বাস্থ্যঝুঁকি, মধুবন ফুডকে জরিমানা

১৪

আশুলিয়ায় সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

১৫

জাবির সাবেক সহকারী প্রক্টর জনি রিমান্ডে

১৬

প্রাণনাশের শঙ্কায় ভুগছেন ফজলুর রহমান, চাইলেন নিরাপত্তা

১৭

বাংলাদেশ সফর নিয়ে ইসহাক দারের প্রতিক্রিয়া

১৮

অপ্রতুল বিনিয়োগের কারণে চিকিৎসার মান কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছায়নি : ডা. রফিক 

১৯

মোদিকে চ্যালেঞ্জ জানানো থালাপতির উত্থানের গল্প

২০
X