ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৪, ০১:৩১ পিএম
আপডেট : ০৬ মে ২০২৪, ০২:৫৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবি অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, দাবি শিক্ষার্থীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিচে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা। ছবি : কালবেলা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থী গত ১০ ফেব্রুয়ারি যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে আবেদন করেন। এর কিছুদিন পরেই তার বিরুদ্ধে রাজধানীর অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীও ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগ তোলেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গঠিত তথ্যানুসন্ধান কমিটিকে দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়ার পর দুই মাস অতিক্রান্ত হলেও দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।

তারা বলছেন, বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার অথবা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কমে গেলে লঘুদণ্ড দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সোমবার (৬ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিচে বিভাগটির সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে এসব মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিভাগটির ১৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিজ খান। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক প্রত্যেক ব্যাচে টার্গেট করে নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি করতেন। এমনকি বিভাগের সাবেক অনেক শিক্ষার্থীও বিভিন্ন সময়ে তার দ্বারা শিকার হওয়া বিভিন্ন হয়রানির ব্যাপারে মুখ খুলেছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করেছেন। যার প্রেক্ষিতে আমরা বিভাগের সকল ব্যাচের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে এই অভিযোগের নিরপেক্ষ এবং নির্মোহ তদন্তসাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আমাদের বিভাগীয় চেয়ারপারসনসহ তিনজন শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করেন। উপাচার্য মহোদয় আমাদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদেরও ডেকে নেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট সভায় অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মাস্টার্স ব্যাচের ফল ধসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে অপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যৌন হয়রানির অভিযোগ তদন্তকারী কমিটিকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু, দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হলেও আজ দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তদন্তের কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অন্য দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা করতে পারেনি। এর ফলে আমরা 'গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা' বিভাগের নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা তদন্তপ্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা করছি। আমরা আরও আশঙ্কা করছি, বিশেষ কোনো মহল বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে অথবা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা কমে গেলে লঘুদণ্ড দিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে এই ঘটনায় অগ্রগতি আমাদেরকে জানাতে হবে। দৃশ্যমান কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি পরিলক্ষিত না হলে নিপীড়িত শিক্ষার্থীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণে আমরা বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারও কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীকে কেবল পদাবনতি কিংবা পদোন্নতি বন্ধ করে লঘুদণ্ড দিলেই হবে না, তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় আইনে ফৌজদারি ব্যবস্থা নিতে হবে। ফৌজদারি ব্যবস্থা নেয়ার সকল ব্যয়ভার বিশ্ববিদ্যালয়কেই বহন করতে হবে।

এর আগে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে ফলে ধস নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। অভিযোগের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করে মৌখিক পুনঃগ্রহণ ও সম্পূর্ণ ফল পুনর্মূল্যায়ন এবং অধ্যাপক নাদির জুনাইদের কৃতকর্মের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান।

১০ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে বিভাগের এক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন। ১১ ফেব্রুয়ারি ড. নাদিরের বিরুদ্ধে মৌখিক যৌন হয়রানি ধামাচাপা দেওয়ার অন্য আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেন বিভাগটির আরেক নারী শিক্ষার্থী। এরপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে আরেকটি যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন রাজধানীর আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী।

এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচারের দাবিতে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেন বিভাগের সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তার বিভাগীয় অফিস কক্ষে তালা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের তালায় সিলগালা করে দেন শিক্ষার্থীরা এবং দরজায় ‘যৌন নিপীড়ক অধ্যাপক নাদির জুনাইদ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত’ সংবলিত পোস্টার ঝুলিয়ে দেন। এ ছাড়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেন। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অধ্যাপক নাদির জুনাইদকে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এরপর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের জন্য তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না এমন লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস চাইলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বিভাগের একাডেমিক কমিটির বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক নিরাপত্তা দেওয়া হবে এমন একটি বিবৃতি প্রদান করেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহম্মদ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে রুটিন অনুযায়ী ক্লাসে ফেরার ঘোষণা দেন এবং ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু না হলে আবারও ক্লাস বর্জন করে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

অবশেষে, গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেট সভায় ফলাফল ধসে দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি ও যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বুজতেছি না এ সরকার কি আমাদের, নাকি কাদের: ইব্রাহীম

কবি নজরুল ছিলেন মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত : ডা. ইরান

শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু মঞ্চ ও পোশাক কর্মশালা

এবার চতুর্থ সারির ক্লাবের কাছে হেরে ম্যানইউর বিদায়

ড. মাসুদের প্রচেষ্টায় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেলো ৩ ইউনিয়নের মানুষ

বিশ্বকাপ দলে সুযোগ না পেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশ স্পিনার

রুমিন ফারহানার দুঃখ প্রকাশ

বৃহস্পতিবার প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

ভারতে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়া, বড় ধাক্কায় আইপিএল ও ভারতীয় ক্রিকেট

পদক্ষেপ নিলে মনে হয় দেশেই থাকা হবে না : ডিসি মাসুদ

১০

রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সভা

১১

ডিআরইউতে মঞ্চ ৭১–এর কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি

১২

জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব অপরিহার্য: উপদেষ্টা

১৩

কনভেনশন হলে গেরিলা বৈঠকে গ্রেপ্তার শিমুল ৪ দিনের রিমান্ডে

১৪

শাহবাগে এসে ডিএমপি কমিশনারের ‘দুঃখ প্রকাশ’

১৫

ইনকিলাব সম্পাদককে লিগ্যাল নোটিশ পাঠাল ছাত্রশিবির

১৬

বিএনপি নেতাকে কোপাল যুবলীগ নেতা

১৭

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হাটহাজারী বিমানবন্দর

১৮

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে রুয়েট শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

১৯

ডাকসু নির্বাচন / ১৩২ শিক্ষার্থীকে খাওয়ালেন প্রার্থী, রিটার্নিং কর্মকর্তা বললেন আচরণবিধি লঙ্ঘন

২০
X