‘ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট ও ভ্রমণের প্রতি ভালোবাসা বেশি। খুবই মিষ্টভাষী ও শান্ত প্রকৃতির ছেলে নাঈমুর রহমান। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হাস্যোজ্জ্বল প্রাণবন্তভাবেই এগিয়ে চলা আর পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা সবসময় চিন্তা করত। তারই ফলে আজকের এই সফলতা।’ কথাগুলো বলছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার ঝাঐল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল স্বল্প মাহমুদ গ্রামের কৃষক পরিবারের সন্তান ৪১তম বিসিএস (প্রশাসন) মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করা মো. নাঈমুর রহমানের বাবা আব্দুল জলিল।
আব্দুল জলিল ও নাসরিন পারভীন দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে ছোট নাঈমুর রহমান। বড় মেয়েকে অনার্স পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়ে দেন। এরপর ছেলে নাইমুর রহমানকে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকেন তারা।
আরও পড়ুন : বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করেই বিসিএস ক্যাডার বেলায়েত
জানা যায়, সন্তানদের একটু ভালোভাবে মানুষ করতে পুরো পরিবার নিয়ে ১৯৯৭ সালে নাঈমুর রহমানের বাবা পাড়ি জমান চট্টগ্রামে। চাকরি নেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। চট্টগ্রামে চাকরির সুবাদে সেখানেই দীর্ঘ সময় অবস্থান। নাঈমুরের হাতেখড়ি প্রাথমিক এবং নিম্ন-মাধ্যমিক টিকিট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাই স্কুলে। সেখান থেকে ২০১০ সালে এসএসসি পাস করেন নাঈমুর। এরপর ২০১২ সালে মাধ্যমিকে চট্টগ্রাম কমার্স কলেজে পড়াশোনা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ সেশনের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগ থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেন নাঈমুর রহমান। স্নাতক শেষ বর্ষের পরীক্ষা দেওয়ার পর শুরু করেন বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির প্রস্তুতি। প্রথমে একটি স্কুলে এবং পরে বেসরকারি একটি ব্যাংকেও কিছুদিন চাকরি করেন। সবশেষে ২০১৯ সাল থেকে পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন।
নাঈমুর রহমান দৈনিক কালবেলাকে বলেন, কখনোই বসে থাকতে পছন্দ করতাম না। ছাত্রজীবন থেকেই বিভিন্ন টিউশন ও কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। পড়ালেখার পাশাপাশি একদম বসে থেকে যে প্রস্তুতি নেওয়া, সেটা আমার ভালো লাগত না। সেদিক থেকে আমি চেষ্টা করেছি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের মধ্যে থাকার। সেই সুবাদেই বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ইউনিভার্সিটিতে যখন পড়াশোনা করি, তখন হলে থাকা অবস্থায় আশপাশের বড় ভাইদের দেখেছি বিসিএস হওয়ার জন্য তাদের প্রচেষ্টা। তখন থেকেই বিসিএসের প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
আরও পড়ুন : ৪৫তম বিসিএস প্রিলির ফল প্রকাশ
বিসিএসের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, আমি প্রথমে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে নন-ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে নবম গ্রেডে সহকারী পরিচালক পদে চাকরি পেয়েছিলাম। তখন আমি পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনে (পিকেএসএফ) অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করি। আশা এর চেয়ে বড় কিছু পেতে চেষ্টা করব। ৪০তম বিসিএসে আবারও পরীক্ষা দেই। তখনো প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হই। কিন্তু অসুস্থতার কারণে আমি লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারিনি। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পর গত বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। অফিস শেষে সন্ধ্যায় যখন বাসায় ফিরে পিএসসির ওয়েবসাইটে ঢুকে দেখি ৪১তম বিসিএস (প্রশাসন) মেধা তালিকায় প্রথমেই আমার রোল নম্বর। শুরুতেই নিজের রোল দেখতে পেয়ে বিস্মিত হই এবং মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শুকরিয়া আদায় করি।
প্রশাসন ক্যাডার কেন পছন্দ জানতে চাইলে নাঈমুর বলেন, ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন আমার প্রথম চয়েজ ছিল। প্রশাসন ক্যাডারের পছন্দ করার প্রধান কারণ হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডারে কিছু বৈচিত্র্য আছে। এখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুযোগ থাকে। আপনি প্রশাসন ক্যাডারে থেকে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে পারবেন এবং তেমনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করার সুযোগ পাবেন। অন্য ক্যাডারে এই সুযোগটা কম। অন্য ক্যাডারে আপনি ওই ধরনের কাজই করতে হবে। এ জন্যই আমার প্রশাসন ক্যাডার পছন্দের একটা জায়গা। এ ছাড়াও প্রশাসন ক্যাডারে থেকে মানুষের খুব কাছ থেকে কাজ করা যায়, যেটা অন্য জায়গায় সুযোগ কম। প্রশাসন ও পুলিশের জায়গা থেকে মানুষের খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করা যায়, এটা আমার ভালো লাগে।
নাঈমুর রহমানের এই অর্জনে পুরো কামারখন্দ উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ জেলাবাসীর মনে আনন্দের জোয়ার বয়ে চলেছে। সবাই নাঈমুর রহমানের জন্য প্রাণভরে দোয়া করছেন।
নাঈমুরের এই সাফল্যে তার নিকটতম আত্মীয় নান্দিনা কামালিয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম বলেন, আজকে নাঈমুরের এই সফলতায় আমরা আনন্দিত। আমরা অত্র অঞ্চলের মানুষ গর্বিত। সে আমাদের যে সফলতা এনে দিয়েছে মহান আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া জানাই এবং তার আরও সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করছি।
মন্তব্য করুন