তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে উপস্থিত হয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শারমিন।
বুধবার (১৪ মে) বিকাল সোয়া ৩টার দিকে কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে যান তারা।
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লং মার্চে লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এই ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। এর প্রতিবাদে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যমুনা অভিমুখে কাকরাইল মসজিদের ক্রসিং মোড়ের সামনে বৃষ্টিতে ভিজেই অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে বিকাল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে আরও কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় শিক্ষার্থী মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবন যমুনা অভিমুখে রওয়ানা হয়। পদযাত্রা প্রথমে গুলিস্তান মাজার গেটে বাধার সম্মুখীন হন। পরে মৎস্য ভবনে ফের পুলিশের বাধা অতিক্রম করে যমুনা অভিমুখে এগিয়ে যেতে থাকেন জবি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে আসতেই অতর্কিত টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড, গরম পানি নিক্ষেপ করতে শুরু করে পুলিশ।
টিয়ারগ্যাস, লাঠি চার্জে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, ইংলিশ বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন, সহকারী প্রক্টর নাইম সিদ্দিকি, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমন, এছাড়া ঢাকা ট্রিবিউন এর জবি প্রতিনিধি সোহানুর রহমান, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসানসহ শতাধিক শিক্ষার্থী ।
পুলিশি হামলায় অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুরতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহতদের মধ্যে ওমর ফারুক, সাকিব, সুমন সর্দার, নাইমুর, সৌরভ, সাব্বির, জাহিদুল, ফারুক, আরিফ আসলাম, বিন মোহাম্মদ ইমন, রেদোয়ান, আসিফ, রহমান, শফিক, মুজাহিদ, নাহিদ হাসান, রায়হান, জিহাদ, আবু বক্কর, নিউটন ইসলাম, ফারুক হোসেন, রাসেল, মাহিদ, রফিক, জিসানুলসহ ৩০ জন ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছেন।
আহত শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারি ড. মো. রইছ উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার বিচার ও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডিসি মাসুদ আলম বলেন, যমুনার সামনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, আমার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ হামলা চালিয়েছে। আমার সহকারী প্রক্টরের ওপর পুলিশ আঘাত করেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পুলিশ অমানবিক আচরণ করেছে। এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাওয়া হবে না।
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষক প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ইউজিসিতে যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ও্ই দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীদের ৩ দফা দাবি হলো-
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
মন্তব্য করুন