কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জবির সিন্ডিকেট থেকে আওয়ামীপন্থিদের পদত্যাগের দাবি 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো। ছবি : কালবেলা গ্রাফিক্স

আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্যদের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ‘জবি ঐক্য’।

সোমবার (০২ জুন) বিকেলে আবারও এ দাবি তোলেন জবি ঐক্যের নেতারা।

আওয়ামী আমলে নিয়োগ পাওয়া সিন্ডিকেট সদস্যরা এখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বহাল তবিয়তে। সোমবার (০২ জুন) বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম সিন্ডিকেট সভায় উপস্থিত ছিলেন ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের দোসর শিক্ষক প্রতিনিধিরা। এসময় জবি ঐক্যের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় ফ্যাসিস্ট দোসরদের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ দাবি করেন তারা। পরে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ দাবি করে প্রশাসন বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেয় তারা।

স্মারকলিপিতে তারা চারজনের পদত্যাগের কথা উল্লেখ করেন। তারা হলেন- রাজশাহী অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন, জবির আইন অনুষদের ডিন খ্রিস্টিন রিচার্ডসন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম মনিরুজ্জামান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহম্মেদ লিসা। এ স্মারকলিপি দেওয়ার পর প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহম্মেদ লিসা উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলো সিন্ডিকেট। ফ্যাসিবাদের দোসরদের বাদ দিয়ে নতুন সিন্ডিকেট গঠন করার দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা, কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সদস্য থাকবেন ১৬ জন। উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রারসহ সরকার কর্তৃক মনোনীত ন্যূনতম দুজন যুগ্ম সচিব, সরকার কর্তৃক মনোনীত শিক্ষা ও গবেষণা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান হতে দুজন, ইউজিসি থেকে একজন, আচার্য থেকে মনোনীত দুজন শিক্ষাবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন থেকে তিনজন ও একাডেমিক কাউন্সিল থেকে তিনজন সিন্ডিকেট সদস্য হবেন।

জানা যায়, আজকের সিন্ডিকেট সভায় আমন্ত্রণ পেয়েছেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সানজিদা ফারহানা, লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মল্লিক আকরাম হোসেন ও আইন অনুষদের ডিন খ্রিস্টিন রিচার্ডসন, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম মনিরুজ্জামান, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইসা আহমেদ লিসা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন, জবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ড. রইছ উদ্দিন, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদসহ সরকার মনোনীত দুজন যুগ্মসচিব।

এর মধ্যে অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন ২০২১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের হলুদ প্যানেল থেকে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে একাডেমিক সভায় অশালীন ভাষা ব্যবহার করে সহকর্মী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুনকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক একেএম মনিরুজ্জামান ২০১৫ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সমর্থনে ২০১৭ সালে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামীপন্থি শিক্ষক হওয়ায় ২০২৩ সালে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।

জবির প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ড. লাইসা আহমদ লিসা একই সাথে ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি কর্মীদের আঁখড়া খ্যাত ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। অপর ফ্যাসিবাদের দোসর ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সনজিদা খাতুন ছিলেন তার সম্পর্কে শাশুড়ি। শাশুড়ি সনজিদা খাতুন ও ছায়ানটের পদক ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব খাটাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এখনো স্বৈরাচারের দোসর কীভাবে বসে? আমাদের ত্যাগ কি এজন্য ছিল? এক বছর হতে না হতেই আমাদের শিক্ষকরাও তাদের সাথে বসা শুরু করেছে। তাই একজন জুলাইযোদ্ধা হিসেবে আমি এটা হতে দিতে পারি না। দোসরদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে হবে।

জবি শাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সেক্টর থেকে স্বৈরাচারদের দোসরমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানোর পরও আজকে ফ্যাসিস্টদের নিয়ে সিন্ডিকেট মিটিং বসানো হয়েছে। আমরা চাই, অতিদ্রুত সময়ে স্বৈরাচারের দোসরদের সিন্ডিকেট থেকে বের করে জুলাই আন্দোলনের পক্ষের শক্তিকে নিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করতে হবে।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা নূর নবী বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এখনো এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছেন, যারা অতীতে স্বৈরাচারী সরকারের দমনমূলক নীতির সহযোগী ছিলেন। তারা ছাত্রদের উপর নিপীড়ন চালিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন, পুলিশে দিয়েছেন। এমন ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ক্ষমতায় রাখা দুঃখজনক ও লজ্জাজনক। আমরা দাবি জানাই, স্বৈরাচারের সহযোগীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অপসারণ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হোক মুক্ত চিন্তার নিরাপদ স্থান, কোনো শাসকের নয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দায়িত্ব ছাড়লেন নিউজিল্যান্ডের সফলতম কোচ

আ.লীগ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : জাতিসংঘ

এসএসসির ওএমআর পলিথিনে প্যাকেটের নির্দেশ

প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্বিতীয় ইন্টেরিম রিপোর্ট জমা দিল গুম সংক্রান্ত কমিশন

ভুয়া সনদপত্রে নিয়োগ, স্ত্রীসহ সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজনৈতিক দল ও জনগণের মতামত ছাড়া বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার : বিএনপি

ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে অর্থনীতি স্থবির হবে না : অর্থ উপদেষ্টা

ইকবাল খন্দকারের উপস্থাপনায় ‘ঈদের ছবি’

জাতীয় চার নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির বিভ্রান্তি নিয়ে প্রেস সচিবের স্ট্যাটাস 

এবার অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার কামাল মজুমদার 

১০

শিশুকে ধর্ষণ-হত্যা, আ.লীগ নেত্রীর বাড়িতে মিলল মরদেহ 

১১

শাকিব-নিশোর কাঁধে কাঁধ, বিস্ফোরক মন্তব্য জয়ের

১২

মিডফিল্ড সংকটে যেমন হতে পারে আর্জেন্টিনা একাদশ

১৩

‘প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা’

১৪

মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের ভুয়া খবরে বিভ্রান্তি

১৫

পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, আরও এক ইউটিউবার গ্রেপ্তার

১৬

যোনেক্সের ‘হয়তো’

১৭

ঘরে বঁটির কোপ খেয়ে রাস্তায় গিয়ে বললেন, ‘আমাকে বাঁচাও’

১৮

১৮ দিন এক ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকবে না যেসব এলাকায়

১৯

ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ

২০
X