চলতি বছরে একাদশ শ্রেণিতে (২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তিতে অনলাইন আবেদনে প্রথম ধাপের ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৫ হাজার ৩৩ জন শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো পছন্দের কলেজ পায়নি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও প্রথম ধাপে ভর্তির জন্য কলেজ মনোনয়ন পায়নি ৫ হাজার ৭৬৫ শিক্ষার্থী। আর একজন শিক্ষার্থীও পায়নি ৩৭৮টি কলেজ। ভর্তির জন্য একজনও আবেদন করেনি, এমন কলেজের সংখ্যা ১০।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে একাদশে ভর্তির কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে এ ফল প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ফল পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য জানা গেছে।
ভর্তির জন্য আবেদন করেছে করে ফি জমা দিয়েছে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৯৬২ জন শিক্ষার্থী। ভর্তির জন্য মনোনয়ন মনোনীত হয়েছে এ সংখ্যা মোট আবেদনকারী ৯৮ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মনোনয়ন পায়নি। সারা দেশে ভর্তিযোগ্য কলেজের মধ্যে ৯৫ শতাংশ কলেজ ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পেয়েছে। বাকি ৫ শাতংশ একজন শিক্ষার্থীও পায়নি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন গত ৩০ জুলাই থেকে শুরু হয়ে গত ১৫ আগস্ট রাত ৮টা পর্যন্ত চলে। এ সময়ে মোট আবেদন করেছেন ১০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ জন শিক্ষার্থী।
সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে—২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৩ জন। মাদ্রাসা বোর্ডে আবেদন করেছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকেও আবেদন পড়েছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক, ১ লাখ ২৯ হাজার ১৪ জন। প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ময়মনসিংগের আনন্দমোহন কলেজ। এই কলেজে ৯৭১টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৩৬ হাজারের বেশি। এরপর ঢাকা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। এই কলেজ ৩৫ হাজার আবেদন পড়েছে।
কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের কী হবে, জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ঢাকার কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক রিজাউল হক কালবেলাকে বলেন, কলেজ পছন্দের সময় সব ভালো মানের কলেজকে পছন্দ দিয়েছে। তাদের উচিত ছিল তার প্রাপ্ত নম্বরের দিকে নজর রেখে কলেজ পছন্দ দেওয়া। সবাই কলেজ পাবে। যারা প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি, তারা দ্বিতীয় ধাপে কলেজ পাবে।
তাদের ভর্তিতে সমস্যা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এসব শিক্ষার্থীদের আবেদন স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় ধাপে চলে যাবে। এখন শিক্ষার্থীদের অনলাইন আবেদনে গিয়ে পছন্দক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। কলেজ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে, তারা যেন পছন্দক্রমে নতুন কিছু কলেজ যোগ করে। তবে আমাদের আসনের কোনো সংকট নেই। সব শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ে আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট। এই ধাপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে ২৮ আগস্ট। এরপর আবার ৩১ আগস্ট ও আগামী ১ সেপ্টেম্বর তৃতীয় পর্যায়ে আবেদন করা যাবে। এভাবে বাছাই প্রক্রিয়ায় শেষ করে ৭ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভর্তির কাজ শেষ করা হবে। তারপর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু হবে।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো পছন্দের কলেজ পায়নি। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েও প্রথম ধাপে ভর্তির জন্য কলেজ মনোনয়ন পায়নি সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী। আর একজনও শিক্ষার্থী পায়নি এমন কলেজ ছিল ২২০টি।
গত ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এবার গড় পাসের হার এবং ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। সব পরীক্ষার্থী ফেল করেছে এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও।
এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ৪ হাজার ৮৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন। মানে ছয় লাখের বেশি পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।
মন্তব্য করুন