

চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণে (খাতা চ্যালেঞ্জ) বাজিমাত করেছেন ২,৩৩১ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ৫৫৫ জন শিক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। আগে ফলাফলে অকৃতকার্য হয় কিন্তু খাতা চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে পাস করেছে ১ হাজার ৪৭৯ জন। ফেল থেকে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন।
রোববার (১৬ নভেম্বর) ১১টি বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষণের ফলাফল বিশ্লেষণ করে শিক্ষার্থীর এসব গ্রেড ও ফল পরিবর্তনের তথ্য মিলেছে।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, গত মাসে প্রকাশিত ফলাফলে যে সকল পরীক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইনে খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন। ফলাফল পরিবর্তনের এই পরিসংখ্যানে বুঝা যায়. পরীক্ষকদের মূল্যায়নে ভুল থাকার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছিল। যারা খাতা চ্যালেঞ্জ করে তারাই এটা সংশোধন করাতে পারে। যারা আবেদন করে না তারা পরীক্ষকের ভুলের মধ্যেই থেকে যায়।
১১টি শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষণে সর্বোচ্চ ২,৩৩১ জন শিক্ষার্থীর গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। এদের মধ্যে ২০১ জন নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন এবং ৩০৮ জন ফেল থেকে পাস করেছেন। ৭৯ হাজার ৬৭১ জন শিক্ষার্থী ৩ লাখ ২ হাজার ৬১৬টি খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। চট্টগ্রাম বোর্ডে ফেল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই বোর্ডে ৩৯৩ জন শিক্ষার্থী ফেল থেকে পাস করেছেন এবং নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩২ জন। ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১০৩ জন এবং ফেল থেকে পাস করেছেন ২২৫ জন। যশোর বোর্ডে ৭২ জন নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এই বোর্ডের একজন পরীক্ষার্থী ফেল করেও পুনর্নিরীক্ষণে সরাসরি জিপিএ-৫ পেয়েছেন। দিনাজপুর বোর্ডে নতুন করে ৩৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন। সেইসঙ্গে ৮৫ জন শিক্ষার্থী নতুন করে পাস করেছেন। রাজশাহী বোর্ডে ১২১ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৯ জন। ফেল থেকে পাস করেছেন ৫৩ জন। বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে ১৮৫ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৯ জন, ফেল থেকে পাস করেছেন ১৯ জন। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ৫৮৭ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ জন। ১০৮ জন ফেল থেকে পাশ করেছেন। সিলেট বোর্ডে ১৪১ জনের ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে পাস করেছে ৩১ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ জন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯, ৭০১জন শিক্ষার্থী ৩১ হাজার ৮২৮ টি পত্রের জন্য আবেদন করেন। এরমধ্যে ২০৪ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৪ জন। এ ছাড়া ফেল থেকে পাস করেছেন ৪৫ জন। কারিগরি বোর্ডে মোট ২৪১ জনের ফল পরিবর্তন হযেছে। এরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১জন ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছে ১৫৮জন।
শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তারা জানান, পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন জমা পড়া উত্তরপত্রের চারটি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রের সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক রয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে ওঠানো হয়েছে কি না ও প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এসব পরীক্ষা করেই পুনর্নিরীক্ষার ফল দেওয়া হয়। তবে পরীক্ষক কোনো প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে নম্বর দিয়ে থাকেন সেটি পরিবর্তনের সুযোগ নেই। যেমন পরীক্ষক একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য ৮ নম্বর দিয়েছেন, সেটি ভুলবশত ৫ নম্বর হিসেবে গণনা করা হলো, এ ধরনের ভুল সংশোধন করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবে যেন পরীক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনায় রাখা হয়। কিন্তু এই ৬ নম্বরের জায়গায় ৮ নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই।
চ্যালেঞ্জ হওয়া খাতাগুলো তৃতীয় শিক্ষকদের দিয়ে পুনর্নিরীক্ষণ হয়। পুনর্নিরীক্ষণের সময় পরীক্ষক কী কী ভুল করেছেন, তা মন্তব্যের জায়গায় লিখতে বলা হয়। যেমন- একজন শিক্ষার্থী ৭৪ নম্বর পেয়েছেন কিন্তু পরীক্ষক ভুলে ওএমআর শিটে ৪৭ করে দিয়েছেন। অথবা একজন শিক্ষার্থী আটটি প্রশ্নের উত্তর লিখেছেন, পরীক্ষক খাতা মূল্যায়নের সময় সব প্রশ্নের নম্বর দিয়েছেন কিন্তু এক বা একাধিক উত্তরের নম্বর মোট নম্বরে যোগ করেননি। এসব ভুল মন্তব্যের ঘরে লিখে দিতে হবে। তৃতীয় শিক্ষকদের এসব মন্তব্য ধরে ধরে অভিযুক্ত শিক্ষকদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। পরীক্ষক প্রশ্নের যে নম্বর দিয়েছেন তা পরিবর্তন করা যাবে না।
প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন আসার পেছনে দ্রুততম সময়ে খাতা মূল্যায়ন, অন্যকে দিয়ে খাতা মূল্যায়ন, ভালো পরীক্ষক না পাওয়া, খাতা মূল্যায়নে সম্মানী কম হওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা গেছে, পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়নের পর নম্বরের যোগফলে ভুল করেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে উত্তরের নম্বর ঠিকমতো যোগ করা হয় না, এমনকি ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাট করতে গিয়ে অনেকে ভুল করছেন।
এ বিষয়ে পরীক্ষকরা জানান, ভুলের অন্যতম কারণ পরীক্ষা শেষে ৬০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের সময় বেঁধে দেওয়া। একজন পরীক্ষককে ১০-১২দিন সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এতে তিনি খাতা মূল্যায়নে তাড়াহুড়া করেন। ফলে ভুলের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে।
এ বিষয়ে আন্তঃবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং ঢাকা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালবেলাকে বলেন, চলতি বছর খাতা পুনর্নিরীক্ষণের ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক ছিলাম, যাতে কোনো শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। পরীক্ষকদের গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে এবার শিক্ষার্থী বা অন্য কাউকে দিয়ে খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে ছিলাম।
মন্তব্য করুন