ঈদ উৎসবের একটি দিন। তাই সুন্দর করে সেজেগুজে এ উৎসব উদযাপন করার থেকে ভালো আর কী হতে পারে? কিন্তু সাধারণ দিনের সাজ ও ঈদের দিনের সাজের মধ্যে রয়েছে কিছুটা পার্থক্য। সেগুলো কী—তাই আপনাদের জানাচ্ছেন বিউটি এক্সপার্ট আলেয়া শারমিন কচি। লিখেছেন বৃষ্টি শেখ খাদিজা
শারমিন কচি বলছিলেন, সাধারণ দিনের জন্য আমরা যে মেকআপ করি তা বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন আয়োজনের জন্য হয়ে থাকে। যেমন যারা কর্মজীবী নারী তারা করপোরেট লুক, যারা ব্যবসায়ী তারা এক ধরনের আর যাদের প্রতিনিয়ত বাইরে বের হতে হচ্ছে তারা ড্রেসের সঙ্গে মানানসই লুক নিয়ে থাকে। তাই সাধারণ দিন এবং ঈদের মেকআপের মধ্যে পার্থক্য তো আছেই। ঈদে দুই বা তিন বেলা কীভাবে সাজব? নতুন ড্রেস পরে কোথায় যাব, সে অনুযায়ী মেকআপ করা হয়। তাছাড়া ঈদের রাতে আমরা একটু জমকালো মেকআপ লুক নিতে পছন্দ করি। সারা বছর যেমন হোক না কেন, ঈদের ড্রেস একটু জাঁকজমক হয়ে থাকে। তাই ড্রেসের প্যাটার্নের সঙ্গে মিলিয়েই মেকআপ হয়ে থাকে। হতে পারে সেটি বোল্ড, সফট গ্ল্যাম, ন্যাচার, পাকিস্তানি বা সাউথ ইন্ডিয়ান লুক।
যেমন হওয়া চাই ঈদের পোশাক : মেকআপ কেমন হবে তার অনেকাংশ নির্ভর করে পোশাকের ওপরই। কারণ পোশাকের প্যাটার্ন, রং ও কাট অনুযায়ী দেওয়া হয় লুক। তাই ঈদের পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা। তিনি বলেন, ঈদ যেমন সামনে, ঠিক একইভাবে গত কিছুদিন ধরে তাপমাত্রাও অনেক বেশি। তাই বলা যায় ঈদের দিনটিতেও কিছুটা ভ্যাপসা গরম থাকার সম্ভাবনা আছে। আর ঈদুল আজহা হচ্ছে এমন একটি উৎসব যেখানে মানুষ পোশাকের থেকে কোরবানির পশু, গরুর মাংস কাটাকাটি ও রান্না নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। আর এ গরমে সবাই যেন সুতি কাপড় বেছে নেয় আমি তাই পরামর্শ দেব। পাশাপাশি হালকা রং এবং হালকা কাজও। কারণ পোশাক পরে যদি আরাম না পায় তাহলে কোরবানির ঈদের যেসব কাজ আছে, তা শান্তিতে করা যাবে না। ঈদের সকালে তো অবশ্যই পাঞ্জাবি পরবে। তবে সেটি যেন আরামদায়ক হয়। এ ক্ষেত্রে সুতির থেকে ভালো আর কিছু নেই। এরপর যদি কোথাও যেতে হয়, তখন বাচ্চা এবং তরুণ যারা আছে তারা যেন টি-শার্ট, ফতুয়া, কাতুয়া পরতে পারে। মেয়েরা বেছে নিতে পারে কুর্তি বা সালোয়ার কামিজ। স্কার্ট ও টপসের জুটিও মেয়েদের জন্য বেশ উপযোগী পোশাক হতে পারে এ ঈদে। সকাল বা দুপুরের জন্য এ পোশাক একদম মানানসই। এ ফ্যাশন ডিজাইনার আরও বলেন, কোরবানির কাজ শেষে যখন কোথাও ঘুরতে যাবে, এ জন্য হাফসিল্ক ম্যাটারিয়ালের তৈরি পোশাক পরতে পারেন। তবে এ সময় ছেলেদের পাঞ্জাবি এড়িয়ে চলাই ভালো। শার্ট বা ফতুয়া পরতে পারেন। আর রাতের পোশাকের ক্ষেত্রে গাঢ় রং বেছে নিতে পারেন। তবে যে পোশাকই পরুক না কেন, আবহাওয়াটা একটু বিবেচনায় রাখা উচিত।
বোল্ড ও গ্ল্যামারাস : যেহেতু ঈদের মেকআপ বলে কথা, তাই বোল্ড ও গ্ল্যামারাস লুক হওয়া চাই। এ জন্য একটি ফ্ললেস বেইস করে চোখ দুটি সাজিয়ে নিন রঙিন আইশ্যাডো দিয়ে। হতে পারে ইলেকট্রিক ব্লু বা গোলাপি রং। আইলাইনার দিয়ে টানতে পারেন উইং। আর ঠোঁট সাজাতে পারেন লাল বা যে কোনো গাঢ় রং।
সফট লুক : অনেকেই আছেন যারা বোল্ড বা গ্ল্যামার লুক পছন্দ করেন না। তবে তাদের জন্যও আছে একটি অপশন আর সেটি হলো সফট লুক। এ ক্ষেত্রে ত্বকের বেইস একদম লাইট রাখতে হবে। চোখে দিতে পারেন হালকা গোলাপি বা পিট কালার। এরপর একটি ব্রাউন আইলাইনার এবং নিউড লিপস্টিক দিয়ে শেষ করতে পারেন সাজ। তাই যারা একদম সফট লুক চান তাদের জন্য এ লুকটি ঈদের দিনের জন্য একদম পারফেক্ট।
গ্লিটার ও সাইন : চারদিকে দ্যুতি ছড়ানোর জন্য ঈদের থেকে ভালো আর কী হতে পারে? তাই এ ঈদে বেছে নিতে পারেন গ্লিটার ও সাইন মেকআপ লুক। এ জন্য বেছে নিন গ্লিটারি আইশ্যাডো। চোখের ইনার কর্নারে ভালোভাবে দিয়ে নিন আইশ্যাডো। তবে যদি বোল্ড লুক চান তাহলে মেটালিক আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি বোল্ড সাইনি লুক দেবে। এবার একটু বেশি সাইনের জন্য ব্যবহার করুন লিপগ্লস। রাতের জন্য এ লুক একদম পারফেক্ট। পাকিস্তানি বা সাউথ ইন্ডিয়ান : বর্তমান সময়ে বেশ ট্রেন্ডি পাকিস্তানি ও সাউথ ইন্ডিয়ান লুক। এ বিষয়ে শারমিন কচি বলেন, দুটি মেকআপ লুক দুই ধরনের। কারণ পাকিস্তানি লুকে একটু চাকচিক্য থাকে, অর্থাৎ সিমারি হয়। এটি অনেক বেশি গর্জিয়াস একটি লুক। দেখা যাচ্ছে, আমাদের দেশে যখন কোনো বড় পার্টি হয় বা বিভিন্ন বড় বড় আয়োজনে পাকিস্তানি লুক বেশি নিতে দেখা যাচ্ছে। তারপর সাউথ ইন্ডিয়ান। কারণ সাউথ ইন্ডিয়ান মেকআপ লুকে চাকচিক্য কিছুটা কম থাকে। অনেকটা আমাদের দেশীয় মেকআপের মতোই। শুধু পোশাকের ক্ষেত্রে একটু পরিবর্তন আসে। আর পাকিস্তানি মেকআপ লুকে চুল খুব সুন্দর করে বাঁধা হয়। তাই এ লুক ব্রাইডাল বা সেমি ব্রাইডাল কিংবা খুব গর্জিয়াস পার্টি মেকআপের ক্ষেত্রে করে থাকি। সবশেষ ঈদের জন্য যে মেকআপ লুকই বেছে নিন না কেন, তা সম্পূর্ণ উপভোগ করুন এবং নিজস্ব স্টাইলও প্রকাশ করুন। তবে অতিরিক্ত মেকআপ যেন না হয়। এ প্রসঙ্গে শারমিন কচি বলেন, বর্তমান সময়ে যেভাবে মেকআপ করা হয়ে থাকে, তা খুব সুন্দর দেখায়। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ফুল কাভারেজ মেকআপ। এ জন্য অতিরিক্ত কিছু না করে অল্পতেই ফুল কাভারেজ মেকআপ লুক দেওয়া হয়। তাছাড়া মেকআপের ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ যেটি মাথায় রাখতে হবে তা হলো রং। আমাদের স্কিন টোনের সঙ্গে যেন সবকিছু সুন্দরভাবে মিলে যায়, যেন সাদা হয়ে ভেসে না থাকে। এখন যেহেতু গ্রীষ্মকাল, তাই মেকআপ করার পর তা যেন ফেটে না যায়, এ জন্য প্রয়োজন ওয়াটার বেইজ। সহজে বলতে গেলে ওয়েলি বেইজ এড়িয়ে ম্যাট বেইজ করব। চোখে খুব বেশি রঙিন শ্যাডো ব্যবহার না করাই ভালো।
এখন চলছে গ্রীষ্ম মৌসুম তাই মেকআপ হওয়া চাই সামার বেইজ। এ প্রসঙ্গে এই বিউটি এক্সপার্ট জানান, মেকআপ করার আগে অবশ্যই স্কিনের তাপমাত্রা নিচে নামিয়ে নিতে হবে। কারণ স্কিনের তাপমাত্রা বেশি থাকলে মেকআপ বসবে না এবং ঘামের সঙ্গে মেকআপ নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মেকআপের আগে আমাদের কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। এগুলো হলো—
ক্লিনজিং : ক্লিনজিং যে কোনো স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রথম ধাপ। এ জন্য মেকআপের আগে ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার ব্যবহার করুন। সবসময় হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার চেষ্টা করুন।
আইস থেরাপি : মেকআপের আগে ত্বকে বরফ ঘষার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। মুখ পরিষ্কারের পর বরফের টুকরো নিয়ে মুখে আলতো ঘষুন। প্রক্রিয়াটি রক্তনালিগুলো সংকুচিত করতে সহায়ক এবং ত্বকের ফোলা ভাব কমায়। ক্লান্ত চোখকে শান্ত করে এবং আপনার ত্বকের পোরস (ছিদ্র) কমাতে সাহায্য করবে। এটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী।
টোনার : ক্লিনজিং করার পরও অনেক সময় ত্বকে কিছু ময়লা থেকে যায়। তাই ক্লিনজিংয়ের পর টোনার ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। কারণ টোনার ত্বকের উপরিভাগ থেকে যে কোনো অবশিষ্ট ময়লা দূরীকরণে সহায়ক। এটি ত্বকে থাকা ছিদ্রের আকার সংকুচিত ও ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে।
আইক্রিম : টোনারের পর সাধারণত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা হয়; কিন্তু ময়েশ্চারাইজারের আগে আইক্রিম ব্যবহারের চেষ্টা করুন। এটি চোখের চারপাশে ত্বক হাইড্রেট রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া যে কোনো আই লুক করার আগে আইক্রিম ব্যবহার করলে ফ্ললেস লুক পাওয়া যায়।
ময়েশ্চারাইজার : ত্বককে হাইড্রেট রাখার জন্য ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। ময়েশ্চারাইজার ত্বককে উজ্জ্বল ও নরম রাখতে সাহায্য করে। ফলে ফাউন্ডেশন ও কনসিলার প্রয়োগ করা সহজ হয়। এ ছাড়া এটি মেকআপকে দীর্ঘক্ষণ মসৃণ রাখে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। তবে ময়েশ্চারাইজার ত্বকে ঘষবেন না বরং চেপে চেপে দেবেন।
লিপবাম : ত্বকের সঙ্গে ঠোঁটেরও হাইড্রেশন প্রয়োজন। শুষ্ক ঠোঁটে লিপস্টিক দিলে ফ্ল্যাকি দেখাতে পারে। এমনকি ফেটে যেতে পারে। তাই ঠোঁটের হাইড্রেশন বজায় রাখতে সবসময় লিপবাম ব্যবহার করুন। মেকআপের আগে লিপবাম ব্যবহার করলে শুকানোর জন্য পাঁচ মিনিট সময় দিন। এর ফলে ঠোঁট হাইড্রেশন, মসৃণ ও নরম হবে। মসৃণ ঠোঁটে লিপস্টিক ব্যবহার করলে ফেটে যাওয়ার শঙ্কা থাকে না।
মন্তব্য করুন