একটা সময় ছোটপর্দায় নিয়মিত দেখা যেত অভিনেতা মাজনুন মিজানকে। কিন্তু বর্তমানে টিভিতে তার উপস্থিতি কম। কেন দূরে সরে গেলেন তিনি, এই প্রশ্ন ঘুরছে মাজনুন ভক্তদের হৃদয়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে কোথাও সিভি দেননি মাজনুন। আবেগের তাড়নায় অভিনয়টাই চালিয়ে গেছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু একপর্যায়ে উপলব্ধি করতে পারলেন, অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়াটা কঠিন। সেটাকে পেশা হিসেবে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত ছিল তার। সংবাদমাধ্যমকে এসব কথা জানিয়েছেন অভিনেতা নিজেই।
মাজনুন মিজানের ভাষ্য, অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিয়ে টিকে থাকা কঠিন। তবে এই সত্যিটা বুঝতে দেরি করে ফেলেছেন তিনি। বিয়ে করে দুই সন্তানের বাবা হয়েছেন এই অভিনেতা। পরিবারে রয়েছেন তার মাও। সংসার বড় হলেও যুক্ত ছিলেন শুধু অভিনয়ের সঙ্গেই। কিন্তু করোনা মহামারি চলাকালে যখন শুটিং বন্ধ থাকল, তখন দেখলেন—তার কোনো সঞ্চয় নেই। যা আছে তা দিয়ে পরিবারকে একমাসও টানা যাবে না। তখন বেশ ধাক্কা খেলেন এই অভিনেতা। সিদ্ধান্ত নিলেন অভিনয়ের পাশাপাশি কিছু করার। সেই চিন্তা থেকেই শুরু করেন ‘বায়িং হাউসের’ ব্যবসা।
একটা সময় অভিনয় ছাড়া আর কোনো উপার্জন ছিল না তার। তখন পছন্দ না হলেও কিছু চরিত্রে কাজ করতে হতো তাকে। মন খারাপ করেই অভিনয় করতেন। মনকে সান্ত্বনা দিতেন শুধু এই ভেবে যে, দিন শেষে সেই কাজ থেকে কিছু টাকা আসবে। এখন সেই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গল্প ও চরিত্র পছন্দ হলেই সেই কাজ করছেন এই অভিনেতা।
মাজনুন মিজানের অভিযোগ, এখানে চরিত্রাভিনেতা অবহেলিত। তারা আর্থিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এভাবে কোনো একটি পেশা চালিয়ে যাওয়া যায় না। পেশা হিসেবে নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সময়েও এ দেশের নাট্যাঙ্গন পরিচ্ছন্নভাবে ডেভেলপড হয়নি।
মিডিয়া কর্মীদের অনেকেই খারাপ মনে করেন। এ জন্য কিছু ব্যক্তির কর্মকাণ্ডকে দায়ী করেছেন মাজনুন মিজান। নিজের জীবন থেকে একটি উদাহরণ টেনে জানান, শুধু মিডিয়ায় কাজ করেন বলে ব্যাংক তাকে লোন দেয়নি। কেননা সিনিয়র কিছু অভিনয়শিল্পী ব্যাংকের সঙ্গে এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন, যে কারণে ব্যাংক এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।
শুটিং সেটের বৈষম্য নিয়েও মুখ খুলেছেন মাজনুন মিজান। প্রধান চরিত্রের তুলনায় চরিত্রাভিনেতারা বেশ অবহেলিত হন। শুটিংয়ে চরিত্রাভিনেতাকে চা-নাশতা চেয়ে খেতে হয়, অন্যদিকে প্রধান অভিনেতাদের পেছনে খাবার ঘোরে। যদিও মাজনুন মিজানের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেনি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এ কথা বলেছেন তিনি।
শিল্পীদের পারিশ্রমিকেও বৈষম্য আছে বলে দাবি করেছেন অভিনেতা মিজান। জানিয়েছেন, চরিত্রাভিনেতাদের সঙ্গে ছলচাতুরি করা হয়। এসব থেকে দূরে সরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু এই অঙ্গনে এখনো এমন অনেকেই আছেন যারা আয়ের ভিন্ন পথ খুঁজছেন। এদের সংখ্যা ৯০ ভাগ বলে জানিয়েছেন এই অভিনেতা। তার মতে, ৯০ ভাগ অভিনয়শিল্পী মুখ বুঁজে অপমান সহ্য করে শুটিং করে যাচ্ছেন।
মন্তব্য করুন