কোটা আন্দোলনের সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) পরিদর্শন করেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা। গত সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে বিটিভির ঢাকা কেন্দ্রের কার্যালয়ে এসেছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, টিভি ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ, ফরিদুর রেজা সাগর, শাইখ সিরাজ, নাট্যব্যক্তিত্ব সারা যাকের, লাকী ইনাম, হারুন অর রশিদ, ঝুনা চৌধুরী, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজানুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহসহ সংস্কৃতিক অঙ্গনের আরও ব্যক্তিরা।
এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিটিভির মহাপরিচালক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তারসহ বিটিভির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বিটিভি ভবন পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা আবেগঘন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বিটিভির সঙ্গে আমাদের একটা আবেগ জড়িয়ে আছে। আজকে যে ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র আমরা দেখলাম, তা আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে এভাবে ধ্বংস করা সম্ভব!’
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘অসম্ভব খারাপ লাগার দৃশ্য অবলোকন করতে হলো। যেটি হয়তো আমাদের আমৃত্যু বহন করতে হবে। শুধু তদন্তের নামে তদন্ত চাই না, আমরা একটা শ্বেতপত্র চাই।’
বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, ‘এটা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমি চাই, এই ধরনের মনোবৃত্তি থেকে এই দুর্বৃত্তরা মুক্ত হোক। মানসিকতার যেন পরিবর্তন ঘটে সবার মধ্যে।’
গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব ফরিদুর রেজা সাগর বলেন,‘ বিটিভিতে আছে আমার অনেক অনেক স্মৃতি। সেটা যে এভাবে আগুনে জ্বলে যাবে, এটা কল্পনা করাও কঠিন’।
শাইখ সিরাজ বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের কৃষ্টি, শিল্প-সংস্কৃতির কীরকম রূপ হবে সেটার দিক নির্দেশনা বাংলাদেশ টেলিভিশন দিয়েছে। সেই টেলিভিশন এইভাবে ধ্বংস হয়ে গেল!’
সাারা যাকের বলেন,‘বিটিভির এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে হতবাক হয়েছি, ব্যথিত হয়েছি।’
লাকী ইনাম জানান, ‘বিটিভির আর্কাইভে কত রকমের কত মূল্যবান কতকিছু ছিল। সব কিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। এটা ভাবা যায়!’
নাট্যব্যক্তিত্ব ও বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা খরচ করে হয়তো এটার ধ্বংসচিত্র পুঃনির্মাণ সম্ভব কিন্তু মিউজিয়ামে যে ঐতিহ্য এবং একটা দেশকে, দেশের ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা ছিল, এটা আমরা কোথায় পাব? এটা তো আর পাওয়া যাবে না।’
ঝুনা চৌধুরী বলেন, ‘এখানে যদি না আসতাম তাহলে কোনোভাবেই কল্পনা করতে পারতাম না, এত ম্যাসিভ অ্যাটাক হয়েছে, এভাবে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়েছে। এর কোনোকিছুই রিপিয়ার সম্ভব না’।
গোলাম কুদ্দুস তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘শত শত বছরের সংস্কৃতির যে নানা উপাদান সংরক্ষিত ছিল বিটিভিতে, তার সবগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার অপচেষ্টা আমরা অবলোকন করলাম।’
আহকাম উল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের তরুণ প্রজন্ম এটি করতে পারে না। এটির পেছনে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শক্তি এবং তাদের প্রজন্মরাই এরকম কাজ করতে পারে।’
বিটিভি পরিদর্শন শেষে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্টজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোটা আন্দোলন সহিংসতায় আহতদের দেখতে যান ও তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
মন্তব্য করুন