কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৪ পিএম
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে শিল্পীদের মতপ্রকাশ

বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে শিল্পীদের মতপ্রকাশ। ছবি : সংগৃহীত
বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে সহিংসতার বিরুদ্ধে শিল্পীদের মতপ্রকাশ। ছবি : সংগৃহীত

শোকাবহ আগস্ট মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একঝাঁক তারকা। তাদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। ‘সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা’- এই স্লোগান ব্যানারে ধারণ করে বিটিভি প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে তাদের মতপ্রকাশ করেন।

উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদ, বরেণ্য অভিনেত্রী সুজাতা, নায়ক রিয়াজ, অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, নিপুন আক্তার, নাট্যব্যক্তিত্ব শমী কায়সার, আজিজুল হাকিম, রোকেয়া প্রাচী, সুইটি, হৃদি হক, জ্যোতিকা জ্যোতি, সাজু খাদেম, সোহানা সাবা, চন্দন রেজা, সংগীতশিল্পী শুভ্র দেব, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, এস এ হক অলিক, খোরশেদ আলম খসরুসহ নাটক ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। বিটিভিতে এ ধ্বংসযজ্ঞ কেন, এর পেছনে কারা? সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান শিল্পীরা। পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।

ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ‘আমি দেখেছি, ছাত্ররা যে কোটার আন্দোলনে নেমেছিল সে কোটার পক্ষে আমরা সকলেই ছিলাম, কিন্তু আন্দোলনে এই ছাত্রদের ঢাল করে একদল মানুষরূপী পশু জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আমাদের এ দেশটিকে। দেশটি হয়তো আবার আমরা কষ্ট করে ঠিক করে ফেলব কিন্তু যে প্রাণগুলো ঝরে গেল সেগুলো আর আমরা আর কোনোদিন ফিরে পাব না। আজকে আমরা বিটিভিতে এসেছি। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের একটি জায়গা এটি। সে বিটিভিতে আগুন কেন? এ অগ্নিসন্ত্রাসী কারা? তাদের খুঁজে বের করতে হবে, চিহ্নিত করতে হবে। যতগুলো প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, আপনারা যদি দেখেন, বাচ্চারা যদি দেখে বুঝতে পারবে না সুপরিকল্পিতভাবে এসব করা হয়েছে। তাদের বিচার চাই। আজ আমরা সব অঙ্গনের শিল্পীরা এখানে একত্রিত হয়েছি, আমাদের সংহতি প্রকাশ করার জন্য। সব সহিংসতার বিরুদ্ধে আমরা।’

শমী কায়সার বলেন, ‘সংস্কৃতি কর্মীরা আমরা দাঁড়িয়েছি আজ শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে। আগস্ট মাস আমাদের একটি প্রতিবাদের মাস। যে মাসে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে। সেরকম একটি মাসে আমরা আবারও দাঁড়াব এই বাংলাদেশ টেলিভিশন চত্তরে সেটা আমাদের জীবদ্দশাতেও কখনো ভাবিনি। আজকে আমরা ব্যথিত, ক্ষুব্ধ, মর্মাহত। কারণ যে বাংলাদেশ টিলিভিশন বাঙালির সংস্কৃতির ধারক ও বাহক, বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করেছে- সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসে এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মর্মাহত হয়েছি। এখানে আমরা বেড়ে উঠেছি, শিল্পী হিসেবে এই প্রাঙ্গণে বড় হয়েছি। এই ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের সকলের আমরা বিচার চাই। বাংলাদেশে এরকম নৃশংসতাা, এমন ধ্বংসযজ্ঞ, এতো প্রাণহানী আমরা আর চাই না।’

রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়তকে ব্যাহত করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল সব সময় থাকে। এই গণতান্ত্রিক দেশে বঙ্গবন্ধুকন্যা সবাইকে তার অধিকারের কথা বলতে, দাবির কথা বলতে সুযোগ দিয়েছেন। এই ছাত্রদের আন্দোলনকে ঘিরে জঙ্গি হিসেবে, দুঃস্কৃতকারী হিসেবে যারা সহিংসতার রাজনীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চাই। জীবনের যেমন মূল্য আছে তেমনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের মূল্য আছে। আমরা প্রতিবাদ জানাতে চাই। নিরীহ ছাত্রদের আন্দোলনকে যারা ছিনতাই করে সারা দেশে সহিংসতা চালিয়েছে এসব রাষ্ট্রদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আমরা দাঁড়াতে চাই।’

আজিজুল হাকিম বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশনের ওপর যে নৃশংস হামলা হয়েছে তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। আমি এই আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যেসব প্রাণ আমরা হারিয়েছি, তাদের সবার বিদেহী আত্মার প্রতি আমি সমবেদনা জানাই, আত্মার শান্তি কামনা করি। আমরা সুন্দর বাংলাদেশ চাই, সম্প্রতির বাংলাদেশ চাই, স্বস্তির বাংলাদেশ চাই, সন্ত্রাসের বাংলাদেশ চাই না। সবাই মিলে আসুন, দেশটাকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাই। আর সন্ত্রাস আমাদের কাম্য নয়।’

শুভ্র দেব বলেন, ‘ এই বিটিভি ছিল বাংলাদেশের প্রখ্যাত সব শিল্পীদের পদচারণামুখর একটি পবিত্র জায়গা। আমি বিশ্বাস করি, কোনো বাংলাদেশি এই বিটিভিতে আক্রমণ করতে পারে না, আক্রমণ করতে পারে কোনো টিক্কাখানের বংশধর। প্রত্যেকটা শিল্পীর হৃদয়ে যে ক্ষরণ হয়েছে, যে ক্ষত হয়েছে তা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। যারা এ ন্যক্কারজনক কাজ করেছে তাদের সকলকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। যেসব প্রাণহানী হয়েছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচার হবে এটাই আমার কাম্য।’

সুজাতা বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছে, তাদের খুঁজে বের করে এর বিচার হোক। আমরা শিল্পীরা যেন ঐক্যবদ্ধ হই এবং যেন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। যখন দেশটা উন্নতির দিকে তখনই শত্রুরা আঘাত হানে, ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করে দেয় দেশকে। আমরা শিল্পীরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছিলাম, আছি, থাকব। দেশজুড়ে জ্বালাও, পুড়াও এ সন্ত্রাস আমরা চাই না, আমরা মানি না।’

এ ছাড়াও সহিংসতার বিরুদ্ধে মতপ্রকাশ করেন পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, হৃদি হক, সোহানা সাবা, সাজু খাদেম, অরুণা বিশ্বাস, নিপুনসহ উপস্থিত অনেক তারকাই।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দক্ষিণ সিরিয়ায় ইসরায়েলের আবারও হামলা

সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কমাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র   

আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৪২ জনকে স্ট্যান্ড রিলিজ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘তুই’ বলায় তুমুল সংঘর্ষ, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বর্জন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই : গণতন্ত্র মঞ্চ 

চার দেশে বন্যায় ১৫০০ মৃত্যুর পর নতুন আতঙ্ক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ স্থগিত

শাহজালালে ‘এয়ারপোর্ট মিনি ফায়ার এক্সারসাইজ-২০২৫’ সম্পন্ন

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম

ইউএনও হলেন লাক্স সুন্দরী সোহানিয়া

১০

তারেক রহমানের ৩১ দফায় বদলে যাবে শরীয়তপুর : নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১১

এরশাদ-হাসিনা কারও সঙ্গেই আপস করেননি খালেদা জিয়া : মিল্লাত

১২

মান্নাকে ইসলামী ব্যাংকের চূড়ান্ত নোটিশ, আইনি ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি

১৩

সব দল ইসলামের পতাকাতলে সমবেত হবে ইনশাআল্লাহ : অধ্যাপক মুজিবুর

১৪

মনোনয়নের খবর শুনে উচ্ছ্বাস, কিছুক্ষণ পর বিএনপি নেতার মৃত্যু

১৫

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যা / সাবেক বিচারপতি-হুইপসহ ১৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট

১৬

ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : ধর্ম উপদেষ্টা

১৭

ববি উপাচার্য দপ্তরে ‘মুলা’ ঝুলিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ

১৮

ধেয়ে আসছে তীব্র শীত, দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ

১৯

‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি

২০
X