

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউন সিস্টেম) সুস্থ থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের শরীরকে সর্দি-কাশি, ফ্লু এবং নানা ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খেলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখা সম্ভব।
আজকে এমন ১৫টি খাবারের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সর্দি লাগলে অনেকেই আগে ভিটামিন সি খেতে শুরু করেন। ভিটামিন সি শরীরের সাদা রক্তকণিকা তৈরি বাড়াতে সাহায্য করে, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
বেশিরভাগ সাইট্রাস ফলেই ভিটামিন সি বেশি থাকে। যেমন— জাম্বুরা, কমলা, ক্লেমেন্টাইন, লেবু, কাগজি লেবু ইত্যাদি।
শরীর নিজে ভিটামিন সি তৈরি বা জমা রাখতে পারে না, তাই প্রতিদিন এটি খাওয়া দরকার। প্রতিদিনের প্রয়োজন:
নারীদের জন্য: ৭৫ মি.গ্রা.
পুরুষদের জন্য: ৯০ মি.গ্রা.
সাপ্লিমেন্ট নিলে দিনে ২০০০ মি.গ্রা.-এর বেশি না নেওয়াই ভালো।
১০০ গ্রাম লাল বেল পেপারে প্রায় ১২৮ মি.গ্রা. ভিটামিন সি থাকে, যা একটি কমলার তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি। এতে বিটা-ক্যারোটিনও থাকে। ভিটামিন সি ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং বিটা-ক্যারোটিন চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
ব্রকলিতে ভিটামিন এ, সি, ই, ফাইবার এবং অনেক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর সবজির একটি। এটির পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে কম রান্না করা ভালো। ভাপ দেওয়া বা হালকা মাইক্রোওয়েভ করলে পুষ্টি বেশি থাকে।
রসুন শুধু খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বহু বছর ধরে এটি ওষুধ হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। রসুন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করতে পারে। এতে থাকা অ্যালিসিন নামের উপাদান ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
অসুস্থ হলে অনেকেই আদা খান। আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা গলা ব্যথা ও অন্যান্য প্রদাহজনিত সমস্যায় উপকারী। আদা বমিভাব কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
পালং শাকে ভিটামিন সি ছাড়াও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হালকা রান্না করলে ভিটামিন এ সহজে শরীরে শোষিত হয়।
যেসব দইয়ের গায়ে “লাইভ ও অ্যাকটিভ কালচার” লেখা থাকে, সেগুলো ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে। চিনি দেওয়া দইয়ের বদলে সাধারণ দই খাওয়া ভালো। ফল বা অল্প মধু দিয়ে মিষ্টি করা যেতে পারে। দইয়ে ভিটামিন ডি থাকলে তা আরও উপকারী।
ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ইমিউন সিস্টেম ভালো রাখতে সাহায্য করে। কাঠবাদামে ভিটামিন ই ও স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণ কাঠবাদামই যথেষ্ট।
সূর্যমুখী বীজে ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি৬ ও ই থাকে। এতে সেলেনিয়ামও আছে, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরকে সাহায্য করে।
হলুদ অনেক রান্নায় ব্যবহৃত হয় এবং এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। হলুদের কুরকুমিন নামের উপাদান ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে পারে এবং জীবাণুনাশক গুণও রয়েছে।
গ্রিন ও ব্ল্যাক টি দুটিতেই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তবে গ্রিন টিতে EGCG নামের একটি শক্তিশালী উপাদান বেশি থাকে। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
একটি ছোট পেঁপেতে দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি সম্পূর্ণ পাওয়া যায়। পেঁপেতে প্যাপাইন নামের এনজাইম থাকে, যা হজমে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।
কিউইতে ভিটামিন সি, কে, ফলেট ও পটাশিয়াম থাকে। এটি শরীরের সাদা রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে।
সর্দি হলে চিকেন স্যুপ খাওয়ার উপকার আছে। এটি শরীরের প্রদাহ কমায়। মুরগি ও টার্কির মাংসে ভিটামিন বি৬ থাকে, যা রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
কিছু শেলফিশে জিঙ্ক থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুব জরুরি। জিঙ্কসমৃদ্ধ শেলফিশ: অয়েস্টার, কাঁকড়া, লবস্টার, মাসেল ইত্যাদি।
তবে জিঙ্ক বেশি খেলে উল্টো ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হতে পারে। প্রতিদিনের প্রয়োজন:
পুরুষ: ১১ মি.গ্রা.
নারী: ৮ মি.গ্রা.
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে কোনো একক খাবারই যথেষ্ট নয়। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।
ফল, সবজি, বাদাম, দই এবং প্রাকৃতিক মসলা দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখলে শরীর সুস্থ থাকে এবং রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বাড়ে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সঠিক খাবারের পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়ামও জরুরি।
সূত্র : Healthline
মন্তব্য করুন