

আমরা অনেকেই মনে করি, খাবার যত বেশি ফ্রিজে রাখা যায় ততই ভালো। তাই বাজার থেকে কিছু আনলেই না ভেবে সরাসরি ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সব খাবার ফ্রিজে রাখার জন্য তৈরি নয়। বরং কিছু খাবার ফ্রিজে রাখলে তাদের স্বাদ নষ্ট হয়, গঠন বদলে যায়, এমনকি দ্রুত খারাপও হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক খাবার ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়, বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় রাখলেই সবচেয়ে ভালো থাকে।
খাবার সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জানা না থাকলে আমরা অজান্তেই খাবারের গুণগত মান কমিয়ে ফেলি এবং অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় খাবার নষ্টও হয়ে যায়। তাই কোন খাবার ফ্রিজে রাখা উচিত আর কোনটা নয়, এই বিষয়টি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই লেখায় এমন ১২টি খাবারের কথা সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো ফ্রিজে না রেখে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলে স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও স্থায়িত্ব- সবকিছুই ভালো থাকে।
টাটকা টমেটো
টমেটো ঘরের তাপমাত্রায় রাখলে এর স্বাদ ও গঠন সবচেয়ে ভালো থাকে। খুব পাকা বা কাটা টমেটো ফ্রিজে রাখা যেতে পারে, তবে এতে স্বাদ কিছুটা কমে যেতে পারে। তাই টাটকা টমেটো কেনার সময় আগে থেকেই কী কাজে ব্যবহার করবেন, তা ঠিক করে নেওয়াই ভালো।
আপেল
আপেল ফ্রিজে রাখা যায়, তবে ফ্রিজ ছাড়া ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় (যেমন প্যান্ট্রি) জাল ব্যাগ বা ঝুড়িতে রাখলেও ভালো থাকে। কাটা আপেল অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে। অল্প লেবুর রস দিলে রঙ কালচে হওয়া কমে। ১ বা ২ দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়া ভালো।
পেঁয়াজ
পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। বাতাস চলাচল করে এমন ঠান্ডা ও অন্ধকার জায়গায় রাখলে পেঁয়াজ প্রায় দুই মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। কাটা পেঁয়াজ ঢাকনাযুক্ত পাত্রে রেখে ফ্রিজে রাখতে হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে।
কলা
কলা ফ্রিজে রাখলে এর খোসা কালো হয়ে যায়, কিন্তু ভেতরের অংশ ঠিকমতো পাকে না। এতে স্বাদ ও গঠন দুটোই নষ্ট হয়। খুব পাকা কলাও কাউন্টারে কয়েক দিন রাখা যায়।
পাউরুটি
টাটকা পাউরুটি ফ্রিজে রাখলে খুব দ্রুত শুকিয়ে যায়। তাই বাতাস ঢোকে না এমন ব্যাগ বা পাত্রে কাউন্টারে রাখা ভালো। ৩ দিনের মধ্যে খেয়ে নেওয়া উত্তম। এরপর বেশি দিন রাখতে চাইলে ফ্রিজে না রেখে ফ্রিজারের বদলে ফ্রিজারে (ফ্রিজের ফ্রিজার অংশে) রাখা ভালো।
তুলসী পাতা (বেসিল)
বেসিল কখনোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। এতে পাতা নরম ও কালো হয়ে যায়। ডাঁটা পানিতে ডুবিয়ে ঘরের তাপমাত্রায়, সরাসরি রোদ থেকে দূরে রাখুন। কয়েক দিন পর পর পানি বদলালে ভালো থাকে।
বেগুন
বেগুন ফ্রিজে রাখলে নরম ও তেতো হয়ে যেতে পারে। তাই ঠান্ডা, শুকনো জায়গায় রেখে কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যবহার করা ভালো। কলা থেকে দূরে রাখুন, কারণ কলা থেকে বের হওয়া গ্যাস বেগুন দ্রুত পাকিয়ে ফেলে।
তরমুজ ও অন্যান্য বাঙ্গি জাতীয় ফল
পুরো তরমুজ, খরমুজ বা হানিডিউ সাধারণত কাউন্টারে রাখাই ভালো। তবে যদি দোকান থেকে কিনতে গিয়ে দেখেন ফলটা ঠান্ডা, তাহলে বুঝবেন এটি আগেই ফ্রিজে ছিল। সে ক্ষেত্রে কেটে ফ্রিজে রাখাই ভালো। কাটা ফল অবশ্যই ঢাকনাযুক্ত পাত্রে ফ্রিজে রেখে ২–৩ দিনের মধ্যে খেতে হবে।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
অনেকে মনে করেন অলিভ অয়েল ফ্রিজে রাখলে ভালো থাকে, কিন্তু আসলে তা প্রয়োজন নেই। ফ্রিজে রাখলে তেল জমে যেতে পারে, আবার বের করলে তরল হয়- এই বারবার ঠান্ডা-গরম তেলে চাপ সৃষ্টি করে। ভালো হলো, ঢাকনা ভালো করে বন্ধ করে অন্ধকার ও ঠান্ডা আলমারিতে রাখা এবং খোলার কয়েক মাসের মধ্যে ব্যবহার করা।
আলু
না ধোয়া আলু বাতাস চলাচল করে এমন ঠান্ডা ও শুকনো জায়গায় রাখা ভালো। দুই সপ্তাহের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত। ফ্রিজে রাখলে আলু কালচে হয়ে যেতে পারে এবং অস্বাভাবিক মিষ্টি লাগে।
কাটা আলু পানিতে ডুবিয়ে রেখে এক দিনের মধ্যে ব্যবহার করুন।
সস ও কনডিমেন্টস
সয়া সস, ঝাল সস, মধু, সাধারণ চিনাবাদাম মাখন - এসব ফ্রিজে রাখার দরকার নেই। তবে যেসব কনডিমেন্টে দুধ বা ডিম থাকে, সেগুলো ফ্রিজে রাখা উচিত। প্যাকেটের নির্দেশনা দেখে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো।
অ্যাভোকাডো
কাঁচা বা পাকা, দুটোই কয়েক দিন কাউন্টারে ভালো থাকে। পাকাতে চাইলে পাশে একটি কলা রাখুন। পুরোপুরি পেকে গেলে, কাটা না হলে ফ্রিজে রাখা যায়।
সব খাবার ফ্রিজে রাখাই যে সবচেয়ে ভালো- এই ধারণা সব সময় ঠিক নয়। অনেক খাবার ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখলে স্বাদ ভালো থাকে এবং দীর্ঘস্থায়ীও হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—খাবার কাটা হলে অবশ্যই ফ্রিজে রাখতে হবে। সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণ করলে অপচয় কমে, স্বাদ ভালো থাকে এবং খাবারও থাকে নিরাপদ।
সূত্র : EatingWell
মন্তব্য করুন