

বাড়িতে রাখা আলু অনেক দিন পড়ে থাকলে চোখ গজায় বা অঙ্কুর বের হয়। এতে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এমন আলু কি খাওয়া নিরাপদ, নাকি ফেলে দেওয়া উচিত। কেউ মনে করেন, অঙ্কুর কেটে ফেলে দিলেই সমস্যা নেই। আবার অন্যরা সতর্ক করেন, অঙ্কুরিত আলু নাকি হতে পারে বিষাক্ত, এমনকি প্রাণঘাতীও।
বিশেষজ্ঞদের তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, বিষয়টি মোটেও হালকাভাবে নেওয়ার মতো নয়।
কেন বিপজ্জনক হতে পারে অঙ্কুরিত আলু
আলুতে স্বাভাবিকভাবেই থাকে সোলানিন ও চাকোনিন নামের দুই ধরনের গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড। স্বল্পমাত্রায় এসব উপাদান উপকারী হলেও মাত্রার অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
আলু অঙ্কুরিত হলে এই বিষাক্ত উপাদানের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে। ফলে অঙ্কুরিত আলু খেলে কিছু সময়ের মধ্যেই দেখা দিতে পারে বমি, ডায়রিয়া বা পেটব্যথা।
আর মাত্রা বেশি হলে হতে পারে আরও গুরুতর সমস্যা- রক্তচাপ কমে যাওয়া, হৃদ্স্পন্দন বেড়ে যাওয়া, জ্বর, মাথাব্যথা, এমনকি মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে
এছাড়া, ছোট কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় অঙ্কুরিত আলু খেলে জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
অঙ্কুরিত আলুর বিষাক্ততা কি দূর করা যায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, আলুর চোখ, অঙ্কুর, সবুজ অংশ ও আঘাতপ্রাপ্ত জায়গায় গ্লাইকোঅ্যালকালয়েড সবচেয়ে বেশি থাকে। এগুলো ফেলে দিলে ঝুঁকি কিছুটা কমে। এ ছাড়া খোসা ছড়িয়ে ফেলে ভাজার মাধ্যমে রান্না করলে কিছুটা বিষাক্ততা কমতে পারে। তবে সেদ্ধ, বেক বা মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে তেমন উপকার পাওয়া যায় না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই পদ্ধতিগুলো কতটা নিরাপদ বা পর্যাপ্ত, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যাপিটাল পয়জন সেন্টারের পরামর্শ, যে আলু অঙ্কুরিত বা সবুজ হয়ে গেছে, তা না খাওয়াই ভালো।
আলু অঙ্কুরিত হওয়া থেকে কীভাবে রক্ষা করবেন
১. আলু বেশি মজুত না রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী কিনুন
২. ভেজা বা ক্ষতিগ্রস্ত আলু ফেলে দিন
৩. শুকনো করে ঠান্ডা, শুকনো ও অন্ধকার স্থানে সংরক্ষণ করুন
অনেকে বলেন, আলুর সঙ্গে পেঁয়াজ রাখলে অঙ্কুর বের হয় দ্রুত। তবে, এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো নেই।
শেষ কথা
অঙ্কুরিত আলুতে গ্লাইকোঅ্যালকালয়েডের মাত্রা দ্রুত বাড়ে, যা শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। এতে হালকা পেটব্যথা থেকে শুরু করে হৃদ্-স্নায়ুতন্ত্রের মারাত্মক সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে। আর গর্ভবতী নারীদের জন্য ঝুঁকি তো আরও বেশি। তাই এদিক-সেদিকে কোনো কিছু না করে অঙ্কুরিত আলু খাওয়া থেকে বিরত থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ।
সূত্র : হেলথ লাইন
মন্তব্য করুন