

গলার ঠিক নিচে প্রজাপতির মতো দেখতে ছোট গ্রন্থিটিকে থাইরয়েড বলা হয়। শরীরের হার্ট রেট, রক্তচাপ, তাপমাত্রা থেকে শুরু করে মেটাবলিজম— সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে এই ক্ষুদ্র অঙ্গটি। কিন্তু এ গ্রন্থির কোষগুলো যখন অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করে, তখনই দেখা দেয় থাইরয়েড ক্যানসার।
সমস্যাটি হলো, এই ক্যানসারের লক্ষণগুলো এতটাই অস্পষ্ট আর সাধারণ অসুস্থতার মতো যে বহু মানুষ মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছরও টের পান না যে শরীরের ভেতরে একটি ‘নীরব শত্রু’ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের মাঝে লক্ষণ দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রেও বেশিভাগ সময় এগুলোকে অ্যাসিডিটি, ভাইরাল সংক্রমণ, থাইরয়েড ইনফ্লামেশন বা সাধারণ গলার সমস্যার সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা হয়। ফলে রোগ নির্ণয় পেছায়, আর চিকিৎসাও দেরিতে শুরু হয়।
থাইরয়েড ক্যানসার সার্জন ড. ন্যান্সি পেরিয়ের জানিয়েছেন, ঠিক এ কারণেই অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তাদের শরীরে থাইরয়েড ক্যানসার নিঃশব্দে বাড়ছে। তবে সময়মতো নজর দিলে রোগটি খুব সহজেই শনাক্ত ও চিকিৎসা করা যায়।
আজ দেখে নিন সেই ৫টি মূল লক্ষণ, যেগুলো দীর্ঘদিন থাকলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
১) গলার সামনে গাঁট বা ফোলাভাব
থাইরয়েড ক্যানসারের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণের একটি হলো গলার ঠিক সামনের দিকে একটি গাঁট বা অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দেওয়া। এটি ব্যথাহীন হতে পারে, ফলে অনেকে সর্দিজনিত লিম্ফ নোড ভেবে ভুল করেন। গাঁটটি শক্ত, স্থায়ী এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হলে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।
২) গলায় বা কানের দিকে ব্যথা
গলার সামনে ধরা ধরা ব্যথা, চাপ বা অস্বস্তি, যা কখনো কানের দিক পর্যন্ত টেনে যায়। এটিও থাইরয়েড ক্যানসারের একটি সূক্ষ্ম লক্ষণ। পেশিতে টান লাগার মতো অস্থায়ী ব্যথার সঙ্গে এটি মিলবে না, বরং থাকবে দীর্ঘসময় ধরে।
৩) স্বরভঙ্গ বা কণ্ঠস্বর বদলে যাওয়া
থাইরয়েড গ্রন্থি স্বরযন্ত্রের খুব কাছেই থাকে। ফলে কোনো টিউমার তৈরি হলে তা স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলতে পারে এবং কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। তাই সাধারণ ঠান্ডা বা চিৎকার ছাড়া টানা তিন সপ্তাহের বেশি স্বরভঙ্গ থাকলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি।
৪) গিলতে বা শ্বাস নিতে সমস্যা
খাবার গিলতে বারবার কষ্ট হওয়া, গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি বা শ্বাস নিতে হালকা সমস্যা— সবই হতে পারে থাইরয়েড টিউমারের কারণে। টিউমার বড় হলে খাদ্যনালি বা শ্বাসনালির ওপর চাপ ফেলে এ ধরনের অসুবিধা তৈরি করে। অনেকে এটিকে অ্যাসিডিটি বা গলার প্রদাহ ভেবে বাদ দেন, যা ঝুঁকি আরও বাড়ায়।
৫) স্থায়ী শুকনো কাশি
কোনো সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জি ছাড়াই টানা শুকনো কাশি থাকা থাইরয়েড ক্যানসারের আরেকটি লুকানো লক্ষণ। টিউমার শ্বাসনালির ওপর চাপ দিলে বা থাইরয়েডের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে এ কাশি সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থাইরয়েড ক্যানসারের লক্ষণগুলো যতই সূক্ষ্ম ও বিভ্রান্তিকর হোক, তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তাদের দাবি, সময়মতো পরীক্ষা করালে থাইরয়েড ক্যানসার খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, আর জীবনের ঝুঁকিও কমে যায় বহু গুণ।
সূত্র : দ্য ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস
মন্তব্য করুন