অনেকে সকাল, দুপুর ও রাত—তিন বেলাতেই নিয়মিত খাবার খাওয়ার পরও শরীর দুর্বল লাগে। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকা, কম খাওয়া বা অতিরিক্ত চাপসহ নানা কারণে শরীর দুর্বল লাগতে পারে। শরীরের দুর্বলতা কাটাতে শুধু পরিমাণে খাওয়াই যথেষ্ট নয়, দরকার সঠিক পুষ্টি। প্রতিদিনের খাবারে যদি প্রয়োজনীয় প্রোটিন, আমিষ, ভিটামিন ও সঠিক পুষ্টিগুণ না থাকে, তাহলে শরীর দুর্বল লাগতেই পারে। তাই শক্তি বাড়াতে খাবার হতে হবে শরীরের উপযোগী ও বিষমুক্ত। এসব খাবারই শরীরকে রাখে সুস্থ, সবল ও সক্রিয়।
শুধু মাছ-মাংসই নয়, এমন কিছু খাবার রয়েছে যা শরীরের শক্তি ও পুষ্টির ঘাটতি পূরণে বড় ভূমিকা রাখে। এসব খাবার নিয়মিত খেলে শরীর ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য।
চলুন জেনে নেওয়া যাক শক্তিশালী করে তোলে এমন সব খাবার সম্পর্কে
প্রসেসিং ফুড এড়িয়ে চলা
প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। যেমন-প্যাকেটজাত বা টিনজাত খাবার, বক্সে রাখা রেডি ফুড কিংবা পূর্বে রান্না করে ফ্রিজে রাখা মাংস ইত্যাদি। এছাড়াও চিজ বার্গার বা ফ্রাই খেতে ভালো লাগলেও এতে পুষ্টিগুণ খুবই কম থাকে। এসব খাবারে সাধারণত প্রিজারভেটিভ, কৃত্রিম উপাদান, অতিরিক্ত সোডিয়াম, ট্রান্স ফ্যাট ও অ্যাডিটিভ থাকে, যা শরীরের স্বাভাবিক গতি কমিয়ে দেয়। তাই শক্তিশালী ও সুস্থ শরীর চাইলে প্রক্রিয়াজাত খাবার কমিয়ে প্রাকৃতিক খাবারের দিকে ঝোঁকাই ভালো।
সতেজ মৌসুমি ফল ও সবজি
খাবারের তালিকায় সবসময় এমন খাবার রাখতে হবে, যেগুলো পুষ্টিতে ভরপুর। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত মৌসুমি তাজা ফল এবং সবজি। এসব ফল ও সবজি যেন সতেজ এবং কীটনাশকমুক্ত হয়, সেদিকেও নজর দেওয়া জরুরি। কারণ পুষ্টিকর, নিরাপদ ও প্রাকৃতিক খাবারই শরীরকে রাখে সুস্থ ও শক্তিশালী।
চর্বিহীন প্রোটিন
চর্বিযুক্ত লাল মাংস খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হয়। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। এর পরিবর্তে খাবারের তালিকায় রাখা যেতে পারে মুরগি, টার্কি কিংবা মাছের মতো চর্বি কমযুক্ত প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার। বিশেষ করে স্যামন ও টুনার মতো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত মাছ শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এসব মাছ হৃদ্যন্ত্র ও মস্তিষ্কের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শস্যদানা এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট
চিনি ও সাদা ময়দা শরীরে খুব সামান্য পুষ্টি দেয়। একারণে এগুলো যতটা সম্ভব পরিহার করাই ভালো। এর বদলে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে ফাইবারসমৃদ্ধ কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। যেমন—চাল, ডাল, ভুট্টা, সয়াবিন, বিনস এবং কড়াইশুঁটির মতো নানা ধরনের শস্য। এসব খাবার হজমে সহায়তা করে এবং দীর্ঘস্থায়ী শক্তি জোগায়, যা শরীরকে চাঙা রাখে।
বাদাম এবং বীজ
ক্লান্তি দূর করতে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাদাম ও বীজ অত্যন্ত কার্যকরী খাবার। এগুলো শুধু পুষ্টিকরই নয়, বরং শক্তি জোগাতেও দারুণ সহায়ক। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন কাজু, হ্যাজেলনাট, পেকান, আখরোট, সূর্যমুখী ও কুমড়ার বীজের মতো খাবার। এসব বাদাম ও বীজ কাঁচা ও লবণ ছাড়া খাওয়াই সবচেয়ে ভালো, কারণ এতে প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ অটুট থাকে এবং শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে।
পানি
শরীর সুস্থ রাখতে সবচেয়ে জরুরি উপাদানগুলোর একটি হলো পানি। যদিও পানি সরাসরি ক্যালোরি বা শক্তি দেয় না, তবে এটি শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া ঠিকভাবে চালাতে সহায়তা করে। নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি পান শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাই দিনে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন এবং সম্পূরক খাবার
যদি দৈনন্দিন খাবার থেকে শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি না মেলে, তাহলে ভিটামিন বা পুষ্টিসমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে। তবে এর আগে অবশ্যই একজন পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাদের পরামর্শে আপনি শরীরের উপযোগী পুষ্টিকর পরিপূরক ও খাদ্যতালিকা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবেন।
কলা
কলা একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল, যা শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে পটাসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন ও কার্বোহাইড্রেট—যা শরীরে দ্রুত প্রাকৃতিক শক্তি জোগায়। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় কলা রাখলে সহজেই শক্তি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়।
ওটস
ওটস শুধু সকালের নাশতার জন্য নয়, যেকোনো সময়ের জন্যই উপযোগী একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। এক বাটি ওটসে পাওয়া যায় ফাইবার ও কিছু পরিমাণ প্রোটিন, যা শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি জোগায়। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরাও রাখে এবং ক্লান্তি কমায়।
মন্তব্য করুন