পরিমিত পরিমাণে সূর্যের আলো আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর ভালো প্রভাব ফেলে। এটি হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কিছু ত্বকের রোগের উপসর্গ কমাতেও সহায়ক।
সূর্যের আলো কীভাবে শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে?
সূর্য ও অন্ধকার আমাদের মস্তিষ্কে হরমোন নিঃসরণের জন্য সংকেত দেয়। দিনের আলো মস্তিষ্কে সেরোটোনিন নামের একটি হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।
এই সেরোটোনিন হরমোন আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে, মনোযোগ বাড়ায় ও মানসিক প্রশান্তি দেয়। অন্যদিকে, রাতের অন্ধকারে মেলাটোনিন নামক হরমোন তৈরি হয়, যা ঘুমাতে সাহায্য করে।
যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো না পাওয়া যায়, তাহলে শরীরে সেরোটোনিন কমে যেতে পারে। এর ফলে মৌসুমি বিষণ্নতা (SAD) নামক এক ধরনের মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা সাধারণত শীতকালে হয়।
সূর্যালোক কিছু মানসিক সমস্যা উন্নত করতে পারে
কম সূর্যালোক পেলে সেরোটোনিনের মাত্রা কমে, যার ফলে বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ে। সূর্যালোক চোখের মাধ্যমে রেটিনায় পৌঁছায় এবং সেখান থেকে সেরোটোনিন নিঃসরণের সংকেত দেয়।
শীতকালে যেহেতু দিন ছোট হয়, তাই এই ধরনের বিষণ্নতা বেশি দেখা যায়। এই সমস্যার চিকিৎসায় লাইট থেরাপি বা ফোটোথেরাপি ব্যবহৃত হয়, যেখানে বিশেষ আলো ব্যবহার করে প্রাকৃতিক সূর্যের আলোর অনুকরণ করা হয়।
এছাড়াও, সূর্যালোক সাধারণ বিষণ্নতা, পিএমডিডি (PMDD) এবং কিছু উদ্বেগজনিত সমস্যা বা প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রেও উপকার দিতে পারে।
পাশাপাশি, সূর্যের আলো হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, সূর্যের আলট্রাভায়োলেট-বি (UVB) রশ্মি ত্বকে পড়লে ভিটামিন ডি তৈরি হয়।
২০০৮ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী:
- ফর্সা ত্বকের মানুষ : প্রায় ৫০,০০০ IU ভিটামিন ডি - পাতলা গায়ের রঙ : ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০ IU - গাঢ় ত্বক : ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ IU
ভিটামিন ডি হাড় মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। এর ঘাটতি হলে রিকেটস, অস্টিওপোরোসিস ও অস্টিওমালাসিয়া নামক হাড় ক্ষয় রোগ হতে পারে।
কিছু ত্বকের সমস্যায় সূর্যালোক উপকারী
চিকিৎসকরা কিছু নির্দিষ্ট ত্বকের সমস্যার ক্ষেত্রে UV আলো নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যেমন :
- সোরিয়াসিস
- একজিমা
- জন্ডিস
- অ্যাকনে
তবে আলো-ভিত্তিক চিকিৎসা সবার জন্য উপযুক্ত নয়, তাই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
সূর্যালোক কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে
যদিও অতিরিক্ত সূর্যের আলো ত্বকের ক্যানসার বাড়াতে পারে, তবে গবেষণায় দেখা গেছে, মাঝারি পরিমাণে সূর্যালোক কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। যেমন :
- কোলন ক্যানসার
- হজকিনস লিম্ফোমা
- ওভারি ক্যানসার
- প্যানক্রিয়াস ক্যানসার
- প্রোস্টেট ক্যানসার
সূর্যালোক আরও কিছু রোগে উপকারী হতে পারে
গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যালোক নিচের কিছু রোগেও উপকার করতে পারে (তবে আরও গবেষণা প্রয়োজন) :
- রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস (RA)
- সিস্টেমিক লুপাস ইরিথেমেটোসাস
- ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ
- থাইরয়েডের সমস্যা (থাইরয়ডাইটিস)
সূর্যভিত্তিক স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য কিছু সতর্কতা
যদিও সূর্যের আলো উপকারী, তবে অতিরিক্ত UV রশ্মি ত্বকে প্রবেশ করে কোষের DNA ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।
প্রতিদিন ৫ থেকে ১৫ মিনিট, সপ্তাহে ২-৩ দিন, হাত, মুখ ও বাহুর ত্বকে সরাসরি সূর্য লাগানো যথেষ্ট। মনে রাখবেন, সানস্ক্রিন বা কাপড়ের মাধ্যমে সূর্য লাগলে ভিটামিন ডি তৈরি হয় না।
যদি আপনি ১৫ মিনিটের বেশি সময় রোদে থাকেন, তাহলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন (কমপক্ষে SPF ১৫)। টুপি ও ফুলহাতা জামা পরাও সহায়ক।
ফর্সা ত্বকযুক্ত মানুষ সাধারণত দ্রুত রোদে পোড়ে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের তীব্রতা বেশি থাকে, তাই এই সময় সাবধানে থাকা ভালো।
সূর্যালোক মন ভালো রাখতে, হাড় শক্ত করতে ও ত্বকের কিছু রোগের উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। যেসব জায়গায় সূর্য কম ওঠে, সেসব এলাকায় লাইট বক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
তবে অতিরিক্ত রোদে থাকলে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তাই সঠিক সুরক্ষা নেওয়া জরুরি। ১৫ মিনিটের বেশি রোদে থাকলে SPF ৩০ বা তার বেশি সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
মন্তব্য করুন