

আপনি কারও সঙ্গে দারুণভাবে মিল পেয়েছেন। তিনি বুদ্ধিমান, দয়ালু, পরিশ্রমী, আর আপনাদের বোঝাপড়াও চমৎকার। কিন্তু একটু চিন্তার বিষয়, তিনি আপনার থেকে দশ বছরেরও বেশি বড় বা ছোট। আজকাল কি এটা আসলেই বড় কোনো ব্যাপার?
হলিউডে বড় বয়সের পার্থক্যের সম্পর্ক আগে থেকেই ছিল—যেমন ক্যারি গ্রান্ট ও ডায়ান ক্যানন (বিয়ে করার সময় গ্রান্টের বয়স ছিল ৬১, ক্যাননের ২৭) অথবা ডেমি মুর ও অ্যাশটন কুচার (মুর ছিলেন ৪০, কুচার ২৪)। তবে শুধু তারকাদের নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই ধরনের সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের এক Ipsos জরিপে দেখা যায়, প্রায় ৪০% আমেরিকান জীবনের কোনো না কোনো সময় এমন সম্পর্কে ছিলেন। আর ডেটিং সাইট ‘বাম্বল’-এর তথ্য বলছে, মানুষ আগের তুলনায় এখন বৃহত্তর বয়স সীমার সঙ্গী বিবেচনা করতে বেশি আগ্রহী।
তাই গবেষণা বলছে না যে এই সম্পর্ক বাড়ছে, বরং সমাজে এগুলোকে আরও গ্রহণযোগ্য দেখা হচ্ছে। উদাহরণ—এই বছরের Bridget Jones: Mad About the Boy, যেখানে নায়িকার প্রেমিক তার চেয়ে দুই দশক ছোট। তবে কি এসব সম্পর্ক সফল হয়? নাকি বয়সের ফারাক এগুলোকে ভেঙে দেয়?
যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে দম্পতিদের বয়সের পার্থক্য ২.২ বছর। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান আরও বড়।
সেন্সাস অনুযায়ী:
বিপরীত লিঙ্গ দম্পতিদের ৮.৫%-এর মধ্যে বয়সের পার্থক্য ১০ বছর বা তার বেশি।
এর মধ্যে মাত্র ১.৩% ক্ষেত্রে নারী বড়, যেমন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও নিক জোনাস।
সমলিঙ্গ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশি—পুরুষ-পুরুষ জুটির ২৫%, নারী-নারী জুটির ১৫%।
আর খুব বড় বয়সের ফারাক (২৮ বছর বা তার বেশি) মাত্র ১% হেটেরোসেক্সুয়াল দম্পতির মধ্যে দেখা যায়।
সেক্স থেরাপিস্ট ড. হলি উড বলেন, সমাজের পরিবর্তন, মিডিয়ায় দৃশ্যমানতা এবং অনলাইন ডেটিং বড় বয়সের ফারাকের সম্পর্ককে আরও স্বাভাবিক করে তুলেছে। পাশাপাশি, মানুষ দীর্ঘ জীবন ও বৈচিত্র্যময় জীবনধারা পায়, ফলে ভিন্ন বয়স হলেও মানসিকভাবে মিল পাওয়া সহজ হচ্ছে।
এমন সম্পর্কগুলো খুবই পরিপূর্ণ হতে পারে।
- অভিজ্ঞতার বৈচিত্র্য
- ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
- ব্যক্তিগত উন্নতি
- মানসিক সমর্থন
অনেকেই জানান, বয়সে বড় মানুষদের অভিজ্ঞতা ও স্থিরতা সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে।
যেমন:
৩১ বছরের কেলি ওয়ালেস ৪৭ বছরের এক পুরুষকে ডেট করেছেন কারণ তিনি একটি পরিপক্ব, প্রতিশ্রুতিশীল সম্পর্ক চাইছিলেন।
থেরাপিস্ট সারা স্লোন তার পিএইচডির সময় বয়সে বড় পুরুষদের সঙ্গে সম্পর্ককে সহায়ক মনে করেছিলেন—তারা তার ব্যস্ত সময়সূচিকে বুঝতেন।
কিছু বয়স বড়-ছোট সম্পর্ক শারীরিকভাবে দারুণ মানিয়ে যায়—যেমন ক্যারি লরেন্সের ২৩ বছরের ছোট সঙ্গীর সঙ্গে অভিজ্ঞতা।
এলজিবিটিকিউ+ কমিউনিটিতে এমন সম্পর্ক প্রায়ই গভীর অর্থবহ হয়, কারণ বয়স্ক সঙ্গীরা ইতিহাস ও সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ভাগ করেন, যা সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে।
বড় বয়সের পার্থক্য মানেই বিচার–সমালোচনা। অনেকেই সম্পর্ককে ভুলভাবে মূল্যায়ন করে।
অর্থনৈতিক, পেশাগত বা সামাজিক ক্ষমতার পার্থক্য কখনো কখনো অসুবিধা তৈরি করতে পারে।
একজন ক্যারিয়ার গড়ছেন, আরেকজন অবসরের কথা ভাবছেন—এতে সংঘাত হতে পারে।
সময় যত যায়, বড়জনের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা সঙ্গীকে বেশি চাপ দিতে পারে।
যেমন: সিনথিয়া গ্যালাঘারের ৩০ বছরের সম্পর্ক যেখানে তার ১২ বছর বড় সঙ্গীর বয়সজনিত সমস্যা বাড়ছে।
আলেকজান্দ্রা গ্রাব্বে বলেন, সম্পর্ক শুরুতে এসব চিন্তা মাথায় আসে না, বয়স তো তখন দূরের বিষয়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যৌন সক্ষমতা কমতে পারে, যা সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
গবেষণা দেখায়—যত বড় বয়সের ফারাক, তত দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের সন্তুষ্টি কমে। তবে মিল খুঁজে পাওয়া অসম্ভব নয়; অনেক জুটি শেয়ারড স্মৃতি বা সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতায় যুক্ত থাকে। যেমন—Darcy Bennett ও তার স্ত্রীর ৯০-এর দশকের স্মৃতি।
থেরাপিস্ট ড. হলি উডের পরামর্শ
- ইচ্ছাকৃত ও সচেতন হন, নিজেদের লক্ষ্য, মূল্যবোধ আলোচনা করুন।
- অপেক্ষা ও উদ্বেগ আগে থেকেই বলুন।
- প্রজন্মগত পার্থক্যকে শেখার সুযোগ হিসেবে নিন।
- পরিবার বা বন্ধুরা যদি বিচার করে, সীমারেখা তৈরি করুন।
- সম্পর্কে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখুন।
- স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন।
- সন্তান নেওয়া বা না নেওয়া এ বিষয়ে পরিষ্কার থাকুন।
- বয়স নয়, সম্পর্কে ফোকাস করুন।
বয়সের পার্থক্য যাই হোক, সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে যে জিনিসগুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
- সম্মান
- যোগাযোগ
- মূল্যবোধের মিল
- দুর্বলতা শেয়ার করার ক্ষমতা
- সমঝোতার ইচ্ছা
যতক্ষণ এগুলো থাকে, বয়স বা বয়সের পার্থক্য—কিছুই আসল বাধা নয়।
থেরাপিস্টদের মতে, সম্পর্ক সফল করার আসল শক্তি হলো দুজনের সৎ আলোচনা, পরিকল্পনা, এবং বাইরে থেকে আসা মতামত উপেক্ষা করে নিজেরা কীভাবে সম্পর্কটিকে এগিয়ে নেন।
মন্তব্য করুন