কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
আক্রান্ত ৫২ জেলা

চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি সংখ্যালঘু ঐক্য পরিষদের

সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বক্তারা। ছবি : কালবেলা।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বক্তারা। ছবি : কালবেলা।

দায়িত্ব গ্রহণের পরদিনই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

এতে সারা দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠন দুটি এ খোলা চিঠি তুলে ধরে।

‘সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এর মধ্যে ৫২টি জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চান তারা।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে কলুষিত করতে বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট থেকে সারা দেশের ৫২টি জেলায় সংগঠিত সাম্প্রদায়িক হামলায় কয়েক হাজার হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বক্তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানে যে নবযুগের সূচনা হয়েছে, তারই পতাকা বহনের কাণ্ডারি হিসেবে আপনাকে স্বাগত জানাই।

অভিনন্দন জানাই পরিবর্তনের সূচনাকারী সেই ছাত্র-জনতাকে, যারা জীবন বাজি রেখে পথে নেমেছেন, দুর্দমনীয় এক অভিযাত্রায় জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই জনতাকে, যারা এই স্বপ্নযাত্রার সাথী হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, দেশের ক্রান্তিলগ্ন উত্তরণে ছাত্র-জনতার অর্পিত দায়িত্ব মেধা-মনন এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জিত সাফল্য কাজে লাগিয়ে জাতির প্রত্যাশা পূরণে আপনি এগিয়ে যাবেন।

গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন, আমরা তাদের গভীরভাবে স্মরণ করি। নিহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাই, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। আমরা প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে যথোপযুক্ত সহায়তা প্রদানের জন্য নতুন সরকারের প্রতি দাবি জানাই।

দাবি জানাই আহত ও নির্যাতিতরা যাতে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার।

ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্বলিত করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়।

তারা আরও বলেন, জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও।

মূলত ৫ আগস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এ অবস্থার অবসান চাই।

এই পরিস্থিতিতে আমরা রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে আমাদের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্যে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

বক্তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সূচনালগ্নেই আপনার কাছে অত্যন্ত বিনীতভাবে আমাদের উদ্বেগ ও বেদনার জায়গাটি তুলে ধরছি এই প্রত্যাশায় যে, আপনি এবং আপনার সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন। যাতে ছাত্র-জনতার বিজয় কলুষিত না হয়। ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এ রক্তক্ষরণের অবসান ঘটে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধরের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য রঞ্জন কর্মকার, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও কাজল দেবনাথ প্রমুখ।

আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিএন চ্যাটার্জী, বিভাস চন্দ্র বিশ্বাস, অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য, গোপাল চন্দ্র দেবনাথ, কিশোর রঞ্জন মণ্ডল, রবীন্দ্রনাথ বসু, দিপংকর ঘোষ, বিনয় কুমার ঘোষ বিটু, কিশোর কুমার বসু রায় চৌধুরী, মতিলাল রায়, বলরাম বাহাদুর, সুবীর দত্ত, বীরেন অধিকারী, উৎপল বিশ্বাস, শচীন্দ্র বাড়ৈ, ভিক্টর রে, জন অরুনেশ রাড়ৈ, মহেশ লাল, ড. সন্তোষ কুমার দেব, হিল্লোল সরকার, পলাশ ভৌমিক ও ঝলক চক্রবর্তী প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে মারামারি-কাটাকাটি কিছুই থাকবে না : ফয়জুল করীম

কোরআন পাঠে শ্রেষ্ঠদের হাতে উমরাহসহ ১৫ লাখ টাকার পুরস্কার দিল আস-সুন্নাহ

দুবার গাজা ধ্বংস হতে দেখা বৃদ্ধ আয়িসের করুণ গল্প

ইউরোপ যেতে সাঁতরে সাগর পাড়ি দিলেন মা ও ১০ বছরের সন্তান

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে জয়

বিভাজনের রাজনীতি করে দেশকে ভালোবাসা যায় না : ছাত্রশিবির সেক্রেটারি

যে কোনো ষড়যন্ত্র জনগণের ঐক্যের সামনে ভেসে যাবে : ডা. জাহিদ

দেশে একাধিক অগ্নিকাণ্ড, সচিবালয়ে জরুরি বৈঠক

হাসপাতালে ভর্তি পরিণীতি চোপড়া!

পুরোপুরি নিভে গেল বিমানবন্দরের আগুন : ফায়ার সার্ভিস

১০

শাপলা ইস্যুতে এনসিপির ৫ দাবি ও ২ যুক্তি

১১

যে সময়ে দোয়া করলে আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না, জানালেন বিশেষজ্ঞ আলেম

১২

আত্মসমর্পণের পর চকবাজার থানা যুবদল নেতা সজিব কারাগারে

১৩

‘কর্তৃত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে জনগণকে আপন করে নিতে হবে’

১৪

স্কুলের মিটিংয়ে পোশাক খুলে প্রতিবাদ

১৫

সড়ক দুর্ঘটনায় আলোচিত টিকটকারের মৃত্যু

১৬

টানা ৪০ দিন নামাজ পড়ে পুরস্কার পেলেন ৬০ কিশোর

১৭

চট্টগ্রাম বন্দরে যানবাহনে বাড়তি মাশুল স্থগিত

১৮

জামায়াতের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক স্ট্যাটাস নাহিদের

১৯

পবিপ্রবি পরিদর্শনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান

২০
X