কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা

সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে পূজা উদযাপন পরিষদ। ছবি : কালবেলা
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে পূজা উদযাপন পরিষদ। ছবি : কালবেলা

যে কোনো সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর।

তিনি বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসবে আমরা সরকার, রাজনৈতিক দল ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে এক হয়ে কাজ করে হঠাৎ উদ্ভূত অনভিপ্রেত পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর নজির স্থাপন করেছি। আমরা চাই, বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে এটা অব্যাহত থাকুক।’

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে এই সভা হয়।

লিখিত বক্তব্যে বাসুদেব ধর বলেন, ‘শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীন উৎসব। সারাদেশে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রমাণ করেছে, ধর্মীয় দিকটি সম্প্রদায়ের হলেও উৎসব সার্বজনীন। এই সার্বজনীন ভাবটি আমরা বহন করে এগিয়ে যেতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘দুর্গোৎসব শুরু হওয়ার আগে অন্তত ১৪টি জেলায় প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে কয়েকটি স্থানে দুর্বৃত্তরা ধরা পড়ে। পূজার পাঁচদিন দেশের কোথাও বড় মাত্রায় অঘটনের কোনো খবর আমরা পাইনি। পূজার পরেও অদ্যাবধি সে রকম কোনো খবর আসেনি।’

সরকারের কঠোর অবস্থান, বিশেষ করে সেনাবাহিনী ও একটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সক্রিয় ও সতর্ক ভূমিকা এই ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে উল্লেখ করে বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা, ৩৬৫ দিনই এই অবস্থান অব্যাহত থাকুক। তবে আমরা চাই, সমাজ পরিশুদ্ধ ও কলুষমুক্ত হোক। ধর্মের সত্য ও সুন্দরের মর্মবাণী পরিব্যাপ্ত হোক সবার মাঝে, মূল বাণীর চর্চা হোক। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এবং সুশীল সমাজকেই এই কাজটি করতে হবে। তাহলেই নিরাপত্তা বাহিনীর প্রহরায় পূজা করতে হবে না, যে স্বপ্নের কথা প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাশাপাশি এ কথাও বলতে চাই যে, গত ৫৪ বছর ধরে আমরা দেখে এসেছি, অস্বীকারের রাজনীতি। কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলে কিংবা হামলা হলে অস্বীকার করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ও রাজনৈতিক ঘটনা বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কেঁদেছে। দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। বাস্তবতা এড়িয়ে সমস্যা-সংকটের অবসান হবে না। পরিসংখ্যান অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এই ৫৪ বছরে হিন্দু সংখ্যালঘু জনসংখ্যা প্রায় ১৮ শতাংশ থেকে ৮-এ নেমে এসেছে।’

পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি বলেন, ‘এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব অত্যন্ত সুন্দরভাবে উদযাপিত হলেও কোনো কোনো প্রতিমায় অবয়বে অশুভ শক্তির প্রকাশে শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি বা অসচেতনতাকে কেন্দ্র করে সরকারের পদক্ষেপে কোনো কোনো জেলায় উদ্বেগ ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে দুর্গাপূজা সম্পন্ন হবার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গত ৫ অক্টোবর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অজুহাতে শিল্পী, পূজারি ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করার পর কিছু কিছু পদক্ষেপের কথা জানা যাচ্ছে। থানায় জিডি করা ও সরকারি তদন্তের কথা বলা হচ্ছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই সনাতন ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে পূজার আয়োজক ও প্রতিমা শিল্পীদের মাঝে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে- যা পরবর্তী সময়ে যে কোনো পূজা-পার্বণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’

বিষয়টি নজরে আসামাত্র পূজা উদযাপন পরিষদ পদক্ষেপ নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পূজা শুরু হওয়ার আগে বিশেষ করে মহা ষষ্ঠির দিন এই বিষয়টি নজরে এলে এবং সরকারের তরফে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সম্ভাব্য অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি এড়াতে আমরা ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। সরকার, সেনাবাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি একযোগে দাঁড়িয়ে এক রাতের মধ্যেই সমস্যাটির সমাধান করি। এক সঙ্গে কাজ করে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সংকট উত্তরণের এক নজির স্থাপিত হয়, পূজার উৎসবে ভাটা পড়েনি। অথচ পূজা শেষ হওয়ার অব্যবহিত পর বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যা সাম্প্রদায়িক শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে। এতে করে একসঙ্গে কাজ করার যে নজিরবিহীন ধারাটি তৈরি হয়েছে, তাও গতি হারাতে পারে।’

বাসুদেব ধর বলেন, ‘প্রতিমায় যে অবয়ব প্রকাশের কথা বলা হচ্ছে, তা নতুন বা হঠাৎ করে এ বছরই হয়েছে- এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। অতীতে অনেক প্রতিমায় তা শিল্পী বা আয়োজকরা নানাভাবে প্রকাশ করেছেন। এবার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না।’

সংবাদ সম্মেলনে পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সহ-সভাপতি গোপাল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ বিশ্বাস সাধন, পূজা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী, বিপ্লব দে প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ ও প্রফেশনাল কোর্সের সব পরীক্ষা স্থগিত

ইতিহাস গড়ে ফুটবল বিশ্বকাপের টিকিট পেল কেপ ভার্দে

পলিথিনে মোড়ানো শপিং ব্যাগে মিলল নবজাতকের মরদেহ

রোমে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

কলাবাগানে ডিপ ফ্রিজ থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার

অবশেষে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে গাজা শান্তিচুক্তি সই

জয়পুরহাট জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কের পদত্যাগ

শরীয়তপুরে নির্যাতিত শিশুর পাশে তারেক রহমান

‘ড. তোফায়েলের শূন্যতা বহু দশক অনুভূত হবে’

আওয়ামী লীগ নেত্রী কেকার মরদেহ উদ্ধার

১০

স্থানীয় সমস্যা সমাধানের আশ্বাস আনোয়ারুজ্জামানের

১১

পূজা পরিষদ ও মহানগর কমিটির প্রত্যাশা / সংকট সমাধানে এক হয়ে কাজ করার নজির অব্যাহত থাকুক

১২

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে : পিএনপি

১৩

শেষ ওভারের নাটকীয়তায় প্রোটিয়াদের কাছে বাংলাদেশের হার

১৪

নিষিদ্ধ হওয়া ভিডিও নির্মাতাদের সুখবর দিল ইউটিউব

১৫

জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে জামায়াতের অংশগ্রহণ

১৬

‘ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াও আমাদের দিনে দাঁড়াতে পারবে না’ 

১৭

রিপন মিয়াকে প্রাণনাশের হুমকি

১৮

ঢাবি সাদা দলের বিবৃতি / এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ওপর আক্রমণ অপ্রত্যাশিত

১৯

৪৮ জেলার ৪৩৫ স্পটে হত্যাকাণ্ড ঘটায় পুলিশ-যুবলীগ : তাজুল ইসলাম

২০
X